ভারতের রাজধানী দিল্লিতে একজন নারী চিকিৎসককে বাংলাদেশ-ভারতের কিডনি পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ওই চিকিৎসক দেশটির একটি বেসরকারি হাসপাতালে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হিসেবে যুক্ত। এরইমধ্যে তাকে বরখাস্ত করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ করা না হলে, ভারতের গোটা চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ভারতের নামকরা চিকিৎসকরা।
ভারতীয় গোয়েন্দাদের কাছে নির্দিষ্ট তথ্য ছিল যে, দেশটির অভ্যন্তরে বেশ কিছু নামকরা হাসপাতালে বাংলাদেশিদের শরীর থেকে কিডনি অপসরণ করে তা নিয়ে বড় চক্র চালাচ্ছে প্রভাবশালী একজন চিকিৎসক। আর এই কিডনি পাচার চক্রে যেমন বাংলাদেশি দালালরা সক্রিয়, তেমন সক্রিয় রয়েছে ভারতীয় মধ্যস্বত্তভোগী দালালরাও।
গোয়েন্দা তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পর ফাঁদ পেতে রাজধানী দিল্লির অদূরে নয়ডার একটি বেসরকারি বিশেষায়িত হাসপাতাল থেকে কিডনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিজয়া কুমারীকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গেল সপ্তাহের এই ঘটনার সঙ্গে দুজন বাংলাদেশি কিডনি দাতাসহ একজন ভারতীয় দাতাকেও দিল্লির ক্রাইম ব্রাঞ্চ গ্রেফতার করেছে। তাদের নাম- রাসেল, সুমন মিয়া এবং রীতিশ পাল। রীতিশ ভারতীয় বলে দাবি করলেও গোয়েন্দারা সন্দেহ করছেন, এই যুবকও বাংলাদেশি।
গোয়েন্দা সূত্রগুলো বলছে, বিজয়া কুমারী দিল্লির একটি বেসরকারি বিশেষায়িত হাসপাতালের কিডনি বিশেষজ্ঞ হিসেবে ১৫ বছর কাজ করছেন। সব মিলিয়ে প্রায় ২৭ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। এ ঘটনার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাময়িক বরখাস্ত করে পুলিশি তদন্তে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাসও দিয়েছে।
দেশটির গণমাধ্যমের দাবি, দিল্লি লাগোয়া নয়ডার যথারথ বিশেষায়িত হাসপাতালে ‘ব্যবসা’ পেতে বসেছিলেন কিডনি বিশেষজ্ঞ বিজয়া কুমারী। ২০২১-২৩ সাল পর্যন্ত তিনি প্রায় ১৫ জনের দেহে কিডনি প্রতিস্থাপন করেছেন। আর এসব গুলোই অভাবগ্রস্ত বাংলাদেশিদের কাছ থেকে কম টাকায় কিনে বেশি দামে রোগীর স্বজনদের কাছে বিক্রি করেছে চক্রটি।
সংশ্লিষ্টদের জেরা করে পুলিশ জানাচ্ছে, যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা মূলত তিন থেকে চার লাখ টাকায় কিডনি বিক্রির চুক্তি করতেন। কিন্তু ভারতীয় মধ্যস্থাতাকারীরা রোগীর পরিবারের কাছে থেকে আদায় করতো ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা।
ভারতের এতো নামী একজন চিকিৎসক যদি এ ধরনের অবৈধ অর্গান ট্রান্সপ্ল্যান্টের সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তবে দেশের গোটা চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন উঠবে- এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে সরকারকে উদ্যোগ নিতে বলছেন ভারতীয় বিশিষ্ট চিকিৎসকরা।
ভারতের গোয়েন্দা সূত্র বলছে, দিল্লি, নয়ডা, গুরগাও, চেন্নাই, কলকাতাসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় ‘হিউম্যান অর্গান’ পাচার বেড়েছে। ভারতীয় দালাল চক্র দেশের ভেতর এবং প্রতিবেশী বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন জেলাতেও জাল বিছিয়ে অর্থের লোভে কিডনি বিক্রি করতে বাধ্য করছে। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনার গোয়েন্দারা কিডনি পাচার চক্রের বিষয়ে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের কাছে গোপন রিপোর্ট দাখিল করে। সেখানেও এই চক্রের সঙ্গে শতাধিক দালাল জড়িত বলে চিহ্নিত করা হয়।