যেভাবে ফাঁস হয়েছিল ভারতের ধর্মগুরু রাম রহিমের কুর্কীতি!

২০০২ সাল। হরিয়ানা-পাঞ্জাবের চন্ডিগড়ের স্থানীয় হিন্দি সংবাদপত্র \’পুরা সাচ\’-এ প্রকাশিত হয় এক বেনামি চিঠি। সেই চিঠি থেকেই প্রথম জানা যায়, নিজের আশ্রমে কীভাবে দিনের পর দিন অবৈধ যৌনাচার চালাচ্ছেন স্বঘোষিত ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিং।

এরপর প্রকাশ্যে আসে বিশেষ \’গুহা\’য় টিভি দেখতে দেখতে পাশে আগ্নেয়াস্ত্র রেখে নারী ভক্তদের যৌন নিগ্রহ ও ধর্ষণ করার মতো চাঞ্চল্যকর তথ্যও। আর স্বঘোষিত ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিংয়ে কুর্কীতি ফাঁস করার চরম মাসুল দিতে হয় রাম চন্দর ছত্রপতি নামের এক সাংবাদিককে। মাসখানেক বাদে নিজের বাড়িতেই তাকে গুলি করে খুন করে দুষ্কৃতকারীরা।

এরপর বাবার খুনের সুবিচারের জন্য দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তার ছেলে। ঘটনাচক্রে, সিবিআইয়ের যে বিশেষ আদালতে গুরমিত রাম রহিম সিংয়ের বিরুদ্ধে শুক্রবার ধর্ষণ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে বৃহস্পতিবার, সেই আদালতে সাংবাদিক খুনের মামলাটিও চলছে।

নিহত সাংবাদিকের ছেলে জানিয়েছেন, \’প্রায় ২৮ দিন ধরে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েছিলেন বাবা\’। স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে জবানবন্দিও দিয়েছিলেন তিনি। জবানবন্দিতে ডেরা সাচা সওদা সংগঠনের প্রধান গুরমিত রাম রহিম সিংকে অভিযুক্ত হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। কিন্তু পুলিশ এফআইআর তার নাম ঢোকানোর সাহসই পায়নি। তারপরও হাল ছাড়েননি তিনি। সেই থেকে তার আইনি লড়াই চলছে এই হত্যা মামলার। এরপর ২০০৫ সালে সিবিআই তদন্ত চেয়ে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টে আবেদন করেন সাংবাদিক রাম চন্দর ছত্রপতির ছেলে।

জানা গেছে, ২০০২ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারি বাজপেয়ি, পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে চিঠি লিখে ডেরা-প্রধান গুরমিতের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনেন এক নারী। সেই চিঠি পাঠানো হয়েছিল ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সিবিআই ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনেও। কিন্তু প্রতাপশালী হওয়ায় স্বঘোষিত ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিংয়ের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে উদ্যোগ নেয়নি কোনো পক্ষই। শেষ পর্যন্ত পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট অভিযোগের তদন্ত করতে দায়িত্ব দেয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইকে। সেই তদন্তেই উঠে আসতে থাকে বহু অপকর্ম। তারই একটি মামলার রায় হলো শুক্রবার। আর তার সাজা কী হবে সেটা জানা যাবে ২৮ আগস্ট সোমবার। এছাড়া সাংবাদিক খুনের মামলা তো রয়েছেই।

উল্লেখ্য, একাধারে ধর্মপ্রচারক, সমাজ সংস্কারক, গায়ক, চিত্রনায়ক ও পরিচালক বাবা রাম রহিমের মতো বর্ণময় চরিত্র ভারতের অজস্র ধর্মগুরুর মধ্যেও বিরল। শিখ, হিন্দু, মুসলমান_ সব ধর্মের চেতনা মিশিয়ে বাবা রাম রহিম তৈরি করেছেন তার আশ্রম \’ডেরা সাচ্চা সওদা\’। হরিয়ানায় গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে সমর্থন দিয়েছিলেন রাম রহিম। লাখ লাখ ভক্ত থাকায় বড় ভোট ব্যাংক বিবেচনা করে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির অনেক নেতাই তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রাখেন। আর বিতর্ক কোনোদিনও পিছু ছাড়েনি তার।

বাংলাদেশ সময়:১১০০ ঘণ্টা, ২৬ আগস্ট ২০১৭

লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এসপি

Scroll to Top