
টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখাতে পর্যটকদের সমুদ্রের তলদেশে নিয়ে যাওয়ার কাজে ব্যবহৃত একটি ‘ট্যুরিস্ট সাবমেরিন’ আটলান্টিক মহাসাগরে নিখোঁজ হয়েছে। গত রোববার যাত্রা শুরুর ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট পর সেটি নিখোঁজ হয়। ঘটনার পর থেকেই সাবমেরিনটির সন্ধানে জোর তৎপরতা চলছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হারিয়ে যাওয়া সাবমেরিনটির নাম টাইটান সাবমার্সিবল। নিখোঁজের সময় এতে চালক ও একজন ক্রুসহ মোট পাঁচজন আরোহী ছিলেন।
মার্কিন কোস্ট গার্ড জানিয়েছে, আটলান্টিকের নিচে যাওয়ার ১ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট পর এই ছোট সাবমেরিনটির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
টাইটানের মালিক মার্কিন প্রতিষ্ঠান ওশানগেট। পানির তলদেশে গবেষণা, অনুসন্ধান, এমনকি ভ্রমণ করতে ইচ্ছুক-এমন লোকজনকে সাবমেরিনের মাধ্যমে পানির নিচে নিয়ে যায় প্রতিষ্ঠানটি। ওশানগেটের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হারিয়ে যাওয়া সাবমেরিনের আরোহীদের ফিরিয়ে আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে তারা।
প্রতিষ্ঠানটি আরও জানিয়েছে, টাইটানে থাকা পাঁচজনকে উদ্ধারে সব ধরনের চেষ্টা চালানো হচ্ছে। কিন্তু হাতে খুব একটা সময় নেই। টাইটানের অক্সিজেন চারদিন পর্যন্ত থাকবে। ফলে যা করার এর মধ্যে করতে হবে। সরকারি সংস্থা, মার্কিন ও কানাডার নৌবাহিনী এবং বাণিজ্যিক গভীর সমুদ্র সংস্থাগুলো উদ্ধার অভিযানে সহায়তা করছে বলেও জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
বিবিসি বলছে, কানাডার নিউফাউন্ডল্যান্ড প্রদেশের সেন্ট জন শহর থেকে টাইটানের যাত্রা শুরু হয়। আটলান্টিকের তলদেশে যেখানে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে, সেখান থেকে দূরত্ব ৬০০ কিলোমিটার। টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ থেকে ঘুরিয়ে আনতে সাবমেরিনটির সময় লাগতো প্রায় আট ঘণ্টা।
সাগরের ১২০০ ফুট গভীরে টাইটানিকের ধ্বংসস্তূপ ঘুরে দেখাসহ আট দিন ভ্রমণের জন্য টিকিটের দাম ২ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। ডুবে যাওয়া যানটিতে হামিশ হার্ডিং নামের একজন ধনকুবের ছিলেন বলেও জানা গেছে। দিন কয়েক আগে ৫৮ বছর বয়সী এই কোটিপতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছিলেন, তিনি টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে যাচ্ছেন।
মার্কিন কোস্ট গার্ডের কর্মকর্তা রিয়ার অ্যাডমিরাল জন মুগ গতকাল সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘আমরা ধারণা করছি এ মুহূর্তে ৭০ থেকে ৯৬ ঘণ্টা সময় (অক্সিজেন) আছে।’
সন্ধানে দুই অনুসন্ধাকারী বিমান ও একটি সাবমেরিন যুক্ত হয়েছে। তবে আটলান্টিকে উদ্ধার অভিযান চালানোটা বেশ জটিল মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
উল্লেখ্য, ১৯১২ সালে যুক্তরাজ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের উদ্দেশে প্রথম যাত্রা শুরু করে টাইটানিক। সেবারই এক হিমশৈলির সঙ্গে ধাক্কা লেগে ডুবে যায় সে সময়ের সবচেয়ে বড় এ জাহাজটি। এতে জাহাজটিতে থাকা ২ হাজার ২০০ যাত্রীর ১ হাজার ৫০০ জনের বেশি মারা যান। ১৯৮৫ সালে আটলান্টিকের তলদেশে ১২ হাজার ৫০০ ফুট গভীরে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের সন্ধান পাওয়া যায়।
সংবাদ সূত্রঃ বিবিসি