সু চি’র বিচার শুরু

নিপীড়নের শিকার হয়ে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম নিজ দেশ থেকে পালিয়ে গেছেন। শুধু রোহিঙ্গা নয়, কাচিন, খ্রিস্টানসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে মিয়ানমারের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে একটি আন্তর্জাতিক গণআদালতে বিচার শুরু হয়েছে। সোমবার মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে রোমভিত্তিক পারমানেন্ট পিপলস ট্রাইব্যুনালে (পিপিটি) শেষ পর্বের এই শুনানি হয়।

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী, পুলিশ ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী এবং প্রধান ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) আলোচিত নেত্রী অং সান সু চি যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার দায়ে ইতোমধ্যে অভিযুক্ত হয়েছেন।

তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা এজাহারের ভিত্তিতে চলতি বছরের ৬ ও ৭ মার্চ শুনানি হয়। এরপর লন্ডনের কুইন মেরি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত রোমভিত্তিক পারমানেন্ট পিপলস ট্রাইব্যুনালের (পিপিটি) সূচনা অধিবেশনে অভিযোগপত্র গৃহীত হয়।

পিপিটি ষাটের দশকে ভিয়েতনাম যুদ্ধের পটভূমিতে প্রখ্যাত ব্রিটিশ দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেলের আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধের ধারণায় প্রতিষ্ঠিত। ইতালির বোলোগনাতে ১৯৭৯ সালে এর যাত্রা শুরু। এরপর থেকে তারা বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন।

তবে ব্যতিক্রমধর্মী এই গণআদালতের ইতিহাসে সম্ভবত এই প্রথম জেনারেলদের পাশাপাশি শান্তিতে নোবেল বিজয়ী কেউ নৈতিকভাবে দণ্ডিত ও দোষী সাব্যস্ত হতে চলেছেন।

ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া’র আইন অনুষদে ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে চলা এই শুনানি শেষ হবে আগামী শুক্রবার। এরপর ওইদিনই এ মামলার রায় ঘোষণা করা হবে।

এর আগে আজ মঙ্গলবার গণআদালতে মিয়ানমারে মুসলিম নিপীড়ন বিষয়ে সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করা হবে। বিকেলে প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে সমাপনী বক্তব্য শেষে বিবাদী পক্ষ বক্তব্য রাখবেন। বৃহস্পতিবার দিনভর জুরি বোর্ডের সদস্যরা তাদের বক্তব্য পেশ করবেন।

সাত সদস্যের জুরি বোর্ড এই রায় ঘোষণা করবেন। কারণ, ভারতের সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচাপতি বেল্লুর নারায়ণস্বামী শ্রীকৃষ্ণও এই জুরি বোর্ডের সদস্য ছিলেন। কিন্তু, তিনি অংশ নেননি।

রোহিঙ্গা ছাড়াও এই আদালতে খ্রিস্টান ও কাচিনসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন তাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত রাষ্ট্রীয় অপরাধের বর্ণনা দিয়েছেন।

শুনানিতে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেল অংশ নেয়। এতে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ মাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোসাইড স্ট্যাডিজ অ্যান্ড প্রিভেনশনের গবেষক অধ্যাপক গ্রেগরি স্ট্যানটন জবানবন্দি দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার দায়ে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী, পুলিশ, অন্যান্য বৌদ্ধ মিলিশিয়া এবং দেশটির বর্তমান বেসামরিক সরকার অভিযুক্ত।

শুনানিতে অংশ নেওয়া পিপিটি মালয়েশীয় শাখার সাংগঠনিক কমিটির সভাপতি চন্দ্র মোজাফফর বলেছেন, জুরি বোর্ডের সদস্যরা প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক, বিশেষজ্ঞ সাক্ষীদের মতামত, ভুক্তভোগীদের জবানবন্দি বিচার বিশ্লেষণ করে শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় রায় ঘোষণা করবেন।

তিনি জানান, বিচারকদের এ রায় জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন ও গোষ্ঠী এবং মিয়ানমার সরকারের কাছেও পাঠানো হবে।

বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হকও ওই শুনানিতে অংশ নেন।

চূড়ান্ত রায়ের পর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের বিষয়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে জাতিসংঘ ও আসিয়ান পদক্ষেপ নিতে পারবে। খবর: আইএএনএস’র

বাংলাদেশ সময় : ১৩১৩ ঘণ্টা, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৭,
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এ

Scroll to Top