ডেনমার্কের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল গ্রিনল্যান্ড দখল করতে সামরিক শক্তি প্রয়োগের হুমকি ফিরিয়ে না নেয়ায় নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সতর্ক করেছে জার্মানি ও ফ্রান্স।
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বলেছেন, ‘সীমানার অখণ্ডতার নীতি প্রতিটি দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। তা খুব ছোট বা খুব শক্তিশালী দেশ যাই হোক না কেন।’
ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাঁ-নোয়েল ব্যারো বলেছেন, ‘এতে কোনো সন্দেহ নেই যে কখনই বিশ্বের অন্য দেশগুলোর সার্বভৌম সীমান্তে আক্রমণ করতে দেবে না ইউরোপীয় ইউনিয়ন।’
এদিকে, গত মঙ্গলবার ট্রাম্প আবারও তার গ্রিনল্যান্ড অধিগ্রহণের ইচ্ছার কথা জানিয়ে বলেছেন, আর্কটিক দ্বীপ যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য ‘গুরুত্বপূর্ণ’।
২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার প্রথম মেয়াদে গ্রিনল্যান্ড কেনার আগ্রহ প্রকাশ করেন ট্রাম্প। এরপর তিনি বারবারই এই ধারণা উত্থাপন করে আসছেন।
তবে, যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের মার্কিন মিত্র ডেনমার্ক স্পষ্ট করে জানিয়েছে, গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়। আর অঞ্চলটির মালিক মূলত এর বাসিন্দারা।
গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মুট এগিদ ডেনমার্কের কাছ থেকে তার দেশকে স্বাধীন করার জন্য চাপ দিয়ে আসছেন। তবে, তিনিও স্পষ্ট করে বলেছেন যে অঞ্চলটি বিক্রির জন্য নয়।
চ্যান্সেলর শলৎজ বলেন, ‘আসন্ন মার্কিন প্রশাসনের বক্তব্যগুলোয় ‘কিছুটা ভুল ধারণা’ রয়েছে। সীমান্তের অখণ্ডতার নীতি-পূর্ব বা পশ্চিম-যে কোনো দেশের জন্য প্রযোজ্য।’
জার্মানি, ফ্রান্স ও ডেনমার্ক মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোটের সদস্য।
শলৎজ জোর দিয়ে বলেন, ‘ন্যাটো আমাদের প্রতিরক্ষার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার এবং আটলান্টিক মহাসাগর উপকূলীয় দেশগুলোর সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দু।’
এর আগে বুধবার জাঁ-নোয়েল ব্যারো ফ্রান্স ইন্টার রেডিওকে বলেন, ‘আপনি যদি আমাকে প্রশ্ন করেন যুক্তরাষ্ট্র গ্রিনল্যান্ড আক্রমণ করবে কি না, তাহলে আমার উত্তর হবে-না। আমরা কি এমন এক যুগে প্রবেশ করেছি যেখানে আবারও শক্তিশালীদের টিকে থাকার নিয়ম দেখা দিচ্ছে? তাহলে এর উত্তর হবে-হ্যাঁ।’
‘তাহলে কি আমাদের নিজেদেরকে ভয় ও উদ্বেগে কাবু হতে দেয়া উচিত, অবশ্যই না। আমাদের জেগে উঠতে হবে এবং নিজেদের শক্তি গড়ে তুলতে হবে, যোগ করেন ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
জার্মানি ও ফ্রান্স ইউরোপীয় ইউনিয়ন-ইইউ’র প্রধান দুই সদস্য, যাদের প্রায়ই এই জোটের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে অভিহিত করা হয়।
তবে ইইউ কীভাবে সম্ভাব্য আক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে তা অনুমান করা বেশ কঠিন। ইইউ’র নিজস্ব কোনো প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেই এবং এর ২৭টি সদস্য দেশের বেশিরভাগই ন্যাটোর অংশ।
২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নেবেন ট্রাম্প। এর দুই সপ্তাহেরও কম সময় আগে ফ্লোরিডার মার-এ-লাগোতে এক স্বাধীন সংবাদ সম্মেলনে তিনি গ্রিনল্যান্ড নিয়ে এই মন্তব্য করেন।
গ্রিনল্যান্ড বা পানামা খাল দখলের জন্য তিনি সামরিক বা অর্থনৈতিক শক্তি ব্যবহার থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন কী-না এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘না, আমি আপনাকে এই দু’টির কোনোটির বিষয়েই আশ্বস্ত করতে পারছি না। কিন্তু আমি এটুকু বলতে পারি যে অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য আমাদের এগুলো প্রয়োজন।’