পঞ্চায়েত নির্বাচনের ভোটের দিন ১৩ জনের প্রাণ গেলো

পঞ্চায়েত নির্বাচনের ভোটের দিন ১৩ জনের প্রাণ গেলো

পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন ব্যাপক সহিংসতার মধ্য দিয়ে শেষ হলো। আজ শনিবার ভোটের দিন সহিংসতার পরিসংখ্যান কার্যত আগের সব নির্বাচনকে ছাপিয়ে গেছে। এদিন প্রাণ হারিয়েছেন ১৩ জন। এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজ্যে এ পর্যন্ত ৩১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট সহিংসতায় মৃত্যু হয়েছিল ২৩ জনের।

নিহতদের মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী, সমর্থকসহ পঞ্চায়েত প্রার্থী, এমনকি ভোটের লাইনে দাঁড়ানো এক ভোটারও রয়েছেন।

এদিন সকাল সাতটায় শুরু হয় ভোট গ্রহণ, শেষ হয় বিকেল পাঁচটায়। এ সময়ের মধ্যে থেকে একের পর এক আসতে থাকে সহিংসতা ও মৃত্যুর খবর। এর পাশাপাশি বুথ জ্যাম, ছাপ্পা ভোট, ভোটারকে ভয় দেখানো, নির্দল প্রার্থী ও তার সঙ্গীদের লক্ষ্য করে বন্দুক উঁচিয়ে ধাওয়া করা, ব্যালট বক্স ছিনতাই, ব্যালট বক্সে আগুন, রাস্তা অবরোধসহ একাধিক ঘটনা।

সবচেয়ে বেশি সহিংসতা ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে মুর্শিদাবাদ জেলায়। এই জেলায় পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া কোচবিহার ও পূর্ব বর্ধমান জেলায় দুই জন করে এবং মালদা, নদীয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, উত্তর দিনাজপুর জেলায় একজন করে মৃত্যু হয়।

সূত্র জানায়, কিছু জায়গায় সহিংসতার মাত্রা এমন জায়গায় পৌঁছায়, যে এক প্রিজাইডিং অফিসারকে কেঁদে ফেলতে দেখা যায়।

এদিকে রাজ্য জুড়ে সহিংসতার ঘটনার প্রতিবাদে দুপুরে কলকাতায় রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সামনে বিক্ষোভ করে বিজেপি। এসময় কমিশনের অফিসে ঢুকে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে বিজেপির কর্মী, সমর্থকরা।

অন্যদিকে সহিংসতার ঘটনার প্রতিবাদে ‘কালীঘাট চলো’ (মুখ্যমন্ত্রী বাসভবন) ডাক দিয়েছেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা ও বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী।

এদিন নন্দীগ্রামের একটি বুথে পঞ্চায়েত ভোট দেওয়ার পর সংবাদ সম্মেলন থেকে শুভেন্দু বলেন, এখন দুটি পথ খোলা রয়েছে। কালীঘাট চলো, সেখানকার ইটগুলো খুলে ফেলি। হয়তো দশ-বারোটা মানুষ মরবে, তাতেও আমি রাজি আছি। কিন্তু রাজ্যের বাকি ১০ কোটি লোক বেঁচে যাবে। আর দ্বিতীয়ত, অবিলম্বে রাজ্যে ৩৫৫ কিংবা ৩৫৬ ধারা জারি করা।

তিনি বলেন, আমি মমতার হাত থেকে বাংলাকে পরিত্রাণ দেওয়ার জন্যই মন্ত্রীত্ব ছেড়ে এখানে এসেছি। পতাকা ধরেই হোক কিংবা পতাকা ছেড়ে হোক গণতন্ত্র বাঁচাতে আমাকে যা করতে হয় করবো।

অপরদিকে একই অভিযোগ নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশন অফিসের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে দক্ষিণ কলকাতার কংগ্রেস কর্মীরা। তাদের দাবি, নির্বাচন কমিশনারকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে।

এদিকে রাজ্য জুড়ে একের পর এক ভোট সহিংসতার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। ভোটের দিন উত্তর ২৪ পরগনা, নদীয়াসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেছেন তিনি। এসময় সাধারণ মানুষের অভিযোগ শুনে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখার আশ্বাস দেন আনন্দ।

রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহা সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, ফিল্ড থেকে আমাদের কাছে এখনো পর্যন্ত বারো থেকে তেরশ’ অভিযোগ এসেছে। তার মধ্যে ৬০০ অভিযোগের সমাধান করতে পেরেছি। তাতে দেখা যাচ্ছে তিন-চারটি জেলা থেকে বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।

ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য মুখপাত্র কুনাল ঘোষের দাবি, ভোট শান্তিতেই হয়েছে। এদিন দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি বলেন, উৎসবের মেজাজে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ ভোট হচ্ছে। তার অভিযোগ, তৃণমূল কংগ্রেসকে লক্ষ্য করে বিজেপি, সিপিআইএম এবং কংগ্রেস হামলা চালাচ্ছে। এখনও পর্যন্ত যে ২৭ জনের মৃত্যুর খবর বলা হচ্ছে, তার মধ্যে ১৭ জনই তৃণমূলের।

উল্লেখ্য, এদিন গোটা রাজ্যে এক দফাতেই এই পঞ্চায়েত ভোট নেওয়া হয়। রাজ্যটির ২২ জেলার মধ্যে দার্জিলিং এবং কালিম্পং জেলায় দ্বিস্তরীয় ভোট (গ্রাম সভা, পঞ্চায়েত সমিতি) এবং বাকি জেলাগুলিতে ত্রিস্তরীয় (গ্রাম সভা, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ) ভোট নেওয়া হয়।

এই নির্বাচনে গোটা রাজ্যে ভোট নেওয়া হয় মোট ৭৩ হাজার ৮৮৭ আসনে। এর মধ্যে রয়েছে তিন হাজার ৩১৭ টি গ্রাম সভার ৬৩ হাজার ২২৯ আসন, ৩৪১টি পঞ্চায়েত সমিতির ৯ হাজার ৭৩০ আসন এবং ২২ জেলা পরিষদের ৯২৮ আসন।

প্রায় দুই লাখের বেশি প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারিত হয় এই ভোটে। ভোট গ্রহণের জন্য ৬১ হাজার ৬৩৬টি ভোট গ্রহণ কেন্দ্র খোলা হয়। মোট ভোটারের সংখ্যা ছিল পাঁচ কোটি ৬৭ লাখ ২১ হাজার ২৩৪ জন।

এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল বিজেপি, বামফ্রন্ট-কংগ্রেসের জোট প্রার্থীরা। কিছু আসনে কড়া চ্যালেঞ্জ দিতে পারে ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ)-এর প্রার্থীরাও। ভোট গণনা হবে আগামী ১১ জুলাই।