ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ৫৪৩টি আসনের চূড়ান্ত ও আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা করা হয়েছে। দেশটির নির্বাচন কমিশন ঘোষিত ফলাফলে দেখা গেছে সরকার গঠনের জন্য কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি।
কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ফল অনুযায়ী ২৪০টি আসনে জয় পেয়েছে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। ৯৯টি আসনে জয় পেয়েছে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস।
ভারতের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ৫৪৩ সদস্যের লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে একটি দল বা জোটের ২৭২টি আসন প্রয়োজন। প্রাপ্ত ফলাফলে কোনো দলই এককভাবে সরকার গঠনের সুযোগ পাচ্ছে না।
তবে ঘোষিত ফল অনুযায়ী জোটগতভাবে বিজেপি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্সের (এনডিএ) মোট আসন সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৯৩টি। অন্যদিকে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোটের মোট আসন সংখ্যা ২৩৩টি। ফলে জোটের দিক দিয়ে এনডিএ যেহেতু ম্যাজিক ফিগার পেয়েছে নিয়ম অনুযায়ী তারাই সরকার গঠন করবে।
তবে বুথফেরত জরিপগুলোর অনেক হিসাবনিকাশই উড়ে গেছে। বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্টতা তো পায়ইনি, বরং অনেক আসন হারিয়েছে। শুধু তাই নয়, মন্ত্রিসভার অনেক সদস্যও মুখ থুবড়ে পড়েছেন।
ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের মধ্যে জয় পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, সড়ক পরিবহন মন্ত্রী নিতিন গড়করি, পর্যটনমন্ত্রী কিষাণ রেড্ডি, ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর, শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মানসুখ মান্দাভিয়াসহ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী।
তবে সামনের সারির কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের বেশ কয়েকজন হেরে গেছেন। উত্তর প্রদেশের আমেথিতে সংখ্যালঘু বিষয়কমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি ১ লাখ ৬০ হাজার ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন কংগ্রেসের কিশোরীলাল শর্মার কাছে।
ইলেকট্রনিক ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী রাজিব চন্দ্রশেখর কংগ্রেসের শশী থারুরের কাছে ১৬ হাজার ভোটে হেরেছেন কেরালার থিরুভানানথাপুরমে। আবাসন ও নগর বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কৌশল কিশোর মোহনলালগঞ্জ হেরেছেন সমাজবাদী পার্টির প্রার্থী আর.কে. চৌধুরীর কাছে।
ভারী শিল্প বিষয়কমন্ত্রী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মহেন্দ্র নাথ পান্ডে ২১ হাজারের বেশি ভোটের ব্যধানে চান্দৌলি লোকসভা আসনে হেরেছেন সমাজবাদী পার্টির বীরেন্দ্র সিংয়ের কাছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্র টেনি, যার ছেলে ২০২১ সালের অক্টোবরে লখিমপুর খেরিতে সহিংসতার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন, তিনি লখিমপুর খেরি আসনে সমাজবাদী পার্টির উৎকর্ষ ভার্মার কাছে ৩৪ হাজার ভোটে হেরেছেন।
পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়ায় হেরে গেছেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকার। তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী অরূপ চক্রবর্তীর কাছে প্রায় ৩৩ হাজার ভোটে হারেন তিনি।
কেন্দ্রীয় উপজাতি বিষয়ক মন্ত্রী এবং বর্তমান সাংসদ অর্জুন মুণ্ডা ঝাড়খণ্ডের খুন্তি লোকসভা আসনে কংগ্রেস প্রার্থী কালীচরণ মুণ্ডার কাছে প্রায় দেড় লাখ ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন। সার ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ভগবন্ত খুবা বিদরে কর্ণাটকের মন্ত্রী ঈশ্বর খন্ড্রের ছেলে সাগর খন্ড্রের কাছে হেরেছেন।
কৃষি ও কৃষক কল্যাণ বিষয়ক কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী কৈলাশ চৌধুরী রাজস্থানের বারমেরে হেরেছেন। ভোটের ব্যবধান প্রায় সাড়ে চার লাখ। মৎস্য, পশুপালন ও দুগ্ধ পালনের কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী এল মুরুগান পরাজিত হয়েছেন তামিলনাড়ুর নীলগিরিস আসনে। ডিএমকে’র বিজয়ী প্রার্থীর সঙ্গে তার ব্যবধান ২ লাখ ৪০ হাজার ভোটের।
কোচবিহার লোকসভা আসনে বিজেপির নেতা ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিসিথ প্রামাণিক টিএমসির জগদীশ চন্দ্র বসুনিয়ার কাছে ৩৯ হাজার ভোটে হেরেছেন।
পশুপালন, মৎস্য ও ডেইরি বিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সঞ্জীব বলিয়ান মুজাফফরনগর লোকসভা আসনে সমাজবাদী পার্টির হরেন্দ্র সিং মালিকের কাছে ২৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে হেরেছেন।
গত ১৯ এপ্রিল থেকে ১ জুন পর্যন্ত সাত ধাপে চলা এই নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা ছিল প্রায় ৯৭ কোটি। আর লোকসভার ৫৪৩ আসনের বিপরীতে প্রার্থী ছিলেন ৮ হাজার ৩৬০ জন।