শেষবার আমেরিকানরা ১৯৫৬ সালে দেশটির দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে ভোট দিয়েছিলেন। রিপাবলিকান প্রার্থী ডোয়াইট আইজেনহাওয়ার এবং ডেমোক্র্যাট অ্যাডলাই স্টিভেনসন দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মুখোমুখি হয়েছিল সেই বছর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অন্যতম মার্কিন সেনা আইজেনহাওয়ার সেই নির্বাচনে জয়ী হন।
প্রায় সাত দশক পর, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা ফের দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মধ্যকার উত্তেজনাপূর্ণ নির্বাচনে ভোট দিতে যাচ্ছেন। নভেম্বরের এই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে প্রথম মুখোমুখি বিতর্কে অভিবাসন নিয়ে জাতীয়তাবাদী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আক্রমণ করেছেন অপেক্ষাকৃত উদারপন্থী জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন সময়ে অভিবাসনপ্রত্যাশী মায়ের কাছ থেকে শিশু সন্তানদের আলাদা করছিলেন।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (২৭ জুন), বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সকাল ৭টায়, প্রথম মুখোমুখি বিতর্কে অংশ নেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাইডেন ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। বিতর্কের আয়োজক দেশটির প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম সিএনএন ও এবিসি। বিতর্কে বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কাছে প্রশ্ন রাখা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্ত-সংকটে কেন ভোটারেরা তার ওপর আস্থা রাখবেন।
জবাবে ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, মার্কিন কংগ্রেসে একটি দ্বিদলীয় সীমান্ত বিল পাস করার জন্য তার প্রশাসন অনেক চেষ্টা করেছে। অভিবাসন নিয়ে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আমলের পদক্ষেপের সমালোচনা করেন বাইডেন। বলেন, ট্রাম্পের মেয়াদে এমন একটি পরিস্থিতি দেখা যায়, যেখানে তিনি অভিবাসনপ্রত্যাশী মায়েদের কাছ থেকে তাদের শিশু সন্তানদের নিয়ে যাচ্ছিলেন। শিশুদের আলাদা করছিলেন। শিশুদের খাঁচায় রাখছিলেন। পরিবারগুলোর পৃথককরণ নিশ্চিত করেছিলেন। এটা সঠিক উপায় ছিল না।
আগামী নভেম্বরের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাইডেন লড়বেন তার ডেমোক্রেটিক পার্টির হয়ে। আর প্রায় সাত দশকপর রিপাবলিকান পার্টির হয়ে টানা দ্বিতীয়বার লড়বেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সিএনএনের আটলান্টা স্টুডিওতে দুজনের মধ্যে প্রথম বিতর্কটি হচ্ছে। বিতর্ক মঞ্চে উঠলে প্রথা অনুসারে করমর্দন করেননি বাইডেন ও ট্রাম্প।
বিতর্ক শুরুর কিছু পরেই নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বাইডেন ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ নিয়ে প্রশ্নের সম্মুখীন হন। এই ইস্যুতে বাইডেনের ডেমোক্র্যাট সমর্থকের একাংশের বিরোধিতার মুখে রয়েছেন বাইডেন। প্রশ্ন করা হয়, হামাস ও ইসরায়েল যুদ্ধ শেষ করতে বাইডেন কী করবেন। উত্তরে বাইডেন বলেন, একমাত্র হামাসই এই যুদ্ধের শেষ চায় না। বাইডেন ইসরায়েলের প্রতি তার জোরালো সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন। বলেন, হামাসকে নির্মূল করতে হবে।
২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বিতর্কেও কোভিড-১৯ বিধিনিষেধের কারণে করমর্দন করেননি দুজন। এরপর দুজনকে বিতর্কের নিয়ম বলে দেন সঞ্চালক।
বিতর্কের শুরুতে আসে অর্থনীতি ইস্যু। এরপর একে একে গর্ভপাত অধিকার, কর, স্বাস্থ্য সেবা এবং আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার নিয়ে বিতর্কে জড়ান বাইডেন ও ট্রাম্প। প্রসঙ্গক্রমে আসে করোনাভাইরাসের সময় নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপও।
এবার টেলিভিশন স্টুডিওতে বিতর্কটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আগের বিতর্কগুলোতে দর্শকদের উপস্থিতি থাকলেও এবার তেমনটা হচ্ছে না। ফলে দর্শকদের প্রতিক্রিয়া সরাসরি দেখার সুযোগ নেই। বাইডেনের প্রচার দলের অনুরোধে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এ ছাড়া এবারের বিতর্কে একজনের বক্তব্য দেওয়ার জন্য বরাদ্দ সময়ে অন্যজনের মাইক্রোফোন বন্ধ থাকবে। এতে সম্ভাব্য বিশৃঙ্খলা এড়ানো যাবে। ২০২০ সালে বাইডেন ও ট্রাম্পের প্রথম বিতর্কের সময় এ নিয়ে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছিল।