আধ্যাত্মিক ঋষি, জনহিতৈষী, বহুমুখী গায়ক, চৌকস ক্রীড়াবিদ, চলচ্চিত্র পরিচালক, অভিনেতা, শিল্প নির্দেশক, সংগীত পরিচালক, লেখক, গীতিকার, জীবনীকার…। ভেরিফায়েড টুইটার অ্যাকাউন্টে এই পরিচয় ভারতের স্বঘোষিত ‘ধর্মগুরু’ গুরমিত রাম রহিম সিংয়ের। অ্যাকাউন্টে আবার নামের আগে ‘ড.’ উপাধিও উল্লেখ করা।
একদিকে সিনেমার হিরো, দলিত সম্প্রদায়ের মানুষকে \’ইনসান\’-এর মর্যাদা দেওয়া, রাজনৈতিক ক্ষমতা আর পেশীশক্তি – এই সব কিছুর মিশেলেই প্রায় আড়াই দশক ধরে গড়ে উঠেছে গুরমিত রাম রহিম সিং-এর ভক্তকুল।
দুই নারী ভক্ত(সাধ্বী)’র ধর্ষণের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন ভারতের বিতর্কিত ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম। বিহার রাজ্যের ডেরা সাচ্চা সওদার আশ্রমের গোপন ডেরায় ‘রাসলীলা’ চালাতেন তিনি।
ডেরা সাচ্চা সওদার প্রধান আধ্যাত্মিক গুরু গুরমিত রাম রহিম সিং নিজেকে ‘সব সম্প্রদায়ের ঈশ্বর’ বলে ঘোষণা করে৷ দুই নারী ভক্তকে ধর্ষণের দায়ে ২০০২ সালে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়৷
সেই মামলায় রাম রহিম সিংকে দশ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে দেশটির আদালত৷ ২৫ আগস্ট আদালত রাম রহিমকে দোষী সাব্যস্ত করলে দুই রাজ্যজুড়ে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছেন তার ভক্ত-অনুগামীরা।
গুরমিতের এক আইনজীবী গতকাল জানান, সাজা কমানোর জন্য উচ্চ আদালতে আবেদন রাখবেন তাঁরা। তবে সাজা ঘোষণা হওয়ার পরেই ধর্ষক বাবার অবস্থা শোচনীয়।
এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর সূত্রে জানা গিয়েছে, গতকাল সাজা শোনার পরেই সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে ধর্ষক বাবা। হেলিকপ্টারে করে রোহতকের জেলে নিয়ে যাওয়ার পর কাঁদতে শুরু করে রাম রহিম। এই জেলেই ১০-১০ করে ২০ বছর কাটাতে হবে তাকে। আপাতত ধর্ষক বাবাকে জেলের একটি ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, যেখানে অন্য কোনও বন্দি নেই। খবর এবেলার।
দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দলই আদালতের এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে। বিজেপির তরফে সুব্রহ্মণ্যম স্বামী বলেন, ‘‘এই রায় বুঝিয়ে দিল কেউই আইনের উর্ধ্বে নয়’’।
তবে রায় ঘোষণার পরেই সামনে এসেছে আরও বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য। সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের দাবি, বাবার আশ্রমে যে কজন সাধ্বী ছিলেন, তাঁদের ৯০ শতাংশকেই ধর্ষণ করেছে বাবা। সিবিআই-এর এম এল শর্মা জানান, এখনও পর্যন্ত ৩০-৪০ জন সাধ্বীকে ধর্ষণ করার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। এদের মধ্যে অনেককে খুন করে তাঁদের দেহ লোপাট করা হয়েছে বলেও অভিযোগ।
জানা গিয়েছে, ডেরা হেড কোয়ার্টারে অনেকের দেহ পুড়িয়ে দিয়েছে বাবার সাগরেদরা। প্রসঙ্গত, ২০০২ সালে সাংবাদিক রামচন্দ্র ছত্রপতি বাবা রাম রহিমের কেচ্ছা সামনে আনার উদ্যোগ নেন এবং খুন হন। এই খুনের সঙ্গেও ধর্ষক বাবা জড়িত কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে নতুন করে।
রাম রহিমের পনেরো বছরের সঙ্গী বিয়ন্ত সিংহ সংবাদ সংস্থার কাছে দাবি করেন, ধর্মগুরু তার দত্তক নেওয়া মেয়ের স্বামীকেও হেনস্থা করেছে।
ইতিমধ্যেই ডেরা সমর্থকদের বিক্ষোভ নিয়ে কেন্দ্রকে রিপোর্ট পাঠিয়েছে হরিয়ানার বিজেপি সরকার। সরকার জানিয়েছে, শান্তি বজায় রাখতে ২০,০০০ আধা সামরিক নিয়োগ করা হয়েছে হরিয়ানায়।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৭ ঘণ্টা, ২৯ আগস্ট, ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/পিকে