ধর্ষণ মামলায় ধর্মগুরু রাম রহিমের ১০ বছরের সাজা

ভারতের বিতর্কিত ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিংকে ধর্ষণ মামলায় ১০ বছরের সাজা ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার (২৮ আগস্ট) রোহতকের জেলে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে এ রায় ঘোষণা করেন সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতের বিচারপতি জগদীপ সিং। ভারতের আইন অনুযায়ী, ধর্ষণের মামলায় রাম রহিমের সর্বনিম্ন ৭ বছর থেকে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হওয়ার সুযোগ ছিল।

পশ্চিমবঙ্গভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার জানায়, ভারতের স্থানীয় সময় দুপুর পৌনে দুটো নাগাদ জেলে প্রবেশ করেন দু’পক্ষের আইনজীবীরা। আড়াইটা বাজার কিছু সময় আগে রোহতকে পৌঁছান বিচারপতি। বেলা আড়াইটার কিছু সময় পর থেকে শুরু হয় শুনানি। শুনানির সময় নিজ নিজ বক্তব্য উপস্থাপনের জন্য দুই পক্ষকে ১০ মিনিট করে সময় দেওয়া হয়। যুক্তি তর্ক শেষ হওয়ার পর বিচারপতি সবাইকে নীরবতা পালন করতে বলেন। এরপর সাজা ঘোষণা করেন জগদীপ সিং।

২০০২ সালে নিজ আশ্রমে দুই নারী অনুসারীকে ধর্ষণ করার দায়ে শুক্রবার (২৫ আগস্ট) রাম রহিমকে দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারপতি জগদীপ। আর সোমবার (২৮ আগস্ট) দিনটিকে সাজা ঘোষণার জন্য নির্ধারণ করা হয়। শুক্রবার রায়ের পর হরিয়ানার পাঁচকুলা, সিরসা শহরসহ পুরো রাজ্য ও পাঞ্জাবে সংঘটিত তাণ্ডবের কারণে সাজা ঘোষণার জন্য রোহতকের জেলেই বিশেষ আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ এইটিন এর প্রতিবেদনে বলা হয়, সোমবার যুক্তি তর্ক উপস্থাপনের সময় সিবিআই এর আইনজীবী দাবি করেন, রাম রহিম এর ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এমন আরও ৪৫ জন নারী রয়েছেন। কিন্তু তারা সামনে আসতে পারেননি। তাদেরকে তিন বছর ধরে ধর্ষণ করা হয়েছে। রাম রহিমকে সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ার আবেদন জানান তারা। আর বিবাদী পক্ষের আইনজীবী দাবি করেন, রাম রহিম একজন সমাজকর্মী, তিনি সমাজ ও নারীদের কল্যাণে কাজ করেন। রাম রহিমকে কম সাজা দেওয়ার জন্য আবেদন করেন বিবাদী পক্ষের আইনজীবী। আদালতে শুনানি চলার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন রাম রহিম। ক্ষমা ভিক্ষা চান তিনি।

হিন্দুস্থান টাইমস-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, সাজা ঘোষণার পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে কোনও ঝুঁকি নিতে চায় না প্রশাসন। তাই আগে থেকেই পাঁচকুলা ও চণ্ডীগড়কে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়। অনেকটা দুর্গ বানিয়ে ফেলা হয় রোহতককেও।

হরিয়ানা রাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আগামী ২৯ আগস্ট মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত সব মোবাইল নেটওয়ার্ক, এসএমএস সার্ভিস, ডঙ্গল সার্ভিস বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। তবে ভয়েস কল চালু রাখা যাবে বলা হয়েছে। রাম রহিমের সাজা ঘোষণার সময় থেকে ২৯ আগস্ট পর্যন্ত সিরসায় ডেরা সাচা সৌদা প্রাঙ্গণে ব্রডব্যান্ড, ইন্টারনেট লাইন বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এবিপি আনন্দ জানায়, ডেরা অনুগামীদের হামলা রোখার জন্য তৈরি রয়েছে সিরসার ডেরার প্রধান ঘাঁটি লাগোয়া গ্রামের বাসিন্দারা। তারা ইট, লাঠি, পাথর, লোহার রড নিয়ে তৈরি আছেন। শাহপুর বেঘু নামে এই গ্রামটি ডেরার প্রধান ঘাঁটি থেকে মাত্র ৫০০ মিটার দূরে অবস্থিত। এই গ্রামে প্রায় ৯ হাজার মানুষের বাস।বেশিরভাগ গ্রামবাসীই রাম রহিমের অনুগামী নন। তারা প্রশাসনের উপর ভরসা না করে আত্মরক্ষার ব্যবস্থা করেছেন।

সন্তোষ সোনি নামে এক নারী বলেন, ‘গত শুক্রবার গুরমিত রাম রহিম সিংহকে আদালত দোষী সাব্যস্ত করার আগেই গ্রামবাসীরা বাড়ির ছাদে লোহার রড, পাথর, ইট, লাঠি জড়ো করতে শুরু করেছিলেন। ডেরার উন্মত্ত সমর্থকরা হামলা চালাতে এলেই তাদের মোকাবিলা করার জন্য তৈরি ছিলেন গ্রামবাসী। তবে এই গ্রামে হামলা চালায়নি ডেরা সমর্থকরা। আমরা ফের ডেরা সমর্থকদের হামলার আশঙ্কায় তৈরি।’

বাংলাদেশ সময়: ১৬২০ ঘণ্টা, ২৮ আগস্ট ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এসডিএম