ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরাইলি বহিনীর বোমা হামলায় কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা আরবির এক সাংবাদিকের পরিবারের ২২ সদস্য নিহত হয়েছেন। ভুক্তভোগী ওই সাংবাদিকের নাম মোয়ামেন আল শরাফি।
গত ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরাইল বোমা হামলা শুরু করার পর তার পরিবার জাবালিয়া শরণার্থীশিবিরে আশ্রয় নিয়েছিল। সেখানেই বুধবার (৬ ডিসেম্বর) ইসরাইলি বোমা হামলায় তাদের প্রাণ যায়। খবর আল জাজিরার।
নিহতদের মধ্যে আল শরাফির বাবা-মা, তার ভাইবোন এবং তাদের স্বামী-স্ত্রী, পাশাপাশি ভাগ্নে ও ভাগ্নিও ছিলেন। আল শরাফি আল-জাজিরাকে বলেন, \’হামলার সময় একটি বিস্ফোরক ব্যারেল বাড়িটিতে আঘাত করে এবং এর ফলে মাটিতে গভীর গর্ত তৈরি হয়।\’
তিনি আরও বলেন, \’সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা কেউ মরদেহের কাছে পৌঁছাতে পারেনি। এমনকি আমরা আমাদের প্রিয়জনদের শেষ বিদায়ও দিতে পারিনি। তাদের যথাযথভাবে কবর দেওয়া থেকেও আমরা বঞ্চিত হয়েছি।\’
হামলার পর তোলা একটি ভিডিওতে আল শরাফির এক আত্মীয়কে বোমা বিস্ফোরিত বাড়ির ধ্বংসাবশেষের কাছে দাঁড়িয়ে কাঁদতে দেখা গেছে। ওই আত্মীয় বলেন, ‘মনে হচ্ছে ভোর ৪ বা ৫টার দিকে ইসরায়েলি বাহিনী বাড়িটিতে হামলা চালিয়েছে। সূর্য ওঠার আগ পর্যন্ত আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারিনি। হামলায় বেশ কয়েকজন শিশু নিহত হয়েছে।’
এদিকে বোমা হামলায় নিহত হওয়ার আগে তার মা আমিনা তাকে যে শেষ ভয়েস ম্যাসেজ পাঠিয়েছিলেন তা প্রকাশ করেছেন আল শরাফি। ওই ভয়েস নোটে তাকে বলতে শোনা যায়, \’আসসালামু আলাইকুম। শুভ সকাল, মমিন। তুমি কেমন আছো? আশা করি, তুমি ভালো আছো। তোমার স্ত্রী-সন্তান কেমন আছে? তোমার শারীরিক অবস্থা কি? নিজের যত্ন নিও, বাবা।\’
তিনি আরও বলেন, \’আল্লাহ তোমাকে এই যুদ্ধ থেকে অক্ষত অবস্থায় রক্ষা করুক। ভালোভাবে নিজের যত্ন নিও, আমি সত্যিই তোমাকে মিস করি, আমি প্রতিদিন তোমার জন্য দোয়া করি। আল্লাহ তোমার মঙ্গল করুক।\’
এক বিবৃতিতে আল জাজিরা মিডিয়া নেটওয়ার্ক ইসরায়েলি এই হামলার নিন্দা করেছে এবং বলেছে, \’এই অপরাধের জন্য দায়ী সকলকে জবাবদিহি করার জন্য সমস্ত আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে আল জাজিরা।\’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, \’আজ (বুধবার) জাবালিয়া ক্যাম্পের ভয়াবহ এই ঘটনাটি সামনে এসেছে। সেখানে মোয়ামেনের পরিবারের সদস্যরা আশ্রয় নিয়েছিলেন। কিন্তু ইসরায়েলি হামলায় তার বাবা, মা, তিন ভাইবোন এবং শিশুরা নিহত হয়েছেন।\’
আল জাজিরা নেওটওয়ার্ক বলছে, \’আল জাজিরা অবিলম্বে এই গণহত্যা বন্ধ করতে এবং শহীদদের পরিবার ও নিরাপরাধ হতাহতদের দুর্ভোগের জন্য দায়ীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে কাজ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায় কাজ করা সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।\’
এর আগে গত ২৫ অক্টোবর ইসরাইলি সেনাবাহিনীর হামলায় গাজায় আল জাজিরার আরবির আরেক সাংবাদিক ওয়ায়েল দাহদুহ তার পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্যকে হারিয়েছিলেন।
এছাড়া গত ৩১ অক্টোবর জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে বিমান হামলায় আল জাজিরা ব্যুরোর সম্প্রচার প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু আল-কুমসানও তার বাবা ও দুই বোনসহ পরিবারের ১৯ সদস্যকে হারিয়েছেন।
গত ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরাইলের হামলায় গাজায় ১৬ হাজার ২৪৮ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের ৭০ শতাংশই নারী ও শিশু। এছাড়া আহত হয়েছেন ৪৩ হাজারেরও বেশি মানুষ।