রাফায় মাত্র তিনটি হাসপাতাল রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং অধিক চিকিৎসা সুবিধা সম্পন্ন হাসপাতালটি খালি করে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় নগরী রাফায় এখনও পূর্ণ মাত্রায় অভিযান শুরু করেনি ইসরায়েল। কিন্তু তার আগেই নগরীর হাসপাতালগুলোতে রোগী উপড়ে পড়ছে।
চিকিৎসকরা জানান, রাফায় ১০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়ে আছে। রাফার পূর্বাংশে গত সোমবার থেকে ‘সীমিত আকারে’ আকাশ হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল।
সেখানে তিনটি হাসপাতাল রয়েছে। তারমধ্যে মধ্যে সবচেয়ে বড় আবু ইউসেফ আল-নজর হাসপাতালের বেশিরভাগ কার্যক্রম বন্ধ রেখে সেটি খালি করে দিতে হয়েছে। কারণ, ইসরায়েলি বাহিনীর সেখানকার কর্মীদের সরে যেতে নির্দেশ দিয়েছে। তাছাড়া, হাসপাতালটির কাছেই লড়াই চলছে।
গাজায় এখন একমাত্র এই হাসপাতালটিতে কিডনি জটিলতায় আক্রান্তদের জন্য ডায়ালাইসিস সেবা চালু আছে।
ইসরায়েলি বাহিনী রাফার দিকে অগ্রসর হওয়ায় পাশের নগরী খান ইউনিসের ইউরোপিয়ান গাজা হসপিটালে রাফা থেকে আর রোগী পাঠানো যাচ্ছে না। রাফা থেকে গুরুতর রোগীদের অস্ত্রোপচারের জন্য খান ইউনিসের ওই হাসপাতালে পাঠানো হতো।
ইসরায়েলি বাহিনীর কারণে রাফা এবং কেরেম শালম সীমান্ত ক্রসিংও রাফা বাসিন্দাদের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে।
রাফার আরেকটি হাসপাতাল আমিরাতি মেটারনিটি হসপিটাল। যেখানে প্রতিদিন বহু মা সন্তান প্রসব করছেন।
আর কুয়েতি স্পেশালিস্ট হসপিটালের কর্মীরা জরুরি অস্ত্রোপচার করতে হিমশিম খাচ্ছে। কারণ ছোট্ট এই হাসপাতালটিতে ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামের প্রচণ্ড অভাব। চিকিৎসা কর্মীও হাতে গোণা।
গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে সেখানে মাত্র চারটি ‘ইনটেনসিভ কেয়ার বেড’ ছিল। হাসপাতালটির একজন চিকিৎসক বলেন, “যেভাবেই বলি না কেন, এখানকার অবস্থা আসলে এক কথায় বিপর্যয়কর।”
ডা. জামাল আল-হামস বিবিসিকে আরও বলেন, “দুর্ভাগ্যজনকভাবে কুয়েতি হসপিটালটি খুবই ছোট একটি হাসপাতাল। সেখানে রোগ নির্ণয়ের কোনো ব্যবস্থা নেই।
“এমনকি ইসরায়েলের গোলা বর্ষণের কারণে এখানকার একমাত্র এক্স-রে মেশিনটিও কাজ করছে না। এটি ঠিক করারও কোনো উপায় নেই। কারণ, ক্রসিং বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।”
হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী ডা. ইউসেফ আবু আল-রিশ বলেন, রাফায় চিকিৎসার যে যৎসামান্য সুযোগ রয়েছে সেটাই এখন গাজার লাইফলাইন। গাজায় গুরুতর আহত এবং অসুস্থ রোগীদের প্রাণ বাঁচাতে এটাও আর খুব বেশিদিন সচল থাকবে না।
“আবু ইউসেফ আল-নজর হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর রাফা প্রশাসনের হাতে আসলে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার বাস্তবিক আর কোনো ব্যবস্থা নেই। আর লোকজন ইউরোপিয়ান গাজা হসপিটালে যেতে পারছে না। বেশ কয়েকটি অস্থায়ী হাসপাতাল গঠন করা হয়েছে। কিন্তু যথাযথ অবকাঠামো এবং চিকিৎসা সক্ষমতা না থাকার কারণে ওইসব হাসাপাতাল এইসব সেবা দিতে পারছে না।
“কুয়েতি হাসপাতালটি খুবই ছোট। তারা জরুরি সেবা দিতে পারছে না। আমরা চেষ্টা করছি সেটির সক্ষমতা বাড়াতে।”