ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তি পাসের মধ্য দিয়ে ব্রেক্সিট বিতর্কের অবসান ঘটবে আজ মঙ্গলবার। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এ নিয়ে আজ ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। খবর আল-জাজিরা ও বিবিসির।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরিজা মে গতকাল সোমবার সতর্ক করে বলেছেন, জাতির স্বার্থে ব্রেক্সিটের পক্ষে ভোট দেওয়া উচিত ব্রিটিশ এমপিদের। চুক্তিটি যদি তারা (এমপিরা) প্রত্যাখ্যান করেন, তাহলে চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদের ঝুঁকি তৈরি হবে। ওই পরিস্থিতিতে ইইউর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়তো না-ও হতে পারে।
যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট চুক্তি অনুমোদনের প্রশ্নে ভোটাভুটি হবে। গত ১১ ডিসেম্বর এই ভোট হওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু চুক্তিটি প্রত্যাখ্যাত হওয়ার আশঙ্কায় প্রধানমন্ত্রী মে শেষ মুহূর্তে তা স্থগিত করেন। দীর্ঘ প্রায় এক মাস পর মঙ্গলবার সেই ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ক্ষমতাসীন দল কনজারভেটিভ পার্টির নেতারা এখন পর্যন্ত ব্রেক্সিট নিয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বিরোধী দলগুলো ও নিজের দলের এমপিদের বিরোধিতা দমন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। বিরোধী দলগুলো এই চুক্তির বিরোধী। আর সরকারি দলের প্রায় ১০০ এমপি চুক্তির বিপক্ষে অবস্থান অব্যাহত রেখেছেন বলে ধারণা।
এসব বিরোধী এমপি সংসদে বিভিন্ন প্রস্তাব উত্থাপন এবং পাসের মাধ্যমে ইতিমধ্যে ব্রেক্সিট কার্যকরে সরকারের ক্ষমতাকে বেশ সীমিত করেছেন।
ব্রেক্সিটের পক্ষে কঠোর অবস্থানে থাকা এমপিরা ইইউ থেকে পুরোপুরি বা সব ধরনের ঝামেলা চুকিয়ে বের হয়ে আসতে চাইছেন। কিন্তু অন্যদিকে একদল এমপি আরেকটি গণভোট চাইছেন এবং ইইউর সঙ্গে আংশিকভাবে বের হয়ে আর্থিক এবং নীতিগত প্রধান বিষয়গুলো, যেমন অবিভক্ত শুল্ক ইউনিয়ন এবং একক বাজার বজায় রাখতে চাইছেন।
ব্রিটেনের উত্তরাঞ্চলের শহর স্ট্রোন-অন-ট্রেন্টে একটি কারখানা পরিদর্শনে গিয়ে গতকাল টেরিজা মে বলেছেন, ব্রেক্সিট নিয়ে তিনি ‘বিতর্কের অবসান’ চান।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চুক্তি প্রত্যাখ্যান করার অর্থ হবে ব্রেক্সিটের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া। গণভোটের ফলাফল যদি বাস্তবায়ন করা না হয়, তা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রতি চরম অবজ্ঞার নজির তৈরি করবে এবং রাজনীতির প্রতি মানুষের আস্থায় চিড় ধরাবে।’
টেরিজার সংখ্যালঘু সরকার ব্রেক্সিট চুক্তি পাস করানোর জন্য পর্যাপ্ত ভোট সংগ্রহ করতে সংগ্রাম করতে হচ্ছে। তার দলের অভ্যন্তরে ব্রেক্সিট বিরোধিতার অন্যতম কারণ হচ্ছে উত্তর আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে স্বাধীন দেশ আয়ারল্যান্ডের সীমান্তের পরিণতি নিয়ে।
আয়ারল্যান্ড দ্বীপের ক্ষেত্রে সাময়িকভাবে ‘পিছু’ অবস্থান নিয়েছে টেরিজার চুক্তি। উত্তর আয়ারল্যান্ডের জনগণ কোনো ধরনের সীমান্ত প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই দক্ষিণ আয়ারল্যান্ডে যেতে পারবেন এবং দুই অঞ্চলের মানুষ পণ্য ও সেবা গ্রহণ করতে পারবেন।
টেরিজা আরও কনজারভেটিভ এমপিকে এই চুক্তির পক্ষে আনতে পারবেন এমন নিশ্চয়তা দিলেও মঙ্গলবারের ভোটে তার হারার সম্ভাবনাই বেশি। এই ভোটের মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে দুই বছর ধরে আলোচনা ও ব্রিটেনে রাজনৈতিক বিতর্কের অবসান ঘটবে।
বিরোধী দলের নেতা জেরেমি করবিন বলেন, তার দল চুক্তির বিপক্ষে অবস্থান নেবে। সরকার সংসদে চুক্তি পাসে ব্যর্থ হলে তার দল সরকারের বিরুদ্ধে খুব দ্রুত অনাস্থা প্রস্তাব উপস্থাপন করবে। করবিন বলছেন, বেক্সিট চুক্তি নিয়ে অচলাবস্থা নিরসনে মধ্যবর্তী নির্বাচনের আয়োজন করা উচিত। ওই নির্বাচনে বিজয়ী দল ব্রেক্সিট কার্যকরে নতুন করে সমঝোতা শুরুর অধিকার পাবে।
করবিন বলেছেন, ‘আমার নিজের দৃষ্টিভঙ্গি হলো, আমি বরং দেনদরবার করা একটি চুক্তিই চাইব এখন যদি আমরা ২৯ মার্চ ইইউ থেকে কোনো চুক্তি ছাড়াই বের হয়ে যাওয়ার বিপদ ঠেকাতে পারি; যা শিল্প-বাণিজ্যের জন্য বিপর্যয়কর হয়ে দীর্ঘ সময়ব্যাপী বিশাল প্রভাব ফেলতে পারে।’
তিনি স্বীকার করেন, লেবাররা ব্রেক্সিট ডেডলাইনের আগে সরকারে গেলে ইইউ নেতাদের সঙ্গে নতুন একটি চুক্তির জন্য দরাদরি করার সময় পেতে তাদের আর্টিকেল ৫০-এর মেয়াদ বাড়াতে হতে পারে।
করবিন বলেন, ‘যদি টেরিজা মের ব্রেক্সিট চুক্তি ভোটে হেরে যায় আর একটি সাধারণ নির্বাচন হয় এবং লেবার সরকার ক্ষমতায় আসে, ফেব্রুয়ারি/মার্চ সময়ের মধ্যে একটি নির্বাচন হতে পারে পরিষ্কারভাবে তখন বের হওয়ার তারিখ ও এর মধ্যে মাত্র কয়েক সপ্তাহের ব্যবধান থাকবে। তাই ওই দেনদরবারের জন্য সময় রাখতে হবে।’
সংসদে ব্রেক্সিট চুক্তি প্রত্যাখ্যাত হলে প্রধানমন্ত্রী মে তিন দিনের মধ্যে বিকল্প প্রস্তাব উত্থাপনের সুযোগ পাবেন। সেই প্রস্তাবও যদি প্রত্যাখ্যাত হয়, তবে চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদের পথে হাঁটতে হবে যুক্তরাজ্যকে। অথবা সংসদ চাইলে ব্রেক্সিট কার্যকরের সময়সীমা বাড়িয়ে নিতে পারে। মধ্যবর্তী নির্বাচন বা পুনরায় গণভোটের বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিতে পারে সংসদ।
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/পিএস