রোহিঙ্গা সংকট প্রশ্নে মুখ খুললেন মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি। মুখ খুলেই তিনি দাবি করেছেন, তাঁর সরকার রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা মুসলিমদের সবাইকেই রক্ষা করছে। আর রাখাইনের সহিংসতার বিষয়ে তথ্য বিকৃত করে ‘এত বিপুল পরিমাণে ভুয়া খবর’ ছড়ানো হচ্ছে যে তা সন্ত্রাসীদের স্বার্থকেই রক্ষা করছে। সু চির কার্যালয় গতকাল বুধবার এক বিবৃতিতে জানায়, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান সুচিকে ফোন করলে সু চি রোহিঙ্গা বিষয়ে এ কথাগুলো বলেন।
এদিকে সু চির সঙ্গে বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাখাইন রাজ্যে ‘চরমপন্থী সহিংসতা’ ও ‘নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সহিংসতার’ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তবে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর সহিংসতার বিষয়টি তিনি এড়িয়ে গেছেন। গতকাল মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে সু চির সঙ্গে বৈঠক করেন মোদি। মোদি এ সময় সু চির নেতৃত্বেরও প্রশংসা করেন এবং বলেন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ভারত সব সময় মিয়ানমারের পাশে থাকবে।
মিয়ানমারের নৃতাত্ত্বিক মুসলিম রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী দেশটিতে বহু বছর ধরে হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছে। পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর সরকারি বাহিনী ও সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধদের হত্যা, নির্যাতন, সহিংসতার কারণে গত দুই সপ্তাহে প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানায়, দেশটির সেনাবাহিনী ও রাখাইন বৌদ্ধরা মিলে রোহিঙ্গাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে এবং নিরস্ত্রদের হত্যা করছে।
একটি পুলিশ চেকপোস্টে জঙ্গি হামলার জের ধরে ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের ওপর এই সেনা অভিযান শুরু হয়। এত দিন বিষয়টিতে চুপ ছিলেন শান্তিতে নোবেলজয়ী সু চি। ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। অবশেষে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য এরদোয়ান টেলিফোন করলে সু চি তাঁর অবস্থান ব্যাখ্যা করেন।
মিয়ানমার সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়, সু চি এরদোয়ানকে বলেছেন, তাঁর সরকার ‘ইতিমধ্যেই রাখাইন রাজ্যের সব মানুষকে যতটা সম্ভব ততটা ভালো উপায়ে রক্ষা করা শুরু করেছে’। তিনি এরদোয়ানকে আরো বলেন, ‘মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক সুরক্ষা থেকে কাউকে বঞ্চিত করার অর্থ কী তা আমরা অন্য বেশির ভাগ মানুষের চেয়ে ভালোভাবে জানি। সুতরাং আমরা দেশের সব লোকের সুরক্ষা নিশ্চিত করি, যেহেতু এই সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার তাদের রয়েছে। ’
ওই বিবৃতিতে আরো বলা হয় যে, সু চি অভিযোগ করেছেন, রাখাইনে সংঘাত সম্পর্কিত যেসব ছবি প্রচার করা হচ্ছে তা ভুয়া এবং সামপ্রদায়িক সংঘাত উসকে দেওয়ার জন্যই এমনটা করা হচ্ছে যার মূল উদ্দেশ্য সন্ত্রাসীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করা।
সু চি এসব অভিযোগ করলেও রাখাইনের সহিংসতার জন্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের দিকেই আঙুল তুলছে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মহল। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও সংবাদ সংস্থার খবরে বলা হয়েছে, তিন দিন ধরে বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্তের একাংশ জুড়ে ল্যান্ডমাইন বসাচ্ছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। বাংলাদেশের দুটি সরকারি সূত্রের বরাতে তারা জানিয়েছে, সেনাবাহিনীর সহিংসতা থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে চলে আসা রোহিঙ্গারা যেন আর মিয়ানমারে ফিরে যেতে না পারে সে জন্যই মাইনগুলো পোঁতা হচ্ছে।
সু চির সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যু এড়িয়ে গেলেন মোদি : সু চির সঙ্গে বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রাখাইন রাজ্যে ‘চরমপন্থী সহিংসতা’ ও ‘নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সহিংসতার’ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তবে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর সহিংসতার বিষয়টি তিনি এড়িয়ে গেছেন। গতকাল মিয়ানমারের রাজধানী নেপিডোতে সু চির সঙ্গে বৈঠক করেন মোদি। মোদি এ সময় সু চির নেতৃত্বেরও প্রশংসা করেন এবং বলেন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ভারত সব সময় মিয়ানমারের পাশে থাকবে।
তিন দিনের সরকারি সফরে মঙ্গলবার মিয়ানমারে পৌঁছেন মোদি। গতকাল বুধবার রাজধানী নেপিডোতে সু চির সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। বৈঠক শেষে এক যৌথ বিবৃতিতে মোদি বলেন, ‘রাখাইন রাজ্যে চরমপন্থী সহিংসতা ও নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সহিংসতা এবং নিরপরাধ মানুষের ক্ষয়ক্ষতিতে আপনার উদ্বেগের ভাগীদার আমরাও। আমরা আশা করব, সব পক্ষ মিলে এ সমস্যার একটি সমাধানের উপায় বের করবে যাতে মিয়ানমারের ঐক্য ও ভৌগোলিক অখণ্ডতা বজায় থাকে। একই সঙ্গে সবার জন্য শান্তি, ন্যায্যতা, মর্যাদা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধও অক্ষুণ্ন রাখতে হবে। ’
মিয়ানমারে সন্ত্রাসী হুমকি মোকাবেলায় ভারতকে পাশে পাওয়ার আশ্বাসে মোদিকে ধন্যবাদ জানান সু চি। তিনি বলেন, ভারত ও মিয়ানমার যৌথভাবে এটা নিশ্চিত করতে পারবে যে সন্ত্রাসীরা কোনোভাবেই তাদের এ দুই দেশের মাটি অথবা প্রতিবেশীদের মাটি ব্যবহার করতে পারবে না।
ধারণা করা হচ্ছিল, সু চির সঙ্গে বৈঠকে মোদি প্রতিবেশী দেশগুলোতে দলে দলে রোহিঙ্গা প্রবেশের বিষয়টি তুলবেন। সূত্র : বিবিসি, হিন্দুস্তান টাইমস।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৭ ঘণ্টা, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/পিকে