জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের আসন্ন অধিবেশেনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে যাচ্ছেন না মিয়ানমারের নেত্রী ও রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইউ কিউ জেইয়ার বরাত দিয়ে মঙ্গলবার এ খবর জানিয়েছে মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ইরাবতীডটকম। মুখপাত্র জেইয়া জানান, মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে আরও মনোযোগী হওয়ার জন্য সু চি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে অংশ নেবেন না।
তিনি আরও জানান, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টার অধিকতর মনোযোগ প্রয়োজন। তাই অধিবেশনে সু চি\’র পরিবর্তে ভাইস প্রেসিডেন্ট হেনরি ভ্যান মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন। প্রতিনিধি দলে থাকবেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ইউ থাউং টুনও।
সাধারণ পরিষদের এবারের অধিবেশনে অং সান সু চি’র অংশ নেয়ার কথা ছিল। এখন তার পরিবর্তে ভাইস প্রেসিডেন্ট জাতিসংঘে দেশটির বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরবেন বলে জানান মুখপাত্র। জাতিসংঘের সর্বেশষ তথ্য মতে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার প্রেক্ষাপটে গত ২৫ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে ঠাঁই নিয়েছে।
এদিকে, রোহিঙ্গা গোষ্ঠী বাংলাদেশে আসার পথে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে খুন, ধর্ষণ ও নির্যাতনের মতো ঘটনার শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কয়েকদিন ধরে হেঁটে আসা বেশিরভাগ রোহিঙ্গা এখন অসুস্থ, অবিশ্রান্ত। তারা এখন খাদ্য, পানি ও নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য মুখিয়ে আছে বলেও জানায় জাতিসংঘ।
প্রসঙ্গত, গত মাসের ২৪ আগস্ট মুসলিম অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যে পুলিশ পোস্ট ও সেনা ক্যাম্পে হামলার ঘটনায় সীমান্ত পেরিয়ে ফের বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঢল নামে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে বলে জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক এই মানবাধিকার সংস্থাটি জানিয়েছে, আরও প্রায় লাখ পাঁচেকের মতো রোহিঙ্গা সীমান্ত পাড়ি দিতে রাখাইনে অপেক্ষমান আছে।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোয়, তাদের আশ্রয় দেয়ায় ও তাদের কাছে সহায়তা পৌঁছে দেয়ার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখায় রবিবার মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের এক বিবৃতিতে বাংলাদেশের ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ায় উদারতার পরিচয় দিচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার মুখপাত্র ভিভিয়ান ট্যান।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহল থেকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের উপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে মিয়ানমারকে সব ধরনের সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছে জার্মান সরকার। ভারত তাদের অবস্থান পরিষ্কার না করলেও মিয়ানমারের পক্ষ নিয়েছে চীন। মালয়েশিয়া-তুরস্ক সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে রোহিঙ্গাদের জন্য ইতোমধ্যে ত্রাণ সহায়তা পাঠানো শুরু করেছে। বিশ্বের প্রায় সব দেশের রাষ্ট্রদূতরা আসছেন রোহিঙ্গা পরিস্থিতি পরিদর্শনে।
বাংলাদেশ সময়: ১২১০ ঘণ্টা, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এসপি