পাকিস্তান কারাগারে বন্দী সর্বজিৎ সিং মারা যান ২০১৩ সালের ২ মে। ওই বছরের ২৬ মে পাকিস্তানের লাখপত জেলে অন্য কয়েদিদের আক্রমণের শিকার হন ফাঁসির আসামি ভারতীয় নাগরিক সর্বজিৎ। ইঁট দিয়ে তার মাথায় আঘাত করেছিলেন দুই কয়েদি। পরে জিন্না হাসপাতালে অনেক দিন কোমায় ছিলেন তিনি। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২ মে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। পরে অবশ্য তার লাশ ভারতে পাঠানো হয়েছিল।
পাকিস্তানের কাছে ৬০ ঘণ্টা বন্দী থাকার পর গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে দেশে ফেরেন ভারতীয় পাইলট অভিনন্দন বর্তমান। অভিনন্দন ফিরে আসার পর ভারতীয় গণমাধ্যম আনন্দবাজারের কাছে নিজের মনের কষ্টের কথা বর্ণনা করেছেন সেই সর্বজিতের বোন দলবীর কৌর।
দলবীর কৌর বলেন, ‘অভিনন্দন বর্তমানকে মুক্তি দিয়ে আমাদের ধন্য করছে না পাকিস্তান। ইমরান খানকে কৃতজ্ঞতা জানানোর মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি। জেনেভা সনদ অনুযায়ী কোনো বন্দীকে এভাবে আটকে রাখা যায় না। পাকিস্তানের উপরে যেভাবে আন্তর্জাতিক চাপ বেড়েছে, তাতে আমাদের বীর সেনা অভিনন্দনকে মুক্তি দিতেই হতো। আমার মন তো চাইছে, অভিনন্দনের সঙ্গে দেখা করে আসি। আমার ভাই ফিরে এসেছে ভেবে ওকেই বুকে জড়িয়ে ধরি। কিন্তু আমার অত দূর পৌঁছানোর মতো ক্ষমতা বা পরিচিতি নেই। তাই দূর থেকেই চোখের জল ফেলছি।’
অভিনন্দন আটকের খবরে নিজের ভাইয়ের কথা মনে পড়ছিল উল্লেখ করে সর্বজিতের বোন বলেন, ‘যেদিন পাকিস্তানের সেনাদের হাতে অভিনন্দনের ধরা পড়ার খবর দেখলাম, অস্থিরতার মধ্যে কেটেছে। আমি, আমার ভাইয়ের মেয়ে-বৌ সারা দিন মুখে কিছু তুলতে পারিনি। ভিডিওতে দেখছিলাম, কীভাবে স্থানীয় লোকের হাতে অভিনন্দনকে নিগৃহীত হতে হচ্ছিল। সেই সময়ে নিজের ছোট ভাইটার মুখই মনে পড়ে যাচ্ছিল। অথচ, আমার ভাইয়ের দোষ ছিল না। ওরা সর্বজিতের বিরুদ্ধে প্রমাণ দিতে পারেনি। জানি, অভিনন্দন আর সর্বজিতের ঘটনা এক নয়।’
দলবীর কৌর বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশের হাতে আটক থাকা দুটি মানুষের রক্তপাতের যন্ত্রণাটা তো একই! ওরা অভিনন্দনকে মারছিল, স্তব্ধ হয়ে দেখছিলাম। নাক-মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছে। এই রক্ত তো আমার ভাইয়ের মুখেও দেখতে চাইনি। সর্বজিতের দুই মেয়ে পুনম আর স্বপনদীপ বারবার আমায় ফোন করছিল। বলছিল, ‘‘দেখ বুয়াজি, ইয়ে ক্যয়া হো রহা হ্যায়!’’ সর্বজিতের স্ত্রী-ও কান্নাকাটি করছিল। মনে পড়ছিল, পাকিস্তান থেকে ফোন এল, ওর মৃত্যুদণ্ড স্থগিত হয়ে গিয়েছে। ও ফিরছে। গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে আলো দিয়ে সাজানো হলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মেরেই ফেলা হলো ওকে।’
সবশেষে সর্বজিতের বোন বলেন, ‘স্পষ্ট বলছি, আমি যুদ্ধ চাই না। শুধু নাশকতা ধ্বংস হোক, সর্বান্তকরণে এ প্রার্থনা করি।’
সঙ্গত, গত মঙ্গলবার ভারতীয় বিমান বাহিনী পাকিস্তানের আকাশসীমায় প্রবেশ করে বিমান থেকে বোমাবর্ষণ করে। পরদিন বুধবার সকালে দুটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত ও এক পাইলটকে আটক করে পাকিস্তান। পাল্টাপাল্টি হামলায় দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে গতকাল বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘উত্তেজনা নিরসনে ভূমিকা রাখলে আমরা ভারতীয় পাইলটকে হস্তান্তর করতে প্রস্তুত।’ এরপর পাকিস্তান ঘোষণা দেয় যে শান্তির নিদর্শন হিসেবে তাকে মুক্তি দেওয়া হবে।