যুক্তরাষ্ট্রের আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যান্টিস।
২০২৪ সালের নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য এই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার অংশ নেয়ার কথা ছিল। রিপাবলিকান প্রার্থী হওয়ার জন্য তাকেই সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সবচেয়ে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এ লক্ষ্যে প্রচার-প্রচারণা শুরু করলেও নিউ হ্যাম্পশায়ারে রিপাবলিকান প্রাইমারি নির্বাচনের আগে রোববার (২১ জানুয়ারি) হঠাৎ করেই সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন তিনি।
এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
গত রোববার বিকেলে এক্সে (আগে যার নাম ছিল টুইটার) প্রায় পাঁচ মিনিটের দীর্ঘ একটি ভিডিওতে ডিসান্টিস বলেছিলেন, যে তার প্রচারাভিযান ‘মাঠে সমস্ত কিছু ছেড়ে দিয়েছে। যদি একটি অনুকূল ফলাফল তৈরি করার জন্য আমি কিছু করতে পারি- আরও প্রচারণা বন্ধ, আরও সাক্ষাৎকার- আমি তা করব।’
ফ্লোরিডার এই গভর্নর বলেন, তিনি ট্রাম্পকে সমর্থন করছেন, যিনি আইওয়াতে প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৫১ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হওয়ার পরে স্পষ্টভাবে এগিয়ে আছেন।
ডিসান্টিস বলেছিলেন যে এটি স্পষ্ট হয়ে গেছে যে বেশিরভাগ রিপাবলিকান ভোটার ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আরেকটি সুযোগ দিতে চান’।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে ‘মতবিরোধের’ কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, বাইডেনের চেয়ে ট্রাম্প ‘উচ্চতর’ ছিলেন, যিনি নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক মনোনীত প্রার্থী হতে প্রায় নিশ্চিত। আমি রিপাবলিকান মনোনীত প্রার্থীকে সমর্থন করার জন্য একটি অঙ্গীকারে স্বাক্ষর করেছি এবং আমি সেই অঙ্গীকারকে সম্মান করব।
সাংস্কৃতিক রক্ষণশীলতার প্রশ্নে বেশ আক্রমণাত্মক অবস্থান নিয়ে ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডিস্যান্টিস যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে রিপাবলিকান পার্টির কট্টর রক্ষণশীলদের মধ্যে তিনি বেশ জনপ্রিয়, অনেকে তাকে রীতিমত রক-তারকার মতো ভক্তি করেন। তবে বামপন্থীরা তাকে একজন দক্ষিণ-পন্থী চরমপন্থী হিসেবে বর্ণনা করে।
একসময় তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তার রাজনৈতিক গুরু মানতেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে তাদের মধ্যে সম্পর্কের বেশ অবনতি ঘটে। রিপাবলিকান পার্টির মনোনয়ন পাওয়ার জন্য এই সাবেক গুরু-শিষ্যের মধ্যে জোর লড়াই হবে বলে মনে করা হলেও শেষ পর্যন্ত সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিলেন ডিস্যান্টিস।
রন ডিস্যান্টিস হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে প্রথম নির্বাচিত হয়েছিলেন ২০১২ সালে। মাত্র ছয় বছর পর ২০১৮ সালে তিনি ফ্লোরিডার গভর্নর নির্বাচিত হন।
ডিস্যান্টিসের জন্ম ১৯৭৮ সালে ফ্লোরিডার জ্যাকসনভিলে। তিনি ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি বাস্কেটবল টিমের অধিনায়ক ছিলেন। পরে তিনি হার্ভার্ড ল স্কুলেও পড়েছেন। সেখানে দ্বিতীয় বর্ষে থাকার সময় তিনি মার্কিন নৌবাহিনীতে কমিশন্ড অফিসার হিসেবে যোগ দেন। সেখানে তিনি নৌবাহিনীর আইন শাখা জাজ এডভোকেট জেনারেল (জ্যাগ) বিভাগে কাজ করেন। এই বিভাগে থাকার সময় তাকে গুয়ানতানামো বন্দী শিবিরের বন্দীদের নিয়ে কাজ করতে হয়েছে। এছাড়া ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের যে নেভি সীলস টিম মোতায়েন করা হয়েছিল, তাদেরও আইন উপদেষ্টা ছিলেন তিনি।
ডিস্যান্টিসকে ২০১০ সালে মার্কিন নৌবাহিনী থেকে সসম্মানে বিদায় দেওয়া হয়। তবে এরপরও তিনি নৌবাহিনীর একজন রিজার্ভ সেনা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এরকম একটা সময়েই স্ত্রী কেসির সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ হয়। কেসি তখন স্থানীয় একটি টেলিভিশন চ্যানেলের রিপোর্টার।
নৌবাহিনী থেকে অবসরে যাবার পর মি. ডিস্যান্টিস একজন ফেডারেল কৌসুলি হিসেবে কাজ শুরু করেন। ২০১২ সালে তিনি ফ্লোরিডার একটি আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হন। এটিকে ফ্লোরিডার সবচেয়ে বেশি রক্ষণশীল প্রভাবিত আসন বলে বিবেচনা করা হয়।
কংগ্রেসে পাঁচ বছর কাজ করার পর ২০১৮ সালে তিনি কট্টর রক্ষণশীল কংগ্রেস সদস্যদের নিয়ে ‘ফ্রিডম ককাস’ নামে একটি গ্রুপ গঠন করেন। এসময় তিনি ফ্লোরিডার গভর্নর পদে দাঁড়ানোর ইচ্ছাও প্রকাশ করেন। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে প্রার্থী হিসেবে সমর্থন দেন।
ডিস্যান্টিস ফ্লোরিডার গভর্নর হিসেবে শপথ নেন ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে। যেভাবে তিনি ফ্লোরিডায় কোভিড মহামারির মোকাবেলা করেন, সেজন্যে শুরুতেই তিনি জাতীয়ভাবে সবার নজর কাড়েন। মহামারির শুরুতেই তিনি পুরো রাজ্য জুড়ে লকডাউন জারি করেছিলেন, তবে শীঘ্রই আবার তিনি বিধি-নিষেধ তুলে নিতে থাকেন। ২০২০ সালের জুলাই মাসে যখন যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড সংক্রমণের হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে, তখন তিনি ফ্লোরিডায় স্কুল খুলে দেয়ার নির্দেশ দেন।
ফ্লোরিডায় তার পর থেকে তিনি আগ্নেয়াস্ত্র রাখার অধিকার, মৃত্যুদণ্ডের সাজা প্রশ্ন আরও কঠোর দক্ষিণপন্থী অবস্থান নেন, এবং অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালান। তিনি ছয় সপ্তাহের বেশি গর্ভাবস্থায় গর্ভপাত নিষিদ্ধ করেন।
রন ডিস্যান্টিস ডিজনি কোম্পানির সঙ্গেও দীর্ঘ আইনি বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। এসবের ফলে তিনি সম্ভাব্য রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে বেশ আলোচিত হতে থাকেন।
তবে তার রাজনৈতিক পরিচিত এবং খ্যাতি যখন বাড়তে শুরু করে, তখন আবার সাবেক রাজনৈতিক গুরু ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে। মি. ট্রাম্প বলতে শুরু করেন, ২০১৮ সালে রন ডিস্যান্টিস যে গভর্নর নির্বাচিত হয়েছেন, সেটা তার সমর্থনের কারণেই। ডোনাল্ড ট্রাম্প রন ডিস্যান্টিসকে নিয়ে নানা অপমানসূচক মন্তব্যও করেন। তার বিভিন্ন নীতির কড়া সমালোচনা করেন।