সৌদি-ইরানের কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার ঘোষণা

সাত বছর পর সৌদি আরব ও ইরান কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠায় সম্মত হয়েছে। চীনের উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে সফল আলোচনার পর দুই দেশ এক যৌথ বিবৃতিতে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে। দুই দেশের রাষ্ট্রায়ত্ব বার্তা সংস্থা বিবৃতিটি প্রচার করেছে।

দুই মাসের মধ্যে পরস্পরের রাজধানীতে দূতাবাস পুনরায় খুলবে সৌদি আরব ও ইরান

সমঝোতা অনুযায়ী, সৌদি আরব ও ইরান দুই দেশের মধ্যকার নিরাপত্তা সহযোগিতা চুক্তিটি পুনরায় সক্রিয় করবে। একইসঙ্গে তারা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও সাংস্কৃতিক চুক্তিগুলোও ফের সক্রিয় করবে।

সৌদি আরব ও ইরান আগামী দুই মাসের মধ্যে পরস্পরের রাজধানীতে পুনরায় দূতাবাস খুলবে। উভয় দেশ জাতিরাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের প্রতি নিজেদের সম্মানের কথা নিশ্চিত করেছে এবং অপর রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে।

সূত্র জানায়, সৌদি ও ইরানি কর্মকর্তারা চলতি সপ্তাহে বেইজিংয়ে আলোচনার পর এ সমঝোতায় পৌঁছান। চীনের আয়োজনে দুই দেশের এ আলোচনা হয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্য ও পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের সবচেয়ে প্রভাবশালী দুই দেশের মধ্যে এ সমঝোতা রিয়াদ ও তেহরানের সঙ্গে বেইজিংয়ের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের প্রমাণ দিচ্ছে। বিষয়টি মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে চীনের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক গুরুত্ব বৃদ্ধির প্রতিফলন বলা চলে।

যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও কূটনৈতিক সংশ্লিষ্টতা দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সম্পর্কে ছায়া ফেলেছে। গত দুই বছরে ইরাক ও ওমানের উদ্যোগে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক হলেও দুই পক্ষ থেকে ইতিবাচক বক্তব্য ছাড়া লক্ষ্যণীয় অগ্রগতি হয়নি। এক্ষেত্রে চীনের আয়োজনের সাফল্য মধ্যপ্রাচ্যের কর্মকর্তাদের মধ্যে বেইজিংয়ের প্রতি আস্থা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিচ্ছে।

চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ডিসেম্বরে সৌদি আরব সফর করেন। সৌদি কর্মকর্তারা সে সময় তার সফর নিয়ে যথেষ্ট উচ্ছাস প্রকাশ করেন। এরপর গত মাসে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহীম রাইসি চীন সফর করেন।

হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির বেলফার সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের ফেলো মোহাম্মদ আলইয়াহইয়া বলেন, সৌদি ও ইরানের মধ্যে সম্পর্কের জোড়া লাগা মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে চীনের কৌশলগত ওজন বৃদ্ধির প্রতিফলন। ইরানের ওপর চীনের বড় প্রভাব রয়েছে। একইসঙ্গে সৌদিদের সঙ্গে চীনের অত্যন্ত গভীর ও গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে এক ধরনের কৌশলগত শূন্যতা রয়েছে। চীন বুঝে গেছে সেটা কিভাবে কাজে লাগাতে হবে।

সৌদি আরব ও ইরানের কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার ঘোষণায় চীন সরকারের তরফ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

বহু বছরের আঞ্চলিক বৈরিতার পর সৌদি আরব ও ইরান ২০১৬ সালে কূটনৈতিক সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দেয়। সে বছর সৌদি আরবে প্রভাবশালী শিয়া ধর্মযাজক নিমর আল-নিমরের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর তেহরানে বিক্ষুব্ধ জনতা সৌদি দূতাবাসে ভাঙচুর চালায়। এর অব্যবহিত পরেই রিয়াদের পক্ষ থেকে দূতাবাস গুটিয়ে নেওয়া ও সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা আসে।

সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে দূরত্ব ১৫০ মাইলেরও কম। পারস্য উপসাগরের দুই পাড়ের দুই বৈরীভাবাপন্ন দেশের মধ্যকার সংঘাত বহুদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যে রাজনীতি ও বাণিজ্যকে প্রভাবিত করছে।

ইরানের সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের প্রধান আলি শামখানি সে দেশের নুর বার্তা সংস্থাকে বলেছেন, ফেব্রুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট রাইসির চীন সফর সৌদি আরবের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবার সুযোগ সৃষ্টি করে।

তিনি বলেন, ইরান ও সৌদি আরবের কর্মকর্তারা দ্ব্যর্থহীন, স্বচ্ছ, সর্বব্যাপী ও গঠনমূলক আলোচনা করেছেন, যার ফল এসেছে হাতেনাতে। আমরা আশা করছি দুই দেশের সম্পর্ক এ অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ত্বরান্বিত করবে।

সৌদি আরবের সঙ্গে ইরানের সম্পর্কোন্নয়নের ফলে তেহরানের বিরুদ্ধে রিয়াদকে নিয়ে মোর্চা গড়ার ইসরায়েলি পরিকল্পনা ব্যাহত হবে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বারবার সৌদি আরবের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

রিয়াদ ও তেহরানের সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার ঘোষণায় ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে তাৎক্ষণিক কোনো সাড়া মেলেনি। অন্যদিকে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের একটি সূত্র বলেছে, সৌদিরা চুক্তি স্বাক্ষরের আগে আমাদেরকে আলোচনা সম্পর্কে জানিয়েছে। আমরা সবসময় সরাসরি আলোচনা ও কূটনীতিকে উৎসাহিত করেছি। আশা করি ইরানিরা তাদের প্রতিশ্রুতি রাখবে।

এদিকে সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার খবরে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে ইরানের রিয়াল। দুই সপ্তাহ আগে প্রতি ডলারের বিপরীতে ছয় লাখ রিয়াল বিনিময় হচ্ছিল। আজ দিনশেষে প্রতি ডলার ৪ লাখ ৮০ হাজার রিয়ালে বিক্রি হচ্ছিল।

সংবাদ সূত্রঃ নিউইয়র্ক টাইমস