আমাদের কাছে আজকের আফগানিস্তান মানেই যুদ্ধবিধ্বস্ত আর অসহিষ্ণু একটি দেশ। কিন্তু একটা সময়ে এমন ছিল দেশটি। স্থিতিশীলতা ও সহিষ্ণুতা ছিল সেখানে। মূলত ত্রিশ থেকে সত্তরের দশকের মধ্যে বিশ্বের বৃহৎ শক্তিগুলোর থাবায় পড়ে ‘মধ্য এশিয়ার প্যারিস’ খ্যাত আফগানিস্তান। দেশটিতে এক সময় শহরাঞ্চলের কোনো কোনো মেয়ে মিনিস্কার্টও পরতো।
মিনিস্কার্ট পরা সেসব মেয়ের ছবি কিছুদিন আগে দেখানো হয়েছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। এরপরই চলতি সপ্তাহে আফগানিস্তান যুদ্ধে নতুন করে সেনা পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ধারণা করা হচ্ছে, দেশটিতে আরো ৪ হাজার সেনা পাঠাবে ট্রাম্প প্রশাসন। বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, মিনিস্কার্ট পরা ওইসব মেয়ের ছবি দেখিয়েই ট্রাম্পকে এই সিদ্ধান্ত নিতে রাজি করিয়েছে তার উপদেষ্টারা।
তাকে বুঝানো হয়েছে, আফগানিস্তান এক সময়ে খুবই উদারপন্থি একটি রাষ্ট্র ছিল। সেখানকার মেয়েরা মিনিস্কার্ট পরতো। দেশটি থেকে মার্কিন বাহিনী প্রত্যাহার করা হলে আবার রক্ষণশীলতার দিকে ফিরে যাবে সেখানকার মানুষ। আফগানিস্তানে নতুন করে সেনা পাঠানোর ঘোষণা দিলেও অনেক বছর ধরেই ট্রাম্প বলে আসছেন, তার বিশ্বাস, ওই যুদ্ধটি একটি হেরে যাওয়া যুদ্ধ। ২০০৯ সালে দেশটিতে সেনা পাঠিয়ে ভুল করেছেন বারাক ওবামা।
মার্কিন গণমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আফগান মেয়েদের একটি মিনিস্কার্ট পরা ছবি দেখিয়ে সেখানে অতিরিক্ত সেনা পাঠাতে তাকে রাজি করিয়েছেন তার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও সাবেক জেনারেল এইচ আর ম্যাকমাস্টার।
গণমাধ্যমটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘১৯৭২ সালে কাবুলের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়া মিনিস্কার্ট পরা কিছু মেয়ের সাদাকালো একটি ছবি দেখানো হয় ট্রাম্পকে। তাকে বুঝানো হয়, এক সময় দেশটিকে পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রচলন ছিল এবং তা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।’
যুক্তরাষ্ট্রে টুইন টাওয়ার্সে হামলার ঘটনা নাইন ইলেভেনের পর ২০০১ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের নির্দেশে আফগানিস্তানে মার্কিন অভিযান শুরু হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে তালেবানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ অভিযান শেষ হয় ২০১৪ সালে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ বাহিনী এখনো আফগান সেনাদের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।
এর আগে মার্কিন কমান্ডার-ইন-চিফ হিসেবে দেয়া প্রথম আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে ১৬ বছর ধরে চলা যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘকালীন আফগানিস্তান যুদ্ধের ব্যাপারে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসার কথা জানান ট্রাম্প। নির্বাচনের সময় তিনি জানিয়েছিলেন, ক্ষমতায় গেলে আফগানিস্তান যুদ্ধে ইতি টানবে যুক্তরাষ্ট্র।
তবে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ক্ষমতাগ্রহণের পর থেকেই এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলে আসছেন, তিনি অনুধাবন করেছেন যে আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করলে সেখানে আল-কায়েদা এবং ইসলামিক স্টেটের (আইএস) জন্য একটি শূন্যতা তৈরি হবে।
এদিকে ট্রাম্পের বক্তব্যের পরই তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, আফগানিস্তান হবে মার্কিন সেনাদের কবরস্থান। ট্রাম্পের নতুন আফগানিস্তান কৌশলকে ‘অস্পষ্ট’ এবং ‘নতুন কিছুই না’ আখ্যা দিয়ে মঙ্গলবার এই মন্তব্য করেন তিনি। তার ভাষায়, ‘যুক্তরাষ্ট্র যদি আফগানিস্তান থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহার না করে, তবে ২১ শতকের এই সুপার পাওয়ারটির জন্য শিগগিরই আফগানিস্তান আরেকটি কবরস্থানে পরিণত হবে।’
বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, ২৩ আগস্ট ২০১৭,
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এসপি