ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের প্রধান শিশু হাসপাতালে থাকা রোগীদের মধ্যে ছিল ৩৩ বছর বয়সী ভিতলানা ক্রাভচেঙ্কোর শিশুসন্তান। গতকাল সোমবার দিনের বেলায় এই হাসপাতালে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। এই ঘটনাকে ভীতিকর হিসেবে বর্ণনা করেন ক্রাভচেঙ্কো। তিনি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘আমি নিশ্বাস নিতে পারছিলাম না। আমি আমার শিশুসন্তানকে রক্ষার চেষ্টা করছিলাম। আমি তাকে (শিশু) কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখার চেষ্টা করছিলাম, যাতে সে নিশ্বাস নিতে পারে।’
ইউক্রেনের অন্যান্য শহরেও রাশিয়া ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এসব হামলায় কমপক্ষে ৪১ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। কিয়েভের হাসপাতালটিতে হামলার ঘটনায় শিশুদের মা–বাবা হতবাক হয়ে যান। মা-বাবা–শিশুদের কাঁদতে দেখা যায়। অনেক মা–বাবা হাসপাতালের বাইরে রাস্তায় শিশুদের হাত ধরে হাঁটছিলেন।
হামলায় হাসপাতাল ভবনটির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কিয়েভের শত শত বাসিন্দা ধ্বংসাবশেষ সরাতে কাজ করছিলেন।
রয়টার্স একটি ভিডিও পেয়েছে। এতে দেখা যায়, একটি ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভের শিশু হাসপাতালটির ওপর পড়ছে। তারপর একটি বড় বিস্ফোরণ ঘটে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁর দেশের বিভিন্ন স্থানে রুশ হামলায় ৩ শিশুসহ ৩৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত ১৭০ জনের বেশি।
তবে ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, নিহতের সংখ্যা কমপক্ষে ৪১ জন।
পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর সম্মেলনে যোগ দিতে ওয়াশিংটনের পথে রয়েছেন জেলেনস্কি। পথে তিনি পোল্যান্ডে যাত্রাবিরতি করেন।
টেলিগ্রামে জেলেনস্কি বলেন, রুশ হামলায় ১০০ টির বেশি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে কিয়েভের শিশু হাসপাতাল ও একটি মাতৃসদনকেন্দ্র আছে। এ ছাড়া হামলার শিকার হয়েছে শিশুদের নার্সারি, ব্যবসাকেন্দ্র, বাড়ি।
জেলেনস্কি বলেন, এই হামলার জন্য রুশ সন্ত্রাসীদের অবশ্যই জবাব দিতে হবে। উদ্বিগ্ন হওয়ায় সন্ত্রাস বন্ধ হয় না। সমবেদনা কোনো অস্ত্র নয়।
রুশ হামলায় হতাহতের ঘটনায় ইউক্রেন সরকার আজ মঙ্গলবার দেশটিতে এক দিনের শোক দিবস ঘোষণা করেছে।
ইউক্রেনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে কিয়েভের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার যে জরুরি ভিত্তিতে উন্নয়ন দরকার, তা দেখিয়ে দিয়েছে এই ঘটনা।
ইউক্রেনের বিমানবাহিনীর দাবি, তারা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ৩৮ টির মধ্যে ৩০টি ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করেছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার প্রাণঘাতী ক্ষেপণাস্ত্র হামলা মস্কোর ভয়ংকর বর্বরতাকে মনে করিয়ে দেয়।
বাইডেন বলেছেন, ওয়াশিংটন ও তার ন্যাটো মিত্ররা ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা শক্তিশালী করার জন্য নতুন সহায়তার ঘোষণা দেবে।
কূটনীতিকেরা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইকুয়েডর ও স্লোভেনিয়ার অনুরোধে আজ মঙ্গলবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক হবে।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক এই হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। বলেছেন, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ইউক্রেনের অসুস্থ শিশুও আছে।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, রুশ বাহিনী ইউক্রেনের প্রতিরক্ষাশিল্প ও বিমানঘাঁটিতে নিশানা করে হামলা চালিয়েছে।
মস্কো বারবার ইউক্রেনের বেসামরিক নাগরিক ও বেসামরিক অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু করার কথা অস্বীকার করে আসছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া। চলমান এই হামলায় ইউক্রেনের হাজারো বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে।