বাস্তব ও ফিল্মের অদ্ভূত মিশেলে তৈরি স্বঘোষিত আধ্যাত্মিক গুরু গুরমিত রাম রহিম সিং। সদা মুখে স্রষ্টার নাম জপতে জপতে ক্লান্ত নয়, বরং গোলাপি রঙের বাহারি জোব্বা চাপিয়ে মিউজিক ভিডিও-র তালে তালে নাচতে ব্যস্ত থাকেন তিনি। কখনও আবার ঝলমলে পোশাকে প্রকাণ্ড মোটরবাইকের শোভাযাত্রা নিয়ে ঢুকে পড়েছেন ধর্মসভায়।
গতকাল তিনি ধর্ষণের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় ভারতের হরিয়ানা, পাঞ্জাব, রাজস্থানের মতো বিশাল এলাকা কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। বিক্ষোভ হয় রাজধানী দিল্লিতেও। প্রাণ হারান কমপক্ষে ৩২ জন। কয়েক হাজার সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হরিয়ানার একটি স্টেডিয়ামকে জেল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
এখন স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠেছে ভারতে কেন এতো জনপ্রিয় রাম রহিম?
জানা যায়, দলিত ও পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষের মধ্যে খুব জনপ্রিয় রাম রহিম। রক্তদান শিবির, বৃক্ষরোপণের মতো কাজ করে থাকেন নিয়মিত। অনলাইনে যোগের প্রশিক্ষণও দেন তিনি। মেয়েদের জন্য হোস্টেল, হাসপাতাল এবং যৌনকর্মীদের পুনর্বাসনের মতো কাজ করেন। ২০০৩ সালে বিশ্বের বৃহত্তম রক্তদান শিবিবের আয়োজন করে গিনেজ রেকর্ড করে ডেরা সাচা।
১৯৯০ সালে মাত্র ২৩ বছর বয়সে ডেরা সাচা সওদার প্রধানের দায়িত্ব পান গুরমিত। সে বছর তৎকালীন ডেরা-প্রধান সতনাম সিং একটি সভায় তাকে ‘গুরমিত রাম রহিম’ নামে পরিচিত করিয়ে দেন। প্রতিষ্ঠানের বাড়বাড়ন্তের সঙ্গে-সঙ্গেই বাড়তে থাকে গুরমিতের জনপ্রিয়তা। পাঞ্জাব ও হরিয়ানার শহর ও গ্রামাঞ্চলে ডেরা সাচার বহু কেন্দ্র রয়েছে। হরিয়ানার সিরসায় প্রায় ৮০০ একর জমির উপর ডেরার ক্যাম্পাস রয়েছে। তার সংস্থা এমএসজি ব্র্যান্ডের অর্গ্যানিক মধু, নুডলস নাকি ভারত জুড়ে বিখ্যাত।
রাম রহিমের দুই মেয়ে ও এক ছেলে। পরে একটি মেয়েকে দত্তক নেন তিনি। প্রত্যেকেই বাবার মতো নামের শেষে ‘ইনসান’ ব্যবহার করেন।
‘লাভ চার্জার’ নামে একটি মিউজিক ভিডিও আন্তর্জাতিক স্তরে ‘খ্যাতি’ এনে দেয় তার। গুরমিতের এই ভিডিও সম্পর্কে গত বছর মার্কিন ‘দ্য টুনাইট শো’ নামে একটি অনুষ্ঠানে সঞ্চালক জিমি ফ্যালকন মজা করে বলেছিলেন, ‘ভুলেও শুনবেন না’ গানের তালিকায় এটি বোধহয় শীর্ষে।
গুরমিত অবশ্য দাবি করেছিলেন, মিউজিক ভিডিওটির তিন দিনে ৩০ লাখ কপি বিক্রি হয়েছে। শতাধিক রক শো-তে ‘ধর্মীয় রক’ গেয়েছিলেন তিনি। দুইটি সিনেমার মূল চরিত্রে অভিনয়ও করেছেন গুরমিত। ‘মেসেঞ্জার অব গড’ (এমএসজি) ও ‘মেসেঞ্জার অব গড-২’, সহকারী-লেখক হিসেবে তিনি ছবি দুইটির চিত্রনাট্যও লিখেছিলেন।
গুরমিতের অগাধ প্রতিপত্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে আগেই। সম্পত্তি নিয়ে ধর্মগুরুর বক্তব্য, এ সবই মিউজিক ভিডিও ও সিনেমা থেকে তার উপার্জিত আয়।
রাম রহিমের প্রায় পাঁচ কোটি ভক্ত রয়েছে। ডেরা সাচা সওদার দাবি, পাঞ্জাব-হরিয়ানার গ্রামে-গঞ্জের অলিগলিতে তাদের ভক্ত। ভোট-ব্যাংক ধরতে তাই রাজনৈতিক দলগুলোও রাম রহিমকে ‘ভক্তি’ করে চলে।
যদিও বেআইনি অস্ত্র রাখা, ধর্ষণ, খুন, সাধুদের লিঙ্গচ্ছেদ এমন বহু অভিযোগ রয়েছে রাম রহিমের বিরুদ্ধে। গুরু গোবিন্দ সিংয়ের সাজপোশাক নকল করে শিখদের তোপের মুখেও পড়েন তিনি।
২০০৮ সালে ডেরা সাচার শোভাযাত্রায় বিস্ফোরণ ঘটায় খালিস্তান লিবারেশন ফোর্স। সেই থেকে ‘জেড প্লাস’ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গুরমিতের। বুলেটপ্রুফ গাড়িতে যাতায়াত করেন। ভারতে যে ৩৬ জন ভিভিআইপি জেড ক্যাটাগরির সুরক্ষা পান, রাম রহিম তাদের মধ্যে এক জন।
ব্রিটেনের ওয়ার্ল্ড রেকর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছেন।
দাদাসাহেব ফালকে ফিল্ম ফাউন্ডেশন থেকে ২০১৬ সালে সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেতা, নির্দেশক এবং লেখকের সম্মান পেয়েছেন রাম রহিম।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪১ ঘণ্টা, ২৬ আগস্ট ২০১৭
লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এসডিএম