বিতর্কিত ধর্মগুরুর যৌন নিপীড়ন মামলা, নিরাপত্তায় ৫৭ হাজার পুলিশ

ভারতের বিতর্কিত ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিমের বিরুদ্ধে আনা যৌন নিপীড়নের একটি মামলায় আদালত আজ দুপুরে রায় ঘোষণা করবে বলে কথা রয়েছে। তবে তার আগে পাঞ্জাব আর হরিয়ানা রাজ্য দু\’টিতে ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পনেরো বছর আগে নিজের আশ্রমেই দু\’জন নারী ভক্তকে ধর্ষণ করার অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। আদালতের রায় তাঁর বিরুদ্ধে গেলে গুরমিত রাম রহিমের লক্ষ লক্ষ ভক্ত আইন অমান্য করে দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাঁধাতে পারে বলে প্রশাসনের আশঙ্কা। এর আগেও ওই সম্প্রদায় দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাধিয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

গুরমিত রাম রহিমের ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নাম তাঁর আশ্রমের নাম অনুসারেই ডেরা সাচ্চা সৌদা। হরিয়ানার সিরসা শহরে ওই হাই-টেক আশ্রমটি অবস্থিত। রাজ্য দু\’টিতে জারি হয়েছে ১৪৪ ধারা অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞা। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নেমেছে ৫৭ হাজার পুলিশ কর্মী – যাঁদের মধ্যে রাজ্য সশস্ত্র পুলিশ যেমন আছে, তেমনই রয়েছে কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনীও। সেনাবাহিনীকেও তৎপর থাকতে বলেছে প্রশাসন।

দুই রাজ্যের মধ্যে দিয়ে চলাচল করে এমন দু\’শোরও বেশী ট্রেন পরবর্তী তিনদিনের জন্য বাতিল করে দেওয়া হয়েছে। সব স্কুল-কলেজ আর প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে। আগামী ৭২ ঘণ্টা মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা স্থগিত করা হয়েছে। পাঁচকুলা আর চন্ডীগড়ের স্টেডিয়াম ও স্কুলগুলিকে প্রশাসন নিজেদের দখলে নিয়ে অস্থায়ী কারাগার তৈরি করেছে, যাতে প্রচুর সংখ্যায় ওই \’গুরুজী\’র ভক্তদের গ্রেফতার করতে হলে তাদের রাখার ব্যবস্থা করা যায়।

হরিয়ানার যে পাঁচকুলা শহরের আদালত আজ ওই রায় দেবে, তার কাছাকাছি ওই ধর্মগুরুর প্রায় ৪০ হাজার সমর্থক জড়ো হয়েছেন। গোটা শহরে দেড় লক্ষেরও বেশী ভক্ত ও সমর্থক গত কয়েকদিন ধরে পৌঁছেছেন।তাঁরা শহরের সব রাস্তা আর পার্কগুলোতে দিন-রাত বসে রয়েছেন তাঁদের \’গুরুজী\’র অপেক্ষায়।

অনেকেরই হাতে রয়েছে মোটা বাঁশের লাঠি বা হকিস্টিক। আদালতের রায় যদি তাঁদের \’গুরুজী\’কে দোষী সাব্যস্ত করে, তাহলে যে তাঁরা ছেড়ে কথা বলবেন না, সেটা উত্তেজিত ভাবে, লাঠি ঠুকে বলছেন অনেক নারী-পুরুষ ভক্তই।প্রশাসন প্রথমে গুরমিত রাম রহিমের ভক্তদের বিপুল সংখ্যায় জমায়েত নিয়ে কোনও ব্যবস্থা না নিলেও বৃহ¯পতিবার পাঞ্জাব-হরিয়ানা হাইকোর্টের নির্দেশে রাত থেকে নিরাপত্তার চূড়ান্ত কড়াকড়ি শুরু করে।

চণ্ডীগড় -পাঁচকুলা পৌঁছানোর সব রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়, প্রতিটা গাড়িতে তল্লাশী চলতে থাকে। অন্যদিকে রাতভর পুলিশ কর্মকর্তারা মাইক হাতে রাস্তায় ঘুরে বেরিয়েছেন জমায়েত হওয়া ভক্তদের ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে।অনেক রাতে গুরমিত রাম রহিমের একটি ভিডিও বার্তা ইন্টারনেটে প্রকাশ করা হয়, যাতে তিনি শান্তি বজায় রাখার এবং ভক্তদের ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় বেশীরভাগ ভক্তর কাছেই সেই বার্তা পৌঁছায়নি বলে প্রশাসন মনে করছে।

আজ সকালে ২০-২৫টি গাড়ির বহর নিয়ে নিজের আশ্রম থেকে রওনা হয়েছে গুরমিত রাম রহিম। সঙ্গে রয়েছে তাঁর নিজস্ব কম্যান্ডো বাহিনী। গুরমিত রাম রহিম হরিয়ানা গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি-র প্রতি সমর্থন দিয়েছিলেন। বিজেপির অনেক নেতা-মন্ত্রী-সংসদ সদস্যই ওই ধর্মগুরুর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কথা সামাজিক মাধ্যমে নানা সময়ে প্রকাশ করেছেন। এই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নিয়ন্ত্রণে লক্ষ লক্ষ ভোট রয়েছে বলে মনে করা হয়।

তবে বিতর্ক কখনই পিছু ছাড়েনি গুরমিত রাম রহিমের। ভারতের অজস্র গডম্যান বা ধর্মগুরুর মধ্যেও বাবা রাম রহিমের মতো বর্ণময় চরিত্র সম্ভবত আর একটিও নেই। তিনি একাধারে ধর্মপ্রচারক, সমাজ সংস্কারক, গায়ক, সিনেমার নায়ক ও পরিচালক। সেই সব চলচ্চিত্রে নানা রকম স্টান্ট দেখান তিনি। হরিয়ানার সিরসায় তার ডেরা সাচ্চা সৌদা আশ্রমের প্রাঙ্গণে নিয়মিত বসে পপ কনসার্ট। সেখানে গান ডেরার প্রধান, গুরমিত রাম রহিম সিং নিজেই – তার তুমুল জনপ্রিয় \’ইউ আর মাই লাভ চার্জারে\’র মতো আরও অনেক গান!

\’এমএসজি: মেসেঞ্জার অব গড সিরিজে\’র যে সিনেমাগুলোতে বাবা রাম রহিম নিজেই নায়ক গুরুজির অভিনয় করেছেন, হাজার হাজার গাড়ির কনভয় নিয়ে সেই ছবি দেখতে এসে তাঁর ভক্তরা একাধিকবার দিল্লির কাছে গুরগাঁও অচল করে দিয়েছেন! শিখ, হিন্দু, মুসলিম সব ধর্মের চেতনার মিশেলেই তৈরি হয়েছে তাঁর ধর্মীয় সম্প্রদায়।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, ২৫ আগস্ট ২০১৭

লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এস

Scroll to Top