মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চির বাড়ি বিক্রির নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। গত বৃহস্পতিবার তাঁর বাড়িটি নিলামে তোলার রায় দিয়েছেন মিয়ানমারের সর্বোচ্চ আদালত। থাইল্যান্ড থেকে প্রকাশিত মিয়ানমারের ইরাবতি সংবাদমাধ্যমের বরাতে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
আর এক সপ্তাহ পরই অং সান সু চির কারাবাসের ৩ বছর পূর্তি হচ্ছে যাচ্ছে। এ সময়ে জান্তা সরকার নিয়ন্ত্রিত আদালতের এ রায়কে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। চলতি বছরের মার্চে সু চির পৈত্রিক এ বাড়িটির নিলাম হওয়ার কথা রয়েছে। বাড়িটির আনুমানিক দাম ধরা হয়েছে ৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
রয়টার্স বলছে, রায় ঘোষণার পর এখন পর্যন্ত সু চির আইনজীবীরা করাবন্দী নেত্রীর সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলতে পারেননি।
২০২১ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সুচির নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতা দখল করে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা। ওই সময়েই সু চিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর বিভিন্ন অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সুচির ৩৩ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে নেপিদো কারাগারের নির্জন কক্ষে রয়েছেন অং সান সু চি।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সু চির পৈত্রিক বাড়ির মালিকানা নিয়ে সু চি ও তাঁর বড় ভাইয়ের মধ্যে কয়েক দশকের পারিবারিক বিরোধ রয়েছে। এর আগে ২০০০ সালে সমারিক সরকারের সময়ে সু চি যখন গৃহবন্দি ছিলেন, তখন তাঁর ভাই উ অং সান উ বাড়িটির মালিকানা দাবি করে মামলা করেছিলেন। পরে আদালতে মামলাটি খারিজ হয়ে গেলে তিনি বাড়িটির যৌথ মালিকানা দাবি করে আরেকটি মামলা করেন। সেই মামলায় ২০১৬ সালে ইয়াঙ্গুনের একটি আদালত বাড়িটির অর্ধেক জমির মালিক অং সান সু চি ও বাকি অর্ধেক জমির মালিক তাঁর ভাইয়ের বলে রায় দেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালে উ অং সান উ উচ্চ আদালতে আপিল করেন। আপিলে তিনি বাড়িটি নিলামে তুলতে এবং মূল্যর একটি অংশের দাবি করেন। অবশেষে বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট উ অং সান উর পক্ষে রায় দিলেন।
অং সান সু চির এ পৈত্রিক বাড়িটি ইয়াঙ্গুনের ইনিয়া লেকের তীরে অবস্থিত। বাড়িটি মিয়ানমারের গণতন্ত্রের লড়াইয়ের জন্য একটি ঐতিহাসিক স্থান এবং জাতীয় প্রতীক হিসেবে পরিচিত। এর আগে সামরিক শাসনামলে বাড়িটির সামনে হাজার হাজার মানুষ জড়ো হতেন সু চির বক্তব্য শোনার জন্য। ঔপনিবেশিক আমলের এ বাড়িটির সামনে দাঁড়িয়েই গণতন্ত্র ও বাকস্বাধীনতার পক্ষে বক্তব্য দিতেন নোবেলজয়ী এ নেত্রী।