অবশেষে চার দিনের যুদ্ধবিরতি শুরু হয়েছে ফিলিস্তিনের গাজায়। যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী, ইসরায়েল ও হামাস পরস্পর জিম্মি ও বন্দী বিনিময় শুরু করেছে। তার সাথে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় সব ধরনের হামলা বন্ধ রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৪৮ দিন পর শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) দিবাগত রাতে নির্ভয়ে ঘুমাতে পেরেছে গাজাবাসী। খবর আল-জাজিরার।
দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে রয়েছেন আল–জাজিরার প্রতিনিধি হানি মাহমুদ। তিনি বলেন, \’সাময়িক যুদ্ধবিরতি কিছুটা স্বস্তি এনেছে। কেননা সাত সপ্তাহ ধরে প্রতি রাতে গাজার কোথাও না কোথাও হামলা হয়েছে, প্রাণহানি ঘটেছে। গতকাল দিবাগত রাত ছিল ভিন্ন। এ রাতে হামলা, প্রাণহানি, কান্না বন্ধ ছিল।\’
হানি মাহমুদ আরও বলেন, \’৪৮ দিন পর এ রাতে গাজাবাসী নির্ভয়ে ঘুমাতে পেরেছে। ঘুমের মধ্যে ইসরায়েলি বোমার আঘাতে প্রাণ হারানোর ভয় তাদের তাড়া করে ফেরেনি।\’
তবে গাজাবাসী মনে করছে, এটা যুদ্ধবিরতি পূর্ণাঙ্গ নয়। সাময়িক বিরতির পর আবার ইসরায়েলি বাহিনী তাদের ওপর হামলে পড়বে—এমনটাই বললেন হানি মাহমুদ। তাঁর মতে, গাজায় প্রায় ১৭ লাখ বাস্তুচ্যুত মানুষ মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। জীবন বাঁচাতে অবরুদ্ধ উপত্যকায় এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ছুটে বেড়াচ্ছে তারা। কেউই নিজ বাড়িতে ফিরতে পারছে না।
হানি মাহমুদ বলেন, \’গাজাবাসীর মধ্য হতাশা ভর করেছে। সেই সঙ্গে তারা ক্ষোভে ফুঁসছে। তাদের মনে প্রশ্ন, নিরাপদে বাড়ি ফেরার সুযোগ দেওয়ার শর্তটি কেন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে যুক্ত করা হয়নি? এ জন্য তারা হতাশ। ইসরায়েলি বাহিনী উত্তর ও দক্ষিণ গাজার মধ্যে একটা সামরিক সীমা টেনে রেখেছে। সেটা পেরিয়ে কাউকে যাতায়াত করতে দেওয়া হচ্ছে না। গতকাল কয়েকজন ফিলিস্তিনি জোর করে উত্তর গাজায় যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে তাঁদের প্রাণ যায়। এ সময় কয়েকজন আহত হন।\’
এ বিষয়ে হানি মাহমুদ বলেন, \’এসব ফিলিস্তিনির বাড়ি উত্তর গাজায়। তাঁরা ফেলে আসা বাড়িঘর দেখার জন্য সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।\’
এদিকে যুদ্ধবিরতির চুক্তি অনুসারে প্রথমদিনে কারাগার থেকে ৩৯ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরাইল। বন্দিদের মধ্যে ২৪ জন নারী ও ১৫ জন তরুণ। শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তাদের মুক্তি দেয়া হয়। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মাাইক্রোব্লগিং সাইটে এক্স পোস্টে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আল-আনসারি বলেন, \’যুদ্ধবিরতির প্রথম দিনের প্রতিশ্রুতি অনুসারে তাদের (৩৯ ফিলিস্তিনি) মুক্তি দেয়া হয়েছে।\’
কারাগার থেকে ফিলিস্তিনিদের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীও। এক এক্স পোস্টে তারা বলেছেন, \’ফিলিস্তিনি বন্দিদের ইসরাইলি বাহিনী এবং শিন বেট এজেন্টরা নিয়ে যাচ্ছে।\’
পোস্টে আরও বলা হয়েছে, \’ইসরাইলি হাসপাতালে ফিলিস্তিনিরা তাদের পরিবারের সঙ্গে মিলিত হওয়া পর্যন্ত তারা তাদের সঙ্গে থাকবেন।\’
এর আগে স্থানীয় সময় বিকাল ৪টায় ১৩ জন ইসরাইলি নাগরিককে মুক্তি দিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এর পাশাপাশি ১২ জন থাই নাগরিককেও মুক্তি দেয়া হয়।