রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারকে সমর্থন জানিয়ে দেশটিতে হস্তক্ষেপের বিপক্ষে অবস্থান জানিয়েছে রাশিয়া। ১৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার এক বিবৃতিতে ‘রোহিঙ্গা সংকটকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়’ দাবি করে নিজেদের অবস্থানের কথা জানায় রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মিয়ানমারে চরম আন্তঃধর্মীয় সংঘাত চলছে। এসময় বাইরের কোনো হস্তক্ষেপ সেই সংঘাতকে আরো শোচনীয় করে তুলতে পারে।’
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেন, ‘একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ সেখানকার আন্তঃধর্মীয় বিবাদ আবার ফিরিয়ে আনতে পারে।’
এক্ষেত্রে আমরা রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিভিন্ন সংগঠনের সমন্বিত বিবৃতি বিবেচনায় নিয়েছি। আমরা মিয়ানমার সরকারের পক্ষে সমর্থন প্রকাশ করছি এবং সন্ত্রাসীদের প্ররোচনা এড়িয়ে চলতে সব ধর্মের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি বলেও উল্লেখ করেন তিনি গত ২৪ আগস্ট রাতে রাখাইনে বেশ কিছু পুলিশ পোস্টে হামলার প্রেক্ষিতে মিয়ানমারের নিরাপত্তাবাহিনী নজিরবিহীন নৃশংস অভিযান পরিচালনা করে। খুন, কুপিয়ে-পুড়িয়ে হত্যা, ধর্ষণসহ নানাভাবে রোহিঙ্গাদের নির্যাতন অব্যাহত রাখে দেশটির নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা। এতে নিহত হয় প্রায় তিন হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা। জীবন বাজি রেখে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে এসেছে চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা। ফলে জনশূন্য হয়ে গেছে রাখাইন রাজ্যের প্রায় ১৭৬ টি গ্রাম।
এদিকে যুক্তরাজ্য ও সুইডেনের অনুরোধে রোহিঙ্গা ইস্যুর সমাধানে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ জরুরি বৈঠকে বসে। বৈঠকে নিরাপত্তা পরিষদের ১৫টি দেশ রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে মিয়ানমারকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আহ্বান জানায়।
এর আগে এ সংকট নিরসনে ড. মোহাম্মদ ইউনূসসহ ১২ জন নোবেল বিজয়ী ও বিশ্বের ১৮ জন বিশিষ্ট নাগরিক একটি খোলা চিঠি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের কাছে পাঠিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, রোহিঙ্গা একটি নৃগোষ্ঠীর নাম যাদের শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ ইসলাম ও ১০ ভাগ হিন্দু ধর্মাবলম্বী। রোহিঙ্গাদের আদি আবাসস্থল মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য। শত শত বছর ধরে রাজ্যটিতে বাস করা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের স্বীকৃতি না দিয়ে মিয়ানমার সরকার এ জাতিগোষ্ঠীকে নির্মূল করতে ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ চালাচ্ছে।
১৯৪৮ সালে মিয়ানমারের স্বাধীনতার সময়ও রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের স্বীকৃতি ছিল। ১৯৬২-তে সামরিক জান্তা ক্ষমতা দখল করার পর নতুন করে সংকটের মুখে পড়ে রোহিঙ্গারা। ১৯৭৪ সালে সামরিক জান্তা ‘বিদেশি’ আখ্যা দেওয়ার পর ১৯৮২ সালে প্রণোয়ন করা হয় নাগরিকত্ব আইন। আর এই কালো আইনের মাধ্যমে অস্বীকার করা হয় রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব। নাগরিকত্ব হরণ করে তাদের অস্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে পরিচয়পত্র দেওয়া হয়। সাদা কার্ড নামে পরিচিত ওই পরিচয়পত্রের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের দেওয়া হয় সীমিত কিছু নাগরিক অধিকার।
জাতিসংঘের সহায়তায় ২০১৪ সালে পরিচালিত আদমশুমারিতে রোহিঙ্গা চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও বাধার মুখে পড়তে হয় রাখাইনের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের। তাদের শুমারি বয়কটের ঘোষণার মুখে সামরিক জান্তা সিদ্ধান্ত দেয় রোহিঙ্গা হিসেবে নিবন্ধিত হতে গেলে অবাঙালি হতে হবে। ২০১৫ সালে সাংবিধানিক পুনর্গঠনের সময়ে আদমশুমারিতে দেওয়া সাময়িক পরিচয়পত্র বাতিল করে সামরিক জান্তা।
পদ্ধতিগতভাবে রোহিঙ্গাদের বঞ্চিত করা হয় মৌলিক অধিকার থেকে। চলাফেরা, বাসস্থান নির্মাণ, শিক্ষা, চিকিৎসা, এমনকি চাকরির অধিকার থেকে আইনসিদ্ধভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে তাদের।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫১ ঘণ্টা, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এসডিএম