ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপির অন্দরের নানা টানাপোড়েনের খবর। প্রত্যাশা অনুযায়ী আসন না পাওয়ার জন্য দায়ী করা হচ্ছে মোদি ও অমিত শাহ’র নানা সিদ্ধান্তকে। উত্তর প্রদেশে দলের ব্যর্থতার দায় অনেকেই চাপাচ্ছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিতের ওপর। আবার অমিত শাহ’র সমর্থকরা দুষছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে। আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে আছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংও। এমন পরিস্থিতিতে সরকার টিকিয়ে রাখাই কি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে মোদির জন্য?
৩০৩ থেকে ২৪০। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের চেয়ে এবার ৬৩ আসন কমেছে নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপির। ফলে শরিকদের নানা আবদার মেনে নিয়েই গঠন করতে হচ্ছে জোট সরকার। নির্বাচনের আগে ৪০০ আসনের টার্গেট নিয়ে ঢাকঢোল পিটিয়ে মাঠে নামলেও, ফল প্রকাশের পর যেন থমকে গেছেন মোদি নিজেও। সেইসঙ্গে প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছে ১০ বছর ধরে একের পর এক সাফল্য পাওয়া দলটির ভেতরের নানা টানাপোড়েন ও কোন্দলের খবর।
নির্বাচনে প্রত্যাশা অনুযায়ী আসন না পাওয়ায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে ২০১৪ সালের পর থেকে নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহ’র নেয়া নানা সিদ্ধান্ত। ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর খবর, এরইমধ্যে কোনো কোনো মহল নতুন সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব অমিত শাহকে না দিতে মোদির ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। দ্য ইকোনমিস্টের নিবন্ধ /ভারতে গণতন্ত্রের জয় হয়েছে
বিশেষ করে, উত্তর প্রদেশে ভরাডুবির জন্য দায়ী করা হচ্ছে অমিত শাহকে। বলা হচ্ছে, অযোগ্যদের খেয়াল খুশিমতো প্রার্থী করা ও মনোনয়ন কেনাবেচা করেছেন অমিত শাহ। যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছের নেতারা রাজ্যটিতে হারের দায় চাপাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের ওপর।
তাদের অভিযোগ, এবারের লোকসভা নির্বাচনে হাত গুটিয়ে বসেছিলেন তিনি। ২০১৯ সালের মতো একচেটিয়া জয় নিয়ে মোদি ফের ক্ষমতায় আসুক, তা চাননি আদিত্যনাথ।
মোদি-অমিতের সঙ্গে আদিত্যনাথের সম্পর্কের তিক্ততা প্রথম প্রকাশ্যে আনেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তার বক্তব্য ধরে গত মাসে হিন্দুস্থান টাইমসের করা এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৮তম লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হলে নরেন্দ্র মোদি দায়িত্ব দিয়ে যাবেন অমিত শাহ’র হাতে। আর উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হবে আদিত্যনাথকে।
এদিকে ভোটের ফল নিয়ে মঙ্গলবার টুইট করে দলের নেতা-কর্মীদের শুভেচ্ছা জানান প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। সেখানে বিজেপির সভাপতি জে পি নাড্ডার প্রশংসা করা হলেও ছিল না নরেন্দ্র মোদির নাম। এতে গুঞ্জন ওঠে মোদির ওপর রাজনাথের বিরাগভাজন হওয়ার।
বিশ্লেষকরা বলছেন, শরিক দলনির্ভর সরকার হওয়ায় রাজনাথ সিংয়ের মতো নেতাদের এবার গুরুত্ব দিতেই হবে মোদিকে। আর ভোটের এমন ফলের পর দলের মধ্যে ‘প্রেশার গ্রুপ’ তৈরির শঙ্কা তো আছেই। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কেউ কেউ দাবি করছেন, এতো সংকট নিয়ে খুব বেশিদিন সরকার টিকিয়ে রাখতে পারবেন না নরেন্দ্র মোদি।