ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে ইসরাইলি হামলা অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যেই গাজা নিয়ে নতুন একটি পরিকল্পনা বিচার-বিবেচনা করছে ইসরাইল।
গণমাধ্যমের একাধিক প্রতিবেদন মতে, আবারও গাজা দখল ও শাসন করতে চাইছে ইসরাইল। সামরিক বাহিনীর এই পরিকল্পনার বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখছে দেশটির কট্টর ডানপন্থি সরকার এবং এতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনেরও সায় রয়েছে।
দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক প্রতিবেদন অনুসারে, ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে ফিরে আসার পর ইসরাইলি সেনাবাহিনীর গাজা পুনর্দখল ও শাসনের সম্ভাব্য পদক্ষেপ এখন বিবেচনা করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ইসরাইলি কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আগের (জো বাইডেন) প্রশাসন চেয়েছিল আমরা যুদ্ধ শেষ করি। ট্রাম্প চান আমরা যুদ্ধে জয়ী হই।’
প্রতিবেদন মতে, অপর এক ইসরাইলি সামরিক কর্মকর্তা বলেছেন, তাকে কয়েক মাসের ‘যুদ্ধ, বিজয় ও প্রশাসন’ পরিচালনার এর জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
নতুন এই পরিকল্পনায় গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দাকে আল-মাওয়াসি নামে একটি ছোট্ট উপকূলীয় অঞ্চলে স্থানান্তর করা হবে। অঞ্চলটিকে বর্তমানে ইসরাইলি প্রশাসন ‘মানবিক অঞ্চল’ হিসাবে বর্ণনা করছে।
সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কমপক্ষে চার ডিভিশন সেনা বা প্রায় ৪০ হাজার সেনা মোতায়েন করা হবে।এই সেনাদের মাধ্যমেই স্থায়ীভাবে শাসন করা হবে গাজা। তবে এই পরিকল্পনার কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সামরিক বিশ্লেষকরা।
ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর এই পরিকল্পনার খবর প্রকাশ করেছে টাইমস অব ইসরাইলও। সোমবার (২৪ মার্চ) জেরুজালেমভিত্তিক গণমাধ্যমটি জানায়, ইসরাইলের কৌশলগত বিষয়াদি সম্পর্কিত মন্ত্রী রন ডেরমার চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র সফর করবেন। এই সফরকালে তিনি ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পুরো গাজা উপত্যকার দখল নেয়া বিষয়ে আলোচনা করবেন।
টাইমস অব ইসরাইল বলছে, নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী, এখন যেভাবে ত্রাণ গাজার বাসিন্দাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে, সেভাবে আর সরবরাহ করা হবে না। ফিলিস্তিনিদের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেবে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী আইডিএফ।
সিএনএন জানিয়েছে, নতুন পরিকল্পনা সামনে রেখে ইসরাইলের নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় একটি বিতর্কিত প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী গাজার সব ফিলিস্তিনিকে বাস্তুচ্যুতির (গাজা থেকে অন্যত্র) কথা বলা হয়েছে। তবে বিশ্লেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, এ ধরনের কিছু হলে তা হবে জাতিগত নিধনের শামিল।
গত রোববার (২৩ মার্চ) ইসরাইলের অর্থমন্ত্রী ও কট্টরপন্থি নেতা বেজালাল স্মোট্রিচ বলেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজের উত্থাপিত প্রস্তাবটি নিরাপত্তা কাউন্সিলে অনুমোদন পেয়েছে। সেখানে গাজার বাসিন্দাদের ‘স্বেচ্ছায়’ অন্য কোনো দেশে স্থানান্তরের প্রসঙ্গ রয়েছে।
এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একই ধরনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের গণবাস্তুচ্যুতি মানবতাবিরোধী অপরাধ বলে বিবেচিত হতে পারে।
এ পরিস্থিতিতে গাজায় অব্যাহতভাবে নৃশংসতা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি ভেঙে নতুন করে হামলা শুরুর পর গাজায় সব মিলিয়ে ৭৩০ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে কমপক্ষে ৪০০ জনই নারী ও শিশু।