উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং-উন জাপানের ওপর দিয়ে আবারো ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের অঙ্গীকার করেছেন। জাতিসংঘের নিন্দা এবং যুক্তরাষ্ট্রের হুমকির মুখে তিনি এ অঙ্গীকার করে বলেন, পরমাণু ক্ষমতাধর উত্তর কোরিয়ার উস্কানিমূলক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ ছিল নিছক একটি ‘নাটক মঞ্চস্থ’ করা মাত্র।
উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচি প্রশ্নে উত্তেজনার মধ্যেই পিয়ংইয়ং মঙ্গলবার মাঝারি পাল্লার হোয়াংসং-১২ নামের দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায়। এটি কোরীয় উপদ্বীপ অঞ্চলের পরিস্থিতিকে আরো উত্তেজনাপূর্ণ করে তোলে।
কিমের বরাত দিয়ে উত্তর কোরিয়ার সরকারি বার্তা সংস্থা কেসিএনএ জানায়, পিয়ংইয়ং প্রয়োজনে ভবিষ্যতে আরো দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করবে।
সাম্প্রতিক সময়ে একদিকে উত্তর কোরিয়া মার্কিন ভূখণ্ড গুয়ামে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছে। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পিয়ংইয়ংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার হুমকি দিয়েছেন।
সর্বশেষ ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের পর ট্রাম্প বলেন, উত্তর কোরিয়াকে কীভাবে শায়েস্তা করা যায় তার ‘সকল বিকল্প’ আলোচনার টেবিলে রাখা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রকে সম্মান জানানো শুরু করায় কিমকে অভিনন্দন জানানোর মাত্র কয়েকদিন পর সম্ভাব্য মার্কিন সামরিক পদক্ষেপের কথা পুনর্ব্যক্ত করলেন ট্রাম্প।
এদিকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ সর্বসম্মতভাবে দেয়া এক বিবৃতিতে উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের কঠোর নিন্দা জানিয়ে বলেছে, ‘এটি কেবলমাত্র এ অঞ্চলের জন্য নয়, জাতিসংঘের সকল সদস্য রাষ্ট্রের জন্য বড় হুমকি।’
উত্তর কোরিয়ার মিত্র দেশ চীন ও রাশিয়া জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে পিয়ংইয়ংয়ের বিরুদ্ধে উত্থাপিত মার্কিন খসড়া প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। তবে তারা চাচ্ছে না যে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হোক।
উত্তর কোরিয়ার ক্ষমতাসিন দলের মুখপত্র রোদোং সিনমুন সংবাদপত্র বুধবার ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের ২০টির বেশি ছবি প্রকাশ করেছে।
মঙ্গলবার দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক বাহিনী জানায়,উত্তর কোরিয়ার ছোঁড়া ক্ষেপণাস্ত্রটি সর্বোচ্চ সাড়ে পাঁচশো কিলোমিটার উচ্চতায় পৌঁছে প্রায় দুই হাজার সাতশো কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরে গিয়ে পড়ে।
উত্তর কোরিয়া মঙ্গলবার যে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে তা জাপানের উত্তর-পূর্বাংশের হোক্কাইডো প্রদেশের দ্বীপ এলাকা অতিক্রম করে প্রশান্ত মহাসাগরে গিয়ে পড়েছে। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকালে উত্তর কোরিয়া ওই ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার পর জাপান জরুরি সতর্কতা জারি করলেও ক্ষেপণাস্ত্রটি আকাশেই ধ্বংস করার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। শুক্র ও শনিবার কয়েক দফা স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার উত্তেজনার মধ্যেই পিয়ংইয়ং এই দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালালো।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে এ ঘটনাকে ‘নজিরবিহীন হুমকি’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার বার্ষিক সামরিক মহড়া চলার মধ্যেই উত্তর কোরিয়া একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছে। তবে ২০০৯ সালের পর এবারই দেশটি জাপানের ওপর দিয়ে এ পরীক্ষা চালালো।
জাপানের সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, উত্তর কোরিয়ার পশ্চিমাঞ্চল থেকে নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রশান্ত মহাসাগরে পড়ার আগে প্রায় ১৪ মিনিট জাপানের লোকালয়ের উপরে ছিল। এ জন্য আগেই জাপান সরকারের পক্ষ থেকে নাগরিকদের সতর্ক করে মোবাইল ফোনে বার্তা পাঠানো হয়।
জাপানের মন্ত্রিপরিষদ সচিব ইয়াশিদা সুগা টোকিওতে সাংবাদিকদের বলেন, এটি নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য বড় ধরনের হুমকি। এভাবে আর চুপ থাকা যায় না। আমরা উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে আরো প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলব।
পিয়ংইয়ং আঞ্চলিক শান্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে বলেন, আমরা চাই বিশ্বনেতারা উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে সব ধরনের চাপ অব্যাহত রাখুক।
এর আগে ১৯৯৮ ও ২০০৯ সালে উত্তর কোরিয়ার ছোঁড়া দুটি রকেট জাপানের আকাশ সীমা অতিক্রম করে। উত্তর কোরিয়ার পক্ষ থেকে সে সময় বলা হয়েছিল, সেগুলো কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল, অস্ত্র হিসেবে নয়।
উল্লেখ্য, উত্তর কোরিয়ার রপ্তানি এবং বিনিয়োগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জোরদারে এ মাসের গোড়ার দিকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ পিয়ংইয়ংয়ের বিরুদ্ধে সপ্তম দফার অবরোধ আরোপ করে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১২ ঘণ্টা, ৩০ আগস্ট ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এসডিএম