নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে ইসরায়েলের উদ্ধারকারী দল তুরস্ক ছাড়ল

ইসরায়েলের একটি স্বেচ্ছাসেবী উদ্ধারকারী দল নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে তুরস্ক ছেড়েছে। রবিবার দলটি সিরিয়া সীমান্তের কাছে ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল কাহরামানমারাসে কাজ করছিল। একই কারণে ইতঃপূর্বে জার্মানি ও অস্ট্রিয়ার উদ্ধারকারী দলও তুরস্ক ছেড়ে গেছে।

ইউনাইটেড হাটজাল নামের ইসরায়েলের ওই স্বেচ্ছাসেবী দলে দুই ডজনের বেশি ডাক্তার কয়েকদিন ধরে তুরস্কের কাহরামানমারাস প্রদেশে কাজ করছিল। শনিবারও (১১ ফেব্রুয়ারি) তাদের তুরস্কের রেড ক্রিসেন্টের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাজ করতে দেখা গেছে। কিন্তু সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তারা রবিবার তুরস্ক ছাড়ার ঘোষণা দেয়।

এএফপি জানায়, ইউনাইটেড হাটজালের উদ্ধার অভিযান দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট ডভ মাইসেল বলেন, ‘আমাদের সদস্যরা এখানে নিরাপদ নয়। এ বিষয়ে আমাদের সুনির্দিষ্ট তথ্য রয়েছে। এটা বেশ দুর্ভাগ্যজনক। আমাদের সদস্যদের নিরাপত্তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই আমরা তুরস্ক ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।’

এদিকে ভূমিকম্প-বিধ্বস্ত এলাকায় সন্দেহজনক ঘোরাঘুরি করার অভিযোগে রবিবার অন্তত ৪৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে তুরস্ক। তবে গ্রেপ্তার সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কিছু জানানো হয়নি।

ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩৩ হাজার ১৭৯ জনে পৌঁছেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে সর্বশেষ হালনাগাদে। এর মধ্যে তুরস্কে নিহত হয়েছে ২৯ হাজার ৬০৫ জন, আর সিরিয়ায় ৩ হাজার ৫৭৪ জন। তবে নিহতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ।

এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত তুরস্কের ১০ প্রদেশে ভবন নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ১১৩ ব্যক্তির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। অন্যদিকে ভবন নির্মাণসংশ্লিষ্ট ১২ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিবিসির এক প্রতিবেদনে।

উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন, এখনও কিছু জীবিত মানুষ উদ্ধার করা যাচ্ছে। তবে বহু লোক এখনও নিখোঁজ রয়েছেন, যাদের জীবিত ফিরে পাওয়ার আশা ম্লান হয়ে আসছে।

জার্মানির উদ্ধারকারী দল ও অস্ট্রেলীয় সেনাবাহিনী শনিবার তাদের উদ্ধার কার্যক্রম স্থগিত করেছে। কারণ হিসেবে তারা হাতায় প্রদেশে অজ্ঞাত দুই গ্রুপের সংঘর্ষের কথা উল্লেখ করেছে।

খাদ্য সরবরাহ কমে যাওয়ায় সেখানে নিরাপত্তার আরও অবনতি হবে বলে আশঙ্কা করছেন এক উদ্ধারকর্মী। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর, তুরস্কের বিভিন্ন অঞ্চলে লুটে জড়িত থাকার অভিযোগে ৪৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। লুটের অভিযোগ তদন্ত করে দেশটির আটটি ভিন্ন প্রদেশ থেকে তাদের আটক করা হয়।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, আইনভঙ্গকারীদের শাস্তি দিতে তিনি জরুরি ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন। ৬ ফেব্রুয়ারি শেষ রাতে তুরস্কের গাজিয়ানতেপে সৃষ্ট ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের ১০টি প্রদেশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি প্রতিবেশী সিরিয়াও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের আলেপ্পো ও বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইদলিব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

প্রথম ভূমিকম্পের প্রায় ৯ ঘণ্টার মাথায় ৭ দশমিক ৫ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প আঘাত হানে। এ দুই ভূমিকম্পের পর অন্তত ৬৪৮টি ছোট ছোট ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছে।

সংবাদ সূত্রঃ এএফপি, বিবিসি