পাকিস্তানে স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য ক্ষমতা দখলকারীদের পিছু হটে যাওয়াটা জরুরি বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কারাবন্দি ইমরান খান।
দেশটির সংসদীয় দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারপারসন বলেন, ‘আমরা যদি দেশকে বাঁচাতে চাই, তাহলে স্বচ্ছ নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। আর এক্ষেত্রে ক্ষমতা দখলকারীদের অবশ্যই পিছু হটতে হবে।’
সাবেক প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে গণমাধ্যমের সঙ্গে এক অনানুষ্ঠানিক আলাপকালে জোরালোভাবে এসব কথা বলেন।
পিটিআইপ্রধান এ সময় দেশের জাতীয় ঋণের তীব্র বৃদ্ধির কথা তুলে ধরে বলেন, ২০২১ সালে এটি ছিল ২.৮ ট্রিলিয়ন রুপি। কিন্তু চার বছরের মধ্যে এটি ৮ থেকে ৯ ট্রিলিয়ন রুপি বেড়েছে।
ইমরান খান এ সময় সব ক্ষেত্রে ব্যর্থতার জন্য বর্তমান সরকারের সমালোচনা করে বলেন, ‘বর্তমান সরকার পাকিস্তানের আশা ধ্বংস করে দিয়েছে, এই সরকারকে কেউ আর বিশ্বাস করে না।’
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী এ সময় সাধারণ মানুষের ওপর গুরুতর অর্থনৈতিক বোঝার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘যে গরিবদের ওপর মাত্র ২ হাজার টাকার ঋণ ছিল, তারা এখন ১০ হাজার টাকার ঋণের সম্মুখীন।’
পূর্ববর্তী একটি মিডিয়া আলোচনায়, আইএমএফ দেশের সমস্যাগুলো সমাধান করতে পারে না বলে জোর দিয়েছিলেন ইমরান খান। তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, এর সমাধান একমাত্র সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচনের মধ্যেই রয়েছে।
পিটিআইপ্রধান উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, পাকিস্তান এমন একটি দেশ, যা এক সময় ১৯৯০ সাল পর্যন্ত নেতৃত্বে ছিল। কিন্তু এখন অন্য দেশগুলো তাকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
তিনি এ সময় দেশের অভিজাতদের তাদের সম্পদ বিদেশে লুকিয়ে রাখার জন্য দায়ী করেন এবং পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনকে (ইসিপি) ৮ ফেব্রুয়ারির সাধারণ নির্বাচনে ‘ঐতিহাসিক’ কারচুপির জন্য অভিযুক্ত করেন।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, সবাই জানে ইসিপি জালিয়াতি করে নির্বাচন করেছে।
বিচার বিভাগের কথা উল্লেখ করে ইমরান খান বলেন, কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতার বিষয়গুলো জেনেও সিজেপি ইসা তার দলকে বিচারের জন্য ইসিপিতে পাঠাচ্ছেন।
ইমরান এ সময়, ‘কেন তাদের মানবাধিকার সংক্রান্ত পিটিশন এবং ৮ ফেব্রুয়ারির মামলা পাকিস্তানের সুপ্রিমকোর্টে শুনানি হচ্ছে না’ বলেও প্রশ্ন তোলেন।
এ সময় সামরিক আদালতে বেসামরিকদের বিচারের সমালোচনাও করেন ইমরান খান। তিনি প্রশ্ন তোলেন, কোন গণতন্ত্রে আছে যে, সামরিক আদালতে বেসামরিকদের বিচার হয়?
এদিকে মিডিয়া দমনের কথা জানিয়ে ইমরান দাবি করেন, মিডিয়াকে দমন করার পরিকল্পনা হয়েছে। এ ছাড়া কংগ্রেসও বলছে, পাকিস্তানে জালিয়াতিপূর্ণ নির্বাচন হয়েছে।
এ সময় শাসকদের ভূমিকা নিয়ে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে ইমরান বলেন, ‘অনির্বাচিত প্রভূত্ববাদীরাই এখন দেশ চালাচ্ছে, স্পেশাল ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন কাউন্সিলই (এসআইএফসি) এখন দেশ চালাচ্ছে।
মন্ত্রিসভার একজন সাবেক সদস্য তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে, ইমরান খান তা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘আমি এ সম্পর্কে পরে কথা বলব।’
এদিকে অনশনের ঘোষণা প্রসঙ্গে ইমরান নিশ্চিত করে বলেছেন, ‘আমি অবশ্যই অনশনে যাব; আমি কিছু সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি।’
ইমরান খান গত ৪ জুলাই পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি কাজী ফয়েজ ঈসার ওপর তার আস্থার অভাব প্রকাশ করেন এবং কারাগারেই অনশন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। সূত্র: দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন