গাজায় অনাহারকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি প্রধান জোসেফ বোরেল। তিনি অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে সহায়তার অপ্রতুল প্রবেশকে ‘মানবসৃষ্ট’ বিপর্যয় হিসাবে বর্ণনা করেছেন।
আজ বুধবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
পবিত্র রমজান মাসেও গাজায় হামলা বন্ধ রাখেনি ইসরায়েল। স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জার পাশাপাশি হাসপাতাল- সবখানেই হামলা করা হচ্ছে। এতে করে গাজার স্বাস্থব্যবস্থা রীতিমতো ভেঙে পড়েছে। এর সঙ্গে ভূখণ্ডটিতে দেখা দিয়েছে তীব্র মানবিক সংকট। এমন অবস্থায় গাজায় অনাহারকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন ইইউর পররাষ্ট্র নীতি প্রধান। জোসেফ বোরেল ভূখণ্ডে সাহায্য প্রবেশের অভাবকে মানবসৃষ্ট বিপর্যয় হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুদ্ধে জর্জরিত গাজা উপত্যকায় দুর্ভিক্ষের প্রান্তে থাকা ফিলিস্তিনিদের জন্য ২০০ টন খাদ্যদ্রব্যবাহী একটি জাহাজ ভূমধ্যসাগরের উপকূলবর্তী দেশ সাইপ্রাস থেকে রওনা হয়েছে।
কিন্তু জাতিসংঘ বলেছে, স্থলপথে সাহায্য বিতরণের বিকল্প হতে পারবে না ওই জাহাজ। এদিকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দক্ষিণ গাজায় আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।
এই অঞ্চলে সাহায্য সরবরাহের দ্রুততম ও সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো রাস্তা দিয়ে সহায়তা পাঠানো। কিন্তু সাহায্য সংস্থাগুলো বলছে, ইসরাইলি নিষেধাজ্ঞার মানে হচ্ছে— যে পরিমাণ সাহায্য প্রয়োজন, তার কেবল একটি ভগ্নাংশই সেখানে প্রবেশ করছে।
আর তাই সড়কপথে সহায়তা পাঠানোর পরিবর্তে সমুদ্র এবং আকাশ থেকে সহায়তা সরঞ্জাম নিচে ফেলার মতো বিকল্প বিভিন্ন পন্থার দিকে মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। ইসরাইল বলেছে, গাজার খাদ্য সংকটের জন্য তারা দায়ী নয়; কারণ তারা দক্ষিণে দুটি ক্রসিং দিয়ে সাহায্য প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে।
এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দক্ষিণ গাজায় আক্রমণ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।
এই অঞ্চলে সাহায্য পাওয়ার দ্রুততম, সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল রাস্তা। কিন্তু সাহায্য সংস্থাগুলো বলছে, ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞা মানে যা প্রয়োজন তার একটি অংশ প্রবেশ করা।
ইসরায়েল বলেছে যে গাজার খাদ্য সংকটের জন্য তারা দায়ী নয়। কারণ তারা দক্ষিণে দুটি ক্রসিং দিয়ে সাহায্যের অনুমতি দিচ্ছে।
তবে মঙ্গলবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভাষণ দিতে গিয়ে বোরেল বলেন, কার্যকর স্থলপথের অভাবের কারণে এই অঞ্চলে মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে।
তিনি বলেন, \’আমরা এখন একটি জনগোষ্ঠীর মুখোমুখি, যারা বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করছে। গাজায় মানবিক সহায়তার প্রয়োজন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন এটি সম্ভব করার জন্য যতটা সম্ভব কাজ করছে।\’
বোরেল বলেন, \’মানবিক সংকট মনুষ্যসৃষ্ট এবং যখন আমরা সমুদ্র, আকাশপথে সহায়তা প্রদানের বিকল্প উপায় খুঁজি, তখন আমাদের মনে করতে হবে যে আমাদের এটি করতে হবে। কারণ রাস্তার মাধ্যমে সহায়তা প্রদানের প্রাকৃতিক উপায় কৃত্রিমভাবে বন্ধ।\’
ইইউর পররাষ্ট্র নীতি প্রধান জোসেফ বোরেল বলেন, \’অনাহারকে একটি যুদ্ধের হাত হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে এবং যখন আমরা ইউক্রেনে এই ঘটনার নিন্দা করেছি, তখন গাজায় যা ঘটছে তার জন্য আমাদের একই শব্দ ব্যবহার করতে হবে।\’
জাতিসংঘ গাজার জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ, অন্তত ৫ লাখ ৭৬ হাজার মানুষ দুর্ভিক্ষ থেকে এক ধাপ দূরে রয়েছে বলে সতর্ক করার পর তার এ মন্তব্য এসেছে।
ওই অঞ্চলের হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, গত দুই সপ্তাহে সেখানকার হাসপাতালে অপুষ্টি ও পানিশূন্যতার কারণে অন্তত ২৭ জন মারা গেছে, যাদের মধ্যে অনেক শিশু রয়েছে।
সাহায্য নিয়ে স্প্যানিশ জাহাজ ওপেন আর্মস মঙ্গলবার সকাল ৯টায় ২০০ টন খাদ্য সরবরাহ বোঝাই একটি বার্জের ঠিক আগে লার্নাকা থেকে যাত্রা করে।
মার্কিন সামরিক জাহাজ জেনারেল ফ্রাঙ্ক এস বেসন একটি অস্থায়ী ঘাট নির্মাণের জন্য সরঞ্জাম বহন করে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে যাত্রা করছে।
সূত্র: বিবিসি।