মানবাধিকার কর্মীদের ওপর নির্যাতনের প্রশ্নে নজিরবিহীন সমালোচনার মুখে পড়েছে মধ্য প্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব। জেনেভাতে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের এক বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ২৮টি দেশের সবগুলো সহ মোট ৩৬টি দেশ এক যৌথ বিবৃতিতে সৌদির কড়া নিন্দা করেছে।
অধিকাংশ পশ্চিমা দেশ এতদিন পর্যন্ত সৌদিদের প্রকাশ্য সমালোচনা থেকে নিজেদের বিরত রেখেছে। ইউরোপীয়দের যুক্তি ছিল, মধ্যপ্রাচ্য একটি জটিল বিপজ্জনক অঞ্চল এবং তার মোকাবেলায় সৌদি আরবকে চটানো ঠিক হবে না। তবে ইউরোপের সেই মনোভাব বদলে গেছে।
নজিরবিহীন এই নিন্দা প্রস্তাব এমন সময় করা হলো যখন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বেশ কিছুদিন ধরে তার দেশে সামাজিক উদারীকরণের প্রতিশ্রুতি প্রচার করে চলেছেন। এমনকি নারীদের গাড়ি চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞাও তুলে নিয়েছেন।
কিন্তু তারপরও এ ধরনের বিবৃতি থেকে বোঝা যায়, সৌদি আরবে মানবাধিকার কর্মীদের আটক করে নির্যাতন এবং সাংবাদিক জামাল খাসোগজির নির্মম হত্যাকাণ্ড নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল কতটা উদ্বিগ্ন।
যৌথ বিবৃতি প্রকাশের সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষে আইসল্যান্ডের প্রতিনিধি আটক সৌদি মানবাধিকার কর্মীদের নাম ধরে ধরে তাদের মুক্তির দাবি করেন। বিবৃতিতে দাবি করা হয়, সাংবাদিক জামাল খাসোগজির হত্যাকাণ্ড তদন্তে সৌদি সরকার যেন পূর্ণ সহযোগিতা করে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো অভিযোগ করেছে, নারীদের গাড়ি চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও এর জন্য যে নারীরা আন্দোলন করেছিলেন তাদের অনেককেই আটক করে নির্যাতন করা হচ্ছে। কারাগারে তাদের ইলেকট্রিক শক, চাবুক পেটা করা ছাড়াও তাদের অনেকের ওপর যৌন নির্যাতন চালানোর অভিযোগও উঠেছে।
বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সম্পর্কিত জাতিসংঘের বিশেষ র্যাপোর্টিয়ার অ্যাগনেস ক্যালামার্ডকে উদ্ধৃত করে রয়টর্স বার্তা সংস্থা বলছে, ‘এ ধরণের বিবৃতি জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার পথে গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ। মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে যে দেশটি এতদিন পর্যন্ত সমালোচনা এড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে, তাকে জবাবদিহিতার মুখোমুখি করা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব।’
বুধবার জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের প্রধান মিশেল ব্যাচেলেট আটক নারী মানবাধিকার কর্মীদের মুক্তি দেয়ার জন্য সৌদি আরবের প্রতি আহ্বান জানান। কিন্তু রয়টর্স বলছে, সৌদি সরকারের ক্ষমতাধর একজন কৌঁসুলি সরকারি মালিকানাধীন একটি দৈনিক পত্রিকাকে বলেছেন, কারাগারে নারী অধিকার কর্মীদের অভিযোগ ডাহা মিথ্যা।
আমেরিকা সৌদি বিরোধী এই বিবৃতিতে সই করেনি। এছাড়া সৌদি সরকারের পক্ষ থেকেও এ নিয়ে এখনও কিছু শোনা যায়নি।