ফিলিস্তিনের গাজায় হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের উদ্ধারে নাটকীয় পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়েছিল ইসরায়েল। জিম্মিদের অবস্থান নিশ্চিত করতে উপত্যকায়র নুসেইরাত শরণার্থী ক্যাম্পে পাঠানো হয় গোয়েন্দাদের। সেখানে হিজাব-নিকাব পরে ফিলিস্তিনি মুসলিম সেজে তিন গুণ টাকায় বাসা ভাড়া নেন তারা। নিজেদের পরিচয় দেয় ইসরায়েলি হামলায় বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি হিসেবে। বাসা ভাড়া নেয়ার সময় তাদের সঙ্গে ছিল লেপ, তোশক, মাদুরসহ ঘরের নানা জিনিসপত্র। কথাও বলেছে আরবিতে, ঠিক গাজার বাসিন্দাদের মতোই।
অভিযানের আগের এমনই এক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেছে ইসরায়েলি গণমাধ্যম দ্য জিউস ক্রনিকল। ‘ইসরায়েলের জিম্মি উদ্ধারের ভেতরের গল্প’ শিরোনামে বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ৬ জুন এক তরুণীসহ চার জিম্মি উদ্ধারের মূল অপারেশনে যাওয়ার আগে দীর্ঘ ১৯ দিন নিবিড়ভাবে তথ্য সংগ্রহ ও বিচার-বিশ্লেষণ করে ইসরায়েলি বাহিনীর গোয়েন্দারা। আর এজন্য সাধারণ মানুষের বেশে নারী ও পুরুষ গোয়েন্দা নিযুক্ত করা হয়। বিষয়টি দৃঢ়ভাবে গোপন রাখে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)।
মূলত নুসেইরাত শরণার্থী ক্যাম্পে চার জিম্মি রয়েছে গোয়েন্দারা তথ্য পান ১২ মে । এরপর অভিযানের পরিকল্পনা যুদ্ধ মন্ত্রিসভায় তোলে আইডিএফ। অনুমোদন পাওয়ার পর শুরু হয় ছদ্মবেশে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের কাজ। একইসঙ্গে চলে ড্রোন ফুটেজ সংগ্রহ। পরে সেসব তথ্য ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণে সহযোগিতা নেয়া হয় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (এআই)।
জিম্মিদের অবস্থান নিশ্চিত হতে দীর্ঘ ১৯ দিন ক্যাম্পে অবস্থান করে গোয়েন্দারা। এর মাঝেই ইসরায়েলের বিশেষ ইয়ামাম পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের ২৮ কমান্ডো জিম্মিদের উদ্ধারে প্রশিক্ষণ নেয়। তবে ৬ জুন সেখানে অভিযান চালানোর আগের রাতেই গুপ্তচরদের ওই এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। ওই দিন বেলা ১১টায় শুরু হয় অভিযান।
প্রথমে আরগামনি নামে তরুণীকে উদ্ধার করে তাকে হেলিকপ্টারে ইসরায়েলে পাঠানো হয়। সেখানে হত্যা করা হয় হামাসের পাহারাদারকে। কিন্তু অন্য একটি ভবনে বাকি তিনজনকে উদ্ধারের অভিযানে গেলে সেখানে চরম হামলার মুখে পড়ে ইসরায়েলি কমান্ডোরা। সেখানে প্রায় ৩০ হামাস যোদ্ধা মেশিনগান ও গ্রেনেড দিয়ে চরম হামলা চালান। কিন্তু অভিযান ঘিরে হত্যা করা হয়েছে নুসেইরাত ক্যাম্পের নিরীহ প্রায় ৩০০ ফিলিস্তিনিকে।
এদিকে, যে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইসরায়েল এই অভিযান সফল করেছে, তা যুক্তরাষ্ট্র দিয়েছে। এই ধরনের তথ্য বিশ্লেষণের সক্ষমতা বা এআই প্রযুক্তি যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত ইসরায়েলের হাতে ছিল না। ওয়াশিংটন পোস্টের খবরে বলা হয়, গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর হামাসের ওপর গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে দেশটি উন্নত সফটওয়্যার ব্যবহার করে ড্রোন ফুটেজ, স্যাটেলাইট চিত্র ও ডেটা বিশ্লেষণের বড় সুবিধা দিয়েছে ইসরায়েলকে। এর সবই ছিল এআই নির্ভর। যার ফলেই জিম্মি উদ্ধারের এই অভিযান সফল হয়েছে বলে মনে করেন ইসরায়েলি এক কর্মকর্তা।