সবুজায়নের নগরীতে নানা রং, যে রং কোনো চিত্রশিল্পীর আঁকা নয়। থ্রিডি এলইডিতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে রংধনুর ওই সাত রং, যেখানে চায়না ও ইংরেজিতে লেখা ‘ওয়েলকাম টু হ্যাংঝু’। স্টেডিয়ামের এক পাশে ডিজিটাল স্ক্রিনে তুলে ধরা হয় পর্যটন নগরীর ইতিহাস-ঐতিহ্য। সবকিছু এমনভাবে প্রদর্শন করা হয়েছে, কিছুক্ষণের জন্য মনে হয়েছে হ্যাংঝুর অলিম্পিক স্টেডিয়াম যেন জাদুঘর! ৪৫টি দেশের মার্চপাস্টের সময় দেশগুলোর কৃষ্টিকালচারগুলো এলইডি লাইটের মাধ্যমে ভেসে ওঠে।
শনিবার আলোর রোশনাই ও প্রযুক্তির ভেলায় চড়িয়ে ‘এশিয়ান গেমসে’ এশিয়াবাসীকে স্বাগত জানাল চীনের প্রযুক্তির শহর হাংঝু।
অবশ্য তার আগেই চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ‘হাংঝুতে স্বাগতম, এশিয়ান গেমসের উদ্বোধন ঘোষণা করছি’ বলার সঙ্গে সঙ্গে আতশবাজি পুড়ল। সবই থ্রিডিতে। খরচ হলো না কোনো অর্থ। সেটাও দেখা গেল হাংঝুর অলিম্পিক ইনডোর স্টেডিয়ামের বড় পর্দায়। আধুনিক প্রযুক্তিতে চীনারা যে বিশ্বসেরা, সেটা আবার প্রমাণ হলো হাংঝু এশিয়াডের বর্ণিল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে।
কথা কম বলেন, কাজ বেশি করেন-তাই বোধহয় চীনে এত জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। স্ত্রীসহ স্টেডিয়ামে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে পুরো স্টেডিয়ামজুড়ে হাততালি দিয়ে তাকে স্বাগতম জানাতে দেখা গেল দর্শকদের।
এছাড়া মার্চপাস্টে আসা এশিয়ার প্রত্যেকটি দেশের ক্রীড়াবিদদের হাততালি দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন হাংঝুবাসী। মার্চপাস্টে বাংলাদেশের পতাকা বহন করেন উপমহাদেশের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ মোরশেদ এবং নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন।
লাল-সবুজের দলকে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা ও শেফ দ্য মিশন একে সরকার। ৪৫ দেশের প্রায় সাড়ে ১২ হাজার ক্রীড়াবিদের এই মহাযজ্ঞের মাঠের লড়াই শুরু হয়েছে পাঁচদিন আগে। ফুটবল ও ক্রিকেটের লড়াইটা জমজমাটই হচ্ছে।
হাংঝুর পাঁচ হাজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে ছিল ১১৫ মিনিটের নানা আয়োজন। কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য এবার ছিল না আতশবাজি; যা এশিয়ান গেমসের ইতিহাসে প্রথম। তবে থ্রিডি লাইটে এমনভাবে সবকিছু ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, যাতে মনে হবে আতশবাজি ফুটছে। মার্চপাস্টের পর আর্টিস্টিকস নাচের সঙ্গে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের গান গেমসের থিম সং ‘লাভ উই শেয়ার’ মাতিয়েছে দর্শকদের।
প্রথমে চীনের পতাকা নিয়ে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করেন অলিম্পিকে স্বর্ণজয়ী সাঁতারু কিন হাইয়াং। মার্চপাস্টে অংশ নেন চীনের ১৩২৯ জন ক্রীড়াবিদ। এরপর একে একে মার্চপাস্টে অংশ নেন অংশ নেওয়া দেশগুলোর ক্রীড়াবিদরা। প্রতিটি গ্যালারির সামনে ভেসে উঠেছে ডিজিটাল এনিমেশন।
মার্চপাস্টে আলাদা নজর কেড়েছে ভারতের পোশাক। সামুরাইয়ের দেশ জাপান মার্চপাস্টে এসেছে সাদামাটাভাবে। স্বেচ্ছা নির্বাসন থেকে ফেরা উত্তর কোরিয়া এখানেও নিজেদের আলাদা করেছে তাদের আচার-আচরণ দিয়ে। যথারীতি নিজেদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক কাবলি কটি পরে মার্চপাস্টে আসে পাকিস্তান। সবার শেষে মার্চপাস্টে আসে চীন। স্বাগতিকদের আগমনে মুখরিত হয় গ্যালারি। তাদের বিদায়ের মধ্যদিয়ে একঘণ্টার মার্চপাস্ট শেষ হয়।
এরপর অলিম্পিক কমিটি অব এশিয়ার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট রাজা রানধীর সিং, অলিম্পিক কমিটি অব চীনের প্রেসিডেন্ট জাং জিধানকে নিয়ে গেমসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। শেষে গেমসের মশাল প্রজ্বালন করেন অলিম্পিকে স্বর্ণজয়ী সাঁতারু ওয়াং শুন ও আরেক স্বর্ণজয়ী ব্যাডমিন্টন তারকা লি লিংওয়ে।