তিন বছর আগে ভারতের মুম্বাইয়ের বোরিভালি এলাকা থেকে এক তরুণীকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের সময় ওই তরুণীর অবস্থা ছিল করুণ। তিনি এক প্রকার শয্যাশায়ী এবং শরীরে অপুষ্টির ছাপ স্পষ্ট। বড় আকারের একটি কুর্তি পরা ওই তরুণীকে দেখলেই বোঝা যায়, তিনি মানসিকভাবে সুস্থ নন।
উদ্ধারকৃত ওই তরুণী একজন বাংলাদেশি নাগরিক। ২০২২ সালে তাকে ভারতে পাচার করা হয়। উদ্ধারের পর মানসিক রোগীদের নিয়ে কাজ করে এমন একটি সংগঠন শ্রদ্ধা পুনর্বাসন ফাউন্ডেশনে যোগাযোগ করে ভারতীয় রেলওয়ে পুলিশ। সেখানে পরীক্ষা করলে তার ‘পোস্টপারটাম সাইকোসিস’ ধরা পড়ে। সন্তান জন্মদানের পর কোনো কোনো মা বিরল এই মানসিক রোগে আক্রান্ত হন।
তবে চিকিৎসা নেয়ার পর এখন ২২ বছর বয়সী ওই তরুণী প্রায় সুস্থ। বর্তমানে তিনি শ্রদ্ধা পুনর্বাসন ফাউন্ডেশনে একজন সহায়তাকারী কর্মী হিসেবে কাজ করছেন। এই কাজ করলেও তিনি যত তাড়াতাড়ি নিজ দেশ বাংলাদেশে ফিরতে চান। তার পাঁচ বছর বয়সী মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে চান।
ওই তরুণী জানান, তার মেয়ের কথা খুব মনে পড়ে। তার কাছে তিনি শিগগিরই ফিরতে চান। তাকে আর কখনো তিনি ছেড়ে যাবেন না।
ইতোমধ্যে ওই তরুণীকে দেশে ফেরাতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে শ্রদ্ধা পুনর্বাসন ফাউন্ডেশন। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ বিষয়ে মুম্বাইয়ে বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের একজন কর্মকর্তা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, ওই তরুণীর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছে। তাকে ফেরত পাঠাতে সরকারের নির্দেশের অপেক্ষা করা হচ্ছে।
যেভাবে ভারতে পাচারের শিকার
বাংলাদেশে থাকতে ওই তরুণীর ডিভোর্স হয়। সেখানে তার পোস্টপারটাম সাইকোসিসের চিকিৎসা চলছিল। তবে একপর্যায়ে তিনি ওষুধ গ্রহণ বন্ধ করে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েন বলে জানান শ্রদ্ধা পুনর্বাসন ফাউন্ডেশনের একজন মনোরোগবিশেষজ্ঞ। তিনি আরও জানান, মানসিক সমস্যার জেরে ওই তরুণীকে মনে করেন বাড়িতে তার জীবন হুমকির মুখে রয়েছে। তাই তিনি বাড়ি ছেড়ে চলে যান।
তবে ফাউন্ডেশনের চিকিৎসক ও কর্মী বলছেন, বাংলাদেশ থেকে প্রথমে পশ্চিমবঙ্গে নেয়া হয় ওই তরুণীকে। তারপর নয়াদিল্লি হয়ে তাকে মহারাষ্ট্রে পাঠানো হয়।
বাংলাদেশ ও ভারতে থাকার তেমন কোনো স্মৃতি মনে করতে না পারলেও পাচার হওয়ার সময়টার কথা বেশ ভালোভাবে মনে আছে ওই তরুণীর। তিনি জানান, চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দিয়ে এক ব্যক্তি কীভাবে তাকে সীমান্ত পার করেন।
তিনি বলেন, ‘সীমান্ত পার হওয়ার আগে আমরা সবাই একটি কাঁটাতারের বেড়ার কাছে লুকিয়ে ছিলাম। সশস্ত্র সীমান্ত প্রহরীরা এক পাশ থেকে অন্য পাশে গেলে আমরা একজন একজন করে সীমানা অতিক্রম করেছিলাম।’
পাচারের পর প্রথমে ওই তরুণীকে পশ্চিমবঙ্গে নেয়া হয়। সেখানে একটি ঘরে অন্য নারীদের সঙ্গে আটকে রেখে তাকে অত্যাচার করা হয়। ওই তরুণীর অভিযোগ, কলকাতায় তাকে জোর করে যৌনকর্মে লিপ্ত করা হয়। দিল্লিতেও তাকে একই কাজ করতে বাধ্য করা হয়। একপর্যায়ে তিনি পুনেতে এক আত্মীয়ের বাড়িতে পালিয়ে গেলেও সেখানেও তিনি যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
যেভাবে মিলল পরিবারের খোঁজ
ওই তরুণীর স্মৃতি তেমন মনে না থাকায় বাংলাদেশে তার পরিবারের সন্ধান পেতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। তার দেয়া ভাসা ভাসা তথ্য জোড়া দিয়ে তার বাড়ি যে যশোরে সেটা বের করেন তার দেখভালকারীরা। যশোরের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত রয়েছে।
এরপর ‘রাইটস যশোর’ নামে যশোরের একটি এনজিওর সঙ্গে যোগাযোগ করে শ্রদ্ধা পুর্নবাসন ফাউন্ডেশন। এভাবে তার পরিবারের খোঁজ পাওয়া যায় । ওই তরুণীর বাবা একজন রিকশাচালক। নিখোঁজ সন্তানের খোঁজ পেয়ে তিনি দারুণ খুশি।