দক্ষিণ এশিয়ায় জিহাদীদের উত্থানের জন্য আমেরিকাকে দায়ি করে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খাজা আসিফ বলেছেন সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমেরিকার প্রক্সি দেওয়ায় আজ পাকিস্তানের গোলযোগপূর্ণ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার ওয়াশিংটনে এশিয়া সোসাইটি ফোরাম আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন। পাকিস্তানকে নিজের কৌশলগত উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ব্যবহার করে পরে দেশটিকে ছুঁড়ে ফেলার জন্যও আমেরিকাকে দায়ী করেন তিনি।
দক্ষিণ এশিয়ায় কট্টরপন্থী ও সন্ত্রাসবাদের উত্থানের পুরোপুরি দায় নিতে অস্বীকার করে পাকিস্তানের মন্ত্রী বলেন, সোভিয়েত বিরোধী যুদ্ধে পাকিস্তান দৃঢ়ভাবে আমেরিকার পাশে দাঁড়িয়েছিল। সেই ছিল ইসলামাবাদের একটি ভুল সিদ্ধান্ত। আমরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তা ছিল একটি সম্মিলিত ‘পাপ’।
হাক্কানি নেটওয়ার্ক ও অন্যান্য জঙ্গিগোষ্ঠীগুলোর জন্য পাকিস্তানের দায়ের ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ বলেন, এই এক দশক আগেও এইসব ‘সন্ত্রাসী’দের প্রেয়সি মনে করতো হোয়াইট হাউজ। তিনি বলেন, হাক্কানি ও হাফিজ সাঈদের জন্য আমাদেরকে দায়ী করবেন না। এই সব লোক ২০ থেকে ৩০ বছর আগেও আপনাদের প্রেয়সি ছিল। তাদেরকে হোয়াইট হাউজে নিয়ে খাওয়ানো, পরানো হয়েছে। এদেকে লালন করার দায় পাকিস্তানের ঘাড়ে চাপিয়ে এখন নিন্দা করা হচ্ছে।
ইসলামাবাদের বর্তমান অবস্থান তুলে ধরে পাকিস্তানের মন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানে হাক্কানি নেটওয়ার্ক, হাফিস সাঈদ, ও লস্কর-ই-তাইবা কাজ করছে বলে দেয়া খুবই সহজ। কিন্তু এর দায়ভার তাদের। এরা যে বোঝা তা আমরা স্বীকার করি। কিন্তু এই বোঝা থেকে মুক্ত হতে আমাদেরকে সময় দিতে হবে। কারণ এই বোঝা নামানোর মতো সম্পদ আমাদের নেই। আর আমেরিকা আমাদের বোঝা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।
হাফিজ সাঈদকে নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ বলেন যে, তিনি এরই মধ্যে আটক অবস্থায় রয়েছেন। তিনি একটি নাম হলেও একটি নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতা। এ ক্ষেত্রে আমাদেরকে আরো কিছু করতে হবে, সে কথা আমি স্বীকার করি। পাকিস্তানে এমন অনেকে আছেন যারা পাকিস্তান ও এই অঞ্চলের সংকটকালে বোঝায় পরিণত হয়। হাফিস সাঈদকে গৃহবন্দী করা হয়েছে। তার নাম প্রস্থান নিয়ন্ত্রণ তালিকায় রয়েছে।
ইসলামাবাদ ও ওয়াশিংটনের সম্পর্কে টানাপড়েনের মধ্যে খাজা আসিফ এসব মন্তব্য করলেন। গত মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দক্ষিণ এশিয়া নীতি ঘোষণাকালে পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করেন জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোকে নিরাপদ আশ্রয় দেয়ার জন্য। আসিফ বলেন, আফগানিস্তান থেকে সন্ত্রাসী অনুপ্রবেশ বন্ধে সীমান্তে কার্যকর ব্যবস্থাপনা গ্রহণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করতে পাকিস্তান প্রস্তুত।
ফোরামে বক্তব্যকালে তিনি আরো বলেন যে, আফগান সংঘাতের কোনো সামরিক সমাধান নেই। “আফগানিস্তানে সব ব্যর্থতার জন্য পাকিস্তানকে বলির পাঠা বানানো অন্যায্য ও ভুল। এতে ঐসব শক্তিকে সাহায্য করা হবে যাদের বিরুদ্ধে আমরা সম্মিলিতভাবে লড়ছি।
আসিফ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক, কাশ্মির বিরোধ, সন্ত্রাস দমন তৎপরতা ও পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, যেকোন দেশের আফগানিস্তানকে শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে যেতে পারার মধ্যে পাকিস্তানের বড় স্বার্থ রয়েছে। সীমান্তের ওপারের সংঘাতে পাকিস্তান চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
আফগানিস্তানে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় আমেরিকাকে পাকিস্তান আন্তরিকভাবে সহায়তা করতে চায়। কিন্তু, ইসলামাবাদের সীমাবদ্ধতার বিষয়টিও তিনি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, শক্তিশালী অনেকগুলো দেশ সম্মিলিত চেষ্টা চালিয়ে যা পারেনি, সেখানে আফগানিস্তানের শান্তি ও নিরাপত্তার দায়িত্ব আমরা নিতে পারি না।
ভারতের সঙ্গে তিক্ত সম্পর্কের ব্যাপারে তিনি বলেন, ভারত ও পাকিস্তানকে আলোচনার টেবিলে আনতে নতুন উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি কাশ্মিরসহ সকল ইস্যু আলোচনার ওপর জোর দেন। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি না ঘটলে কাশ্মির অঞ্চলে শান্তি অর্জন অসম্ভব হবে।
তিনি বলেন, আলোচনার মাধ্যমে সকল বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য পাকিস্তান বার বার ভারতের কাছে প্রস্তাব নিয়ে গেছে। কিন্তু, ভারত তাতে সাড়া দেয়নি। নিয়ন্ত্রণ রেখায় বিনা উস্কানিতে হামলা রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি করছে। কাশ্মিরে সাধারণ জনগণের ওপর অতিমাত্রায় বল প্রয়োগ, সংখ্যালঘুদের নাজেহাল বন্ধ না করে শান্তি আনা যাবে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৫ ঘণ্টা, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/কেএসপি