tramp12

দোষী সাব্যস্ত ট্রাম্প: বদলে যেতে পারে ভোটারের সমর্থন

প্রথমবারের মতো কোনো সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফৌজদারি অপরাধের মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আইন অনুযায়ী, আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়াতে তাঁর বাধা নেই। তবে ভোটের লড়াইয়ে তাঁর এই আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার প্রভাব কী হতে পারে, তা নিয়ে জল্পনার শেষ নেই। এমন প্রেক্ষাপটে জনমত জরিপ বলছে, আদালতের রায় অনেক মার্কিন ভোটারের মনোভাব পরিবর্তন করে দিতে পারে।

ট্রাম্পের নথি জালিয়াতির মামলার রায়-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে কোনো বিশেষ দলের সমর্থক নন, এমন কিছু ভোটার ও রিপাবলিকান সমর্থক ভোটারের সঙ্গে কথা বলেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। ওই ভোটাররা বলেছেন, ট্রাম্পকে সমর্থন দেওয়ার বিষয়ে এখন তাঁরা নিশ্চিত নন।

নিউ ইয়র্কের আদালতের গত বৃহস্পতিবারের ঐতিহাসিক রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে উল্লিখিত ভোটারদের প্রশ্ন করা হয়েছিল, এই রায় তাঁদের ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করবে কি না? প্রথমে কথা হয় জিম সুলিভান নামের এক রিপাবলিকান সমর্থকের সঙ্গে। ২০১৬ ও ২০২০ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছিলেন তিনি।

ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা জিম বলেন, ‘আমি ট্রাম্পের বড় ভক্ত বা সমর্থক নই। তবে এই মামলা সম্পর্কে যা পড়েছি, তাতে মনে হয়েছে, জুরি সদস্যদের দেওয়া রায় ছিল পূর্বনির্ধারিত। বিচারকও পক্ষপাতিত্ব করেছেন। এত আইনি জটিলতার মধ্যে ট্রাম্প কিভাবে সামনে এগিয়ে যাবেন, তা আমার কাছে স্পষ্ট নয়।

ভোটারদের কাছে বিকল্প হিসেবে জো বাইডেন রয়েছেন। তবে এটা আমার বা অন্যদের কাছে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য বিকল্প নয়।’ জিম সুলিভান বলেন, ‘আমি সম্ভবত ট্রাম্পকে আবার সমর্থন দিতে যাচ্ছি। বাইডেনের যে নীতি এবং তিনি যেভাবে নিজেকে পরিচালনা করেছেন, তাতে আমার মনে হয় না তিনি বেশিদিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব চালিয়ে নিতে পারবেন।’

৫৪ বছর বয়সী সুলিভান মনে করেন, ট্রাম্প প্রতিশোধপরায়ণ হবেন না। তাঁর মতে, রায়ের দিনটি মার্কিন ইতিহাসের একটি বাজে দিন। সীমা অতিক্রম করে ফেলা হয়েছে। সুলিভান আবার এ-ও বলেন, ‘একজন দোষী সাব্যস্ত অপরাধীকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে সমর্থনের কোনো সুযোগ নেই। ট্রাম্পকে আপিল করতে হবে এবং সেখানে জিততে হবে। তবে আমি বাইডেনকে ভোট দিচ্ছি না।’

এরপর বিবিসির সাংবাদিকের কথা হয় কানসাস অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকানঘেঁষা ভোটার ডিয়ানা লাস্কের সঙ্গে। ট্রাম্প গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জালিয়াতির যে মিথ্যা দাবি উত্থাপন করেছেন, তা তিনি সমর্থন করেন না।

৪১ বছর বয়সী ডিয়ানা বলেন, ‘এই বিচারটি ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার সময়ই বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। আমি মনে করি, বিচারকও পক্ষপাতদুষ্ট ছিলেন।’

ডিয়ানা বলেন, ‘এই মামলার রায় আমার ভোটকে প্রভাবিত করবে না। তবে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী রবার্ট কেনেডি জুনিয়রকে ভোট দেব। কারণ আমি দুজন শয়তানকে ভোট দিতে দিতে ক্লান্ত। যত দিন দেশের সর্বোচ্চ পদের উপযোগী প্রার্থী না মিলবে, তত দিন কোনো শয়তানকেই ভোট দেওয়া যাবে না।’

নিউ ইয়র্কের বাসিন্দা ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক ইয়ান গটস ২০১৬ সালে ট্রাম্পকে ভোট দিলেও ২০২০ সালে অবস্থান পাল্টান। ৫৯ বছর বয়সী গটস বলেন, ‘ট্রাম্পের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার পর নিউ ইয়র্কে সবাই উল্লাস করছিল। যুক্তরাষ্ট্রের অন্য কোথাও হলে এই মামলার শুনানিই হতো না। এটি যুক্তরাষ্ট্রে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে গভীর মেরুকরণের বিষয়টি স্পষ্ট করেছে।’

ইয়ান গটসের এখনো মনে হচ্ছে, নভেম্বরে ট্রাম্পই জিতবেন। এই রায়ে কিছু আসবে যাবে না। তবে তিনি নিজে দোটানায় পড়ে গেছেন—কাকে ভোট দেবেন। গটস বলেন, ‘একজন যিনি স্পষ্টতই বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালনের জন্য অতি বয়স্ক এবং আরেকজন দোষী সাব্যস্ত অপরাধী। মনে হয় না আমি ভোট দেব।’

বিবিসির কথা হয় নর্থ ক্যারোলাইনা অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা ৫৯ বছর বয়সী ক্যাট লুইসের সঙ্গে। গত বছর রিপাবলিকান পার্টি ছেড়ে দিলেও ট্রাম্পের প্রতি এখনো প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তিনি।

লুইস বলেন, ‘ট্রাম্প শতকোটি ডলারের ব্যবসা পরিচালনা করেন। ব্যক্তিগত আইনজীবীকে অর্থ দেওয়ার প্রক্রিয়ার কারণে তিনি দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। আর মাইকেল কোহেন (ট্রাম্পের সাবেক আইনজীবী) ও স্টর্মি ড্যানিয়েলসের (সাবেক পর্নো তারকা) মতো অনির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।’

ক্যাট লুইস বলেন, কোহেন তাঁর নিয়োগকর্তার কাছ থেকে হাজার হাজার ডলার হাতিয়ে নিয়েছেন, কংগ্রেসে মিথ্যা বলেছেন এবং এই মামলায় আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছেন। আর ড্যানিয়েলস একাধিকবার তাঁর গল্প পাল্টেছেন।

লুইসের ভাষ্য, ‘এই বিচার শুধু আমাদের বিচারব্যবস্থাকে উপহাস করেনি, বরং আমাদের কোনো সুষ্ঠু নির্বাচনব্যবস্থা না থাকার চিত্রও তুলে ধরেছে। এই রায়ের কারণে আমি ট্রাম্পকে ভোট দিতে আগ্রহী হয়ে উঠেছি। কারণ অভিজাত বামপন্থী এবং অভিজাত রিপাবলিকানরা তাঁকে সমর্থন দেয় না। তাই আমার মনে হয়েছে, আমার মতো মানুষদের জন্য তিনিই সেরা প্রার্থী।’

ক্যালিফোর্নিয়ার ১৮ বছর বয়সী পল ক্র্যামার আগামী নভেম্বরে সমর্থন দেওয়ার জন্য ‘সঠিক প্রার্থীর’ সন্ধানে আছেন এখনো। তিনি ট্রাম্পের বিরুদ্ধে রায়কে ঐতিহাসিক মনে করেন। ক্র্যামারের মতে, ‘কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়, এটি এই রায়ের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়েছে। যথাযথ প্রক্রিয়ায় বিচার হয়েছে, জুরি সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে। পুরো আইনি প্রক্রিয়া ছিল নিরপেক্ষ আর এমনটাই হওয়া উচিত।’

ক্র্যামার আরো বলেন, ‘জবাবদিহি জরুরি, তবে এই বিচারের সময় ও ধরনটা রাজনৈতিক এজেন্ডার সঙ্গে সম্পর্কিত বলে মনে হচ্ছে। যাঁরা রায়ের সঙ্গে একমত নন, তাঁদের বিচারব্যবস্থায় আস্থা নেই। ট্রাম্প সমর্থকদের এমনই মনে করেন। তাঁর ভাষ্য, এই মুহূর্তে ট্রাম্পের সমর্থনের ভিত আরো শক্তিশালী হচ্ছে এবং বামপন্থীরা আরো দূরে সরে যাচ্ছে। তাই বিভাজন ক্রমেই বাড়ছে।’

ক্র্যামার বলেন, ‘এই রায় আমার ভোটকে প্রভাবিত করেনি, বরং আমার ভোট দেওয়ার ইচ্ছাকে শক্তিশালী করেছে।’

Scroll to Top