স্তালিনগ্রাদ যুদ্ধের সমাপ্তির ৮০ বছর পূর্তিতে দেওয়া ভাষণে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেইনে রাশিয়ার সেনা অভিযানের সঙ্গে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে সোভিয়েতের লড়াইয়ের তুলনা টেনেছেন।
ইউক্রেইনে ট্যাংক পাঠানোর জার্মান সিদ্ধান্তকে ইঙ্গিত করে পুতিন বলেছেন, ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।
“এটা অবিশ্বাস্য, কিন্তু সত্য। আমরা ফের জার্মান লেপার্ড ট্যাংকের হুমকির মুখোমুখি,” বলেছেন তিনি।
“আমরা আমাদের ট্যাংক তাদের সীমান্তে পাঠাচ্ছি না, কিন্তু আমাদের তো জবাব দিতেই হবে। সেই জবাব কেবল সাঁজোয়া অস্ত্রশস্ত্রে হবে না। সবারই সেটা বোঝা উচিত,” বলেছেন ৭০ বছর বয়সী রুশ নেতা।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেইনে সেনা পাঠানোর পর যে পশ্চিমা দেশগুলো কিইভকে নানাভাবে সহায়তা করছে জার্মানি তার অন্যতম, বলেছে বিবিসি।
স্তালিনগ্রাদের এখনকার নাম ভলগোগ্রাদ, সেখানে দেওয়া ভাষণে পুতিন ইউক্রেইনে প্রয়োজনে প্রচলিত অস্ত্রশস্ত্রের বাইরে অন্য কিছু ব্যবহারেরও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
“যারা রাশিয়াকে যুদ্ধে হারানোর খোয়াব দেখছেন, তারা বুঝতে পারছেন না। রাশিয়ার সঙ্গে অত্যাধুনিক যুদ্ধ তাদের জন্য কঠিন হবে বলেই মনে হচ্ছে।
“আমরা আমাদের ট্যাংক তাদের সীমান্তে পাঠাচ্ছি না, কিন্তু আমাদের তো জবাব দিতেই হবে। সেই জবাব কেবল সাঁজোয়া অস্ত্রশস্ত্রে হবে না। সবারই সেটা বোঝা উচিত,” বলেন ৭০ বছর বয়সী রুশ নেতা।
এর মাধ্যমে পুতিন আদতে কী বুঝিয়েছেন, সে বিষয়ে বিস্তারিত বলতে রাজি হননি ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ।
সাংবাদিকদের তিনি বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো সম্মিলিতভাবে যত নতুন অস্ত্র পাঠাবে, রাশিয়াও তার প্রতিক্রিয়া দেখানোর সম্ভাবনাকে আরও বেশি করে কাজে লাগাবে।”
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে স্তালিনগ্রাদ লড়াইয়ের সমাপ্তির বর্ষপূর্তি উদ্যাপনে বৃহস্পতিবার ভলগোগ্রাদে যান পুতিন।
স্তালিনগ্রাদের ওই যুদ্ধে প্রায় ৯১ হাজার জার্মান সেনা রুশ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
এই ফ্রন্টের লড়াইয়ে ১০ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আর কোনো ফ্রন্ট এত প্রাণহানি দেখেনি।
বর্ষপূর্তি উপলক্ষে একদিনের জন্য ভলগোগ্রাদ তার আগের নাম স্তালিনগ্রাদ ফিরে পেয়েছিল; দিনকয়েক আগে সেখানে সোভিয়েত ইউনিয়নের সাবেক নেতা জোসেফ স্তালিনের বিশাল মূর্তিও উন্মোচিত হয়েছে।
১৯২৪ সাল থেকে ১৯৫৩ সালে মৃত্যু পর্যন্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে থাকা স্তালিনের শাসনামলেই ১৯৩২-৩৩ সালে ইউক্রেইনে একটি দুর্ভিক্ষ হয়েছিল।
ওই দুর্ভিক্ষে আনুমানিক ৫০ লাখ লোক মারা পড়েছিল বলে অনেকের অনুমান; বুলগেরিয়ায় সম্প্রতি ওই দুর্ভিক্ষ গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
ইউক্রেইনে সেনা পাঠানোর পর থেকেই পুতিন বলছেন, তার অভিযান হচ্ছে উগ্র জাতীয়তাবাদী ও নাৎসিদের বিরুদ্ধে, যারা কিইভ সরকারের নেতৃত্বেও আছে।
ভলগোগ্রাদে দেওয়া ভাষণেও তার কণ্ঠে পাওয়া যায় একই সুর।
“এখন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আমরা দেখছি নাৎসিবাদী মতবাদ, যা এরইমধ্যে আধুনিক ছদ্মবেশে, আধুনিক অভিব্যক্তি নিয়ে হাজির হয়েছে, ফের আমাদের দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সরাসরি হুমকি তৈরি করছে।
“বারবার, প্রতিবার আমাদেরকে সম্মিলিত পশ্চিমের আগ্রাসন প্রতিহত করতে হচ্ছে,” বলেছেন তিনি।
রুশ প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, রাশিয়া ফের জার্মান ট্যাংকের হুমকির সম্মুখীন হলেও হুমকি হওয়া প্রতিটি দেশের জন্য উপযুক্ত জবাব মস্কোর হাতে আছে।
বার্লিন ইউক্রেইনে ১৪টি লেপার্ড ট্যাংক পাঠাতে রাজি হওয়ার পর রুশ কোম্পানি ফোরেস রাশিয়ার কোনো সৈন্য যদি লেপার্ড ট্যাংক নষ্ট বা জব্দ করতে পারে, তাহলে তাকে ৫০ লাখ রুবল (৫৮ হাজার ২৫০ ইউরো) পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
পুতিন এদিন স্তালিনগ্রাদের প্রতিরক্ষার দায়িত্বে থাকা সোভিয়েত মার্শালের কবরে ফুল দিয়ে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন; পরে তিনি স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধে অংশ নেওয়া সেনাদের মূল স্মৃতিসৌধেও যান, তিনি সেখানে যুদ্ধে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছু সময় নীরবে কাটান।
বৃহস্পতিবার ভলগোগ্রাদে হওয়া সামরিক কুচকাওয়াজ দেখতে শহরটির লাখো বাসিন্দার ভিড়ও ছিল চোখে পড়ার মতো।
কুচকাওয়াজে আকাশে সামরিক বিমানগুলোর গর্জন শোনা গেছে, অত্যাধুনিক বিভিন্ন ট্যাংকের পাশাপাশি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন অনেক ট্যাংকও শহরটির কেন্দ্রস্থলের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেছে।
এদিনের কুচকাওয়াজে অংশ নেওয়া অনেক যানেই দেখা গেছে ‘জেড’ চিহ্ন, যা এরইমধ্যে ইউক্রেইনে রাশিয়ার আক্রমণের প্রতীকে পরিণত হয়েছে।
সংবাদ সূত্রঃ বিবিসি