গাজায় প্রাণহানির সংখ্যা ছাড়াল সাড়ে ৩০ হাজার

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ ভূখণ্ড গাজায় পাঁচ মাস ধরে চলা ইসরায়েলের অবিরাম হামলায় আরও ১২৪ জন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে অঞ্চলটিতে ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩০ হাজার ৫০০ ছাড়িয়ে গেছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে সোমবার এই তথ্য দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।

গত বছরের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায়। হামাসের যোদ্ধাদের আক্রমণে ১২০০ জন নিহত হয় ও তারা ২৫৩ জনকে ধরে গাজায় নিয়ে জিম্মি করে বলে ভাষ্য ইসরায়েলের।

অক্টোবরের ওইদিন থেকেই গাজায় ব্যাপক ও ভয়াবহ হামলা শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। তারা হামাসের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ ঘোষণা করে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীটিকে নির্মূল করার প্রত্যয় জানায়। সবদিক থেকে গাজা অবরোধ করে ভূখণ্ডটির বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।

তারপর থেকে গত প্রায় পাঁচ মাস ধরে ইসরায়েলির বাহিনীর স্থল, আকাশ ও নৌ হামলায় ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ ভূখণ্ডটিতে হামলা চালালে গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ঘরবাড়ি হারিয়ে গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার প্রায় সবাই উদ্বাস্তু হয়ে গেছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সোমবারের আগের সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ১২৪ জন নিহত হয়েছেন। সবমিলিয়ে ৭ অক্টোবরের পর থেকে বিগত ১৪৬ দিনে ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩০ হাজার ৫৩৪। এই সময়ে আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৭১ হাজার ৯৮০ জন।

এদিকে ত্রাণপ্রবেশ একপ্রকার বন্ধ করে দেওয়ায় গাজায় তীব্র খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। এতে অপুষ্টিতে ভুগে মারা যাচ্ছে অঞ্চলটির শিশুরা। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফসহ শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করা কয়েকটি সংস্থা।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা জানিয়েছে, রাফাহ শহরের আবু ইউসুফ আল-নাজ্জার হাসপাতালে এক শিশুর মৃত্যুর পর অপুষ্টি এবং অপর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবার অভাবে মারা যাওয়া ফিলিস্তিনি শিশু বেড়ে ১৬ জনে দাঁড়িয়েছে। উত্তর গাজা উপত্যকার কামাল আদওয়ান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গত রোববার জানায়, অপুষ্টি এবং পানিশূন্যতায় ভোগা ছয় শিশু নিবিড় পরিচর্যায় রয়েছে।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, উত্তর গাজা উপত্যকার বাসিন্দারা দুর্ভিক্ষের কবলে পড়েছেন। প্রয়োজনীয় পানি ও খাদ্যের অভাবে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর সঙ্গে লড়তে হচ্ছে তাঁদের। তবে এতে সবচেয়ে বাজে অবস্থায় রয়েছে শিশুরা। ফলে অপুষ্টি ও পানিশূন্যতার মতো সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে এসব অঞ্চলের শিশুরা।

এছাড়া গাজায় চিকিৎসার অভাবে শিশু মৃত্যুর সংখ্যাও উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের ১৫০ দিনের মধ্যে ১৫৫টি স্বাস্থ্যপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়েছে। এ ছাড়া ৩২টি হাসপাতাল ও ৫৩টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র পরিষেবার আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে অন্তত ১২৬টি অ্যাম্বুলেন্সকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে ইসরায়েল।

Scroll to Top