রাখাইনে রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞের পাশাপাশি মিথ্যাচারের আশ্রয় নিয়ে আসছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। নিজের রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়িতে আগুন দিয়ে দায় চাপাচ্ছে উল্টো তাদের ওপরই। এমনকি এজন্য সংবাদমাধ্যমে মিথ্যা বক্তব্য দিতে আটকে পড়া রোহিঙ্গাদের বাধ্য করছে।
আটকে পড়া রোহিঙ্গা মুসলিমদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে শিখিয়ে দেওয়া বক্তব্য সংবাদমাধ্যমে দিতে বাধ্য করছে মিয়ানমার সেনারা।
সেনাদের এমন নির্যাতন থেকে রেহাই পাচ্ছে না মসজিদের ইমাম এবং পীররাও। বুথিদংয়ের মিনিগিছির প্রখ্যাত আলেমে ও বড় পীর মোজাফফর আহমদের ছেলে মাওলানা কুতুব উদ্দিন প্রকাশ ছোট পীরকে শুক্রবার অস্ত্রের মুখে জিম্মি করেছিল মিয়ানমার সেনারা।
আরাকান টেলিভিশন নামের একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যম জানায়, শুক্রবার মিনিগিছি ও নারাইংশং রোহিঙ্গা পল্লীতে সেনারা অগ্নিসংযোগের আগেই জিম্মি করে পীরকে। পীরের পুরো পরিবারকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে মিথ্যা বক্তব্য দিতে বাধ্য করে তারা।
জানা গেছে, পূর্ব পরিকল্পিতভাবে মিনিগিছি গ্রামে একটি স্থলমাইন বিস্ফোরণ ঘটায় সেনারা। কিন্তু গ্রামের সাধারণ রোহিঙ্গা ও রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সলভেশন আর্মি-আরসাকে এ বিস্ফোরণের জন্য দায়ী করতেই কুতুব পীরকে জিম্মি করে সেনারা।
ঘণ্টাখানেক জিম্মি করে রাখার পর পীরকে একটি উন্মুক্ত জায়গায় নিয়ে আস হয়। পীরের সঙ্গে আরো সাত-আটজন রোহিঙ্গা ছিল। এসময় সেনারা পীরকে চারদিক থেকে ঘিরে রাখে। বাড়িতে পীরের পরিবারকেও জিম্মি করে রাখে।
পরে ক্যামেরা ও মাইক্রোফোন নিয়ে সাংবাদিকের ভূমিকায় এক সেনাসদস্য পীরের কাছে জানতে চায়- এখানে কে বা কারা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে?
এসময় আমতা আমতা করে কুতুব পীর বলেন, ‘আমি এখানে মসজিদ-মাদ্রাসায় থাকি এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি। এখানে অনেক মানুষ বসবাস করে। এখানকার মানুষ খারাপ লোকদের (আরসা) পছন্দ করে না।’
‘আজ (শুক্রবার স্থানীয় সময়) সকাল ১০টা ২০ মিনিটে এখানে একটি বিস্ফোরণ ঘটে এবং একটি বোমা উদ্ধার হয়েছে। আমার ধারণা এটি আরসা তথা খারাপ লোকেরা করেছে। খারাপ লোকেরা ইতিপূর্বে আমাদের ডেকছিল, কিন্তু আমরা যাইনি। তাই আমাদের ধর্মকর্ম হয়তো পছন্দ না করে আমাদেরকেও খারাপ বানানোর জন্য এ কাজ করেছে’ যোগ করেন তিনি।
অবশ্য পীরের সব কথা প্রকাশ করেনি সেনা কর্তৃপক্ষ। আরসা সংক্রান্ত মূল কথাগুলো বার্মিজ সাব-টাইটেল দিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রোহিঙ্গাদের উপর মিয়ানমার সরকারের দমননীতি ও গণহত্যার মতো জঘন্য অপরাধ সংঘটিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক মহল দেশটির ওপর চাপ প্রয়োগ করছে। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সেনা অভিযানের যৌক্তিকতা বিশ্বকে দেখাতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে সেনারা।
পীরকে জিম্মি করে মিথ্যা বলতে বাধ্য করাও এমন একটি কৌশল হতে পারে বলে বিশ্লষকদের ধারণা। এর আগে রোহিঙ্গারা নিজেদের বাড়িঘরে নিজেরা আগুন দিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে এমন মিথ্যাচারও করেছিল মিয়ানমার প্রশাসন।
বিবিসির এক সাংবাদিকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছিল এমন চরম মিথ্যাচার। কয়েকজন হিন্দু পুরুষকে পাঞ্জাবি-টুপি এবং নারীকে মাথায় ওড়না (হিজাব) পরিয়ে রোহিঙ্গা মুসলিম সাজিয়ে ঘরে আগুন দেওয়ার ভিডিও ধারণ ও ছবি তোলা হয়। পরে ছবির হিন্দু নারী ও পুরুষকে একটি আশ্রয়কেন্দ্রে চিহ্নিত করতে সক্ষম হন ওই সাংবাদিক।
বাংলাদেশ সময়: ১৮১২ ঘণ্টা, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এসডিএম