মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের পন্নাজিওন শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার দাবি করেছে দেশটির বিদ্রোহী গোষ্ঠি আরাকান আর্মি। তারা বলছে, গত সোমবার শহরে থাকা সেনাবাহিনীর ৫৫০তম ইনফ্যানট্রি ব্যাটালিয়নকে পরাজিত করে তারা শহরটির নিয়ন্ত্রণ নেয়।
থাইল্যান্ডভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ইরাবতি বলছে, পন্নাজিওনের অবস্থান রাখাইনের রাজধানী সিত্তে থেকে মাত্র ৩৩ কিলোমিটার। এই মুহুর্তে সিত্তে ঘিরে ফেলেছে আরাকান আর্মি।
বুধবার আরাকান আর্মি জানিয়েছে, পন্নাজিওনের দখল করা সেনাবাহিনীর সদরদপ্তর থেকে জান্তা বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্যের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এদের মধ্যে সেনাবাহিনীর দুই জন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাও আছেন। এরা হলেন, কর্নেল মিও মিন কো কো এবং মেজর সাও তয়ে। এছাড়াও জান্তা বাহিনীর ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন ২০৮ এর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফিও থু আউঙও নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে বিদ্রোহী গোষ্ঠিটি।
এই সেনা সদর দপ্তরটির নিয়ন্ত্রণ নিতে গত ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪ মার্চ পর্যন্ত ১৩ দিন সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ সময় জান্তা বাহিনীও ভারি গোলা বর্ষণ করে। পাশাপাশি চালানো হয় বিমান হামলা। এর আগে এই সেনা সদর দপ্তরের পাশের একটি পুলিশ স্টেশন দখল করে আরাকান আর্মি।
সেনা সদর দপ্তরটি থেকে বিপুল পরিমাণে গোলা বারুদ ও অস্ত্র জব্দ করার কথা জানিয়েছে আরাকান আর্মি। একই সঙ্গে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সেনা সদস্যকে আটক করার তথ্যও জানিয়েছে বিদ্রোহী গোষ্ঠিটি। তারা বলছে, যুদ্ধের সময় যে সব সেনা সদস্য সাদা পতাকা উঁচু করে আত্মসমর্পন করেছে তাদের ও তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যা করা হয়নি।
গত বছরের ১৩ নভেম্বর থেকে উত্তর রাখাইন ও প্রতিবেশী দক্ষিণ চিন রাজ্যে মিয়ানমার জান্তা বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়ে আসছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। গোষ্ঠীটি বলছে, রাখাইনের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শহর ও সেনা সদরদপ্তরের দখল নিয়েছে তারা।
সামরিক জান্তা ও বিদ্রোহীদের এ সংঘর্ষে বাংলাদেশ সীমান্তেও উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। মিয়ানমার থেকে আসা গোলার আঘাতে একজন বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। দিনভর সংঘর্ষ, আর ওপার থেকে ভেসে আসা তীব্র গোলা–বারুদের শব্দে আতঙ্ক কাটছে না মিয়ানমার সীমান্তে থাকা বাংলাদেশি জনপদগুলোতে।
আরাকান আর্মির সঙ্গে চলমান সংঘাতে টিকতে না পেরে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয় মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিজিপি, সেনা সদস্যসহ বিভিন্ন বিভাগের ৩৩০ কর্মকর্তা। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি দুই ধাপে সমুদ্রপথে তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়।