গত বছরের ৮ অক্টোবর গাজায় আগ্রাসন শুরু করে ইসরায়েল। এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ৪০ হাজার মানুষের প্রাণ গেছে। বরাবরের মতোই ইসরায়েলকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাট প্রশাসন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর পাশে দাঁড়িয়েছে। ইসরায়েলকে দফায় দফায় অস্ত্র সহায়তাও দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। আর এ কারণেই তরুণ ভোটার ও মুসলিমদের রোষাণলে পড়েছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
সামনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এই নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বাইডেন প্রশাসনের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস। তিনিও গাজা ইস্যুতে রোষাণলের মুখে আছেন। তবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থিতা টিকেট পাওয়ার আভাস পেয়েই গাজা ইস্যুতে সুর বদল করেছেন কমলা।
সম্প্রতি নেতানিয়াহুর সাথে সাক্ষাৎ করার পর তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা নিয়ে তিনি ‘চুপ থাকবেন না’।
তবে অধিকারকর্মীরা বলছেন, ইসরায়েলকে সামরিক ও কূটনৈতিকভাবে শর্তহীন সমর্থন দেওয়ার মার্কিন নীতিতে অর্থপূর্ণ পরিবর্তন আনার চেষ্টা না করে ফিলিস্তিনিদের বিষয়ে এমন সহানুভূতি প্রকাশের মধ্য দিয়ে কমলা ওই সব ভোটারের আস্থা ফেরাতে পারবেন না; যারা গাজা যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।
এ বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর সমাজবিজ্ঞানী এমান আবদেলহাদি বলেছেন, ‘গাজার শিশুদের হত্যা বন্ধে সত্যিকার প্রতিশ্রুতি ছাড়া তাঁর (কমলা হ্যারিস) এ ধরনের সহানুভূতিতে আমার কিছু আসে যায় না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনি কারও মাথায় গুলি করছেন, আবার তার প্রতি সহানুভূতি দেখাচ্ছেন, এমনটা প্রশংসার যোগ্য নয়। ফিলিস্তিনিদের পক্ষে আমাদের সহানুভূতি দেখানোর দরকার নেই; বরং প্রয়োজন, ইসরায়েলকে অস্ত্র ও অর্থ দেওয়া বন্ধ করা।’
এদিকে, ১৯৯৭ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে যাদের জন্ম, তাদেরকে ‘জেনারেশন জি’ বা সংক্ষেপে জেন জি বলা হয়। কমলা হ্যারিস ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী হতে পারেন, এমন সম্ভাবনায় এই প্রজন্মের ভোটারদের মধ্যে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়েছে।
তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কমলার প্রতি সমর্থন জানিয়ে পোস্ট করছেন। এর আগে এই প্রজন্ম ডেমোক্র্যাট পার্টির নেতৃত্বের প্রতি অনাস্থা দেখিয়েছিল।
‘উই নিড আ কমলানোমেনোন’ (আমাদের একটি কমলাকান্ড দরকার), ‘জেন জি ফিলস দ্য কমলাভ’ (জেনজি কমলার প্রতি ভালোবাসা অনুভব করে) ও অন্যান্য তারুণ্যদীপ্ত শ্লোগানে ভরে গেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো।
বেশ কয়েক মাস ধরেই তরুণদের প্রগতিশীল সংগঠনগুলো সতর্ক করছিল, যে বাইডেনের প্রতি তরুণ ভোটারদের বিতৃষ্ণা রয়েছে এবং তার উচিৎ এই প্রজন্মের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা তৈরিতে আরও উদ্যোগ নেওয়া। তরুণ প্রজন্মের সমস্যাগুলো বুঝে সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করা। তবে বাইডেন এতে তেমন একতা কর্ণপাত করেননি।
তরুণ-তরুণীরা এখন আশা করছেন, কমলা হ্যারিস তাদের মন জয় করে নেবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের তারুণ্যনির্ভর সংগঠনগুলো কমলার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। অ্যারিজোনা, উইসকনসিন, মিশিগান, ক্যালিফোর্নিয়া, মিনেসোটা, নর্থ ক্যারোলাইনা ও পেনসিলভানিয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যের নেতারা সরে দাঁড়ানোর জন্য বাইডেনকে ধন্যবাদ জানান এবং নতুন ও অপেক্ষাকৃত তরুণ এক প্রার্থীর পেছনে জমায়েত হওয়ার বিষয়টি উদযাপন করেন। শুক্রবার ১৭টি তারুণ্যনির্ভর সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত একটি জোট কমলার প্রতি সমর্থন জানায়।
বিশ্লেষকদের মতে, কিছু প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ রাজ্যে তরুণ ভোটাররাই জয়-পরাজয়ের ব্যবধান সৃষ্টি করবেন। যার ফলে রিপাবলিকান পার্টির ট্রাম্প ও ডেমোক্র্যাটদের কমলা উভয়ই তরুণ ভোটারদের প্রতি মনোযোগ দিচ্ছেন।
সম্প্রতি আটলান্টায় জেন জি অধিকারকর্মী ও নির্বাচিত কর্মকর্তাদের এক সম্মেলনে কমলা হ্যারিসের সংক্ষিপ্ত ভিডিও বিবৃতি দেখানো হয়।
বার্তায় কমলা বলেন, ‘আমরা জানি, তরুণদের ভোট খুবই গুরুত্বপূর্ণ আর আমরা আরও জানি যে এ বিষয়টিকে হালকা করে নেওয়ার কোনো উপায় নেই।’
তিনি ভিডিওতে বন্দুকের নিরাপদ ব্যবহার, গর্ভপাতের অধিকার, এলজিবিটিকিউ অধিকার ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় কাজ করার অঙ্গীকার জানান।
সবমিলিয়ে মিশ্র পথে আগাচ্ছেন কমলা। তরুণদের একটা অংশ যখন কট্টর উগ্রপন্থা ঠেকাতে তার দিকে ঝুঁকছেন। তখন গাঁজা ইস্যু হয়ে থাকছে তার গলার কাঁটা। কারণ, বহুদিনের ঐতিহাসিক মিত্র ইসরায়েলকে যেমন ছুড়ে ফেলার উপায় নাই, তেমন গাজা ইস্যুতে মুখ বন্ধ করে থাকার ফলও হতে পারে বিপর্যয়কর।