ভারতের উত্তরপ্রদেশের নয়ডার ‘সুপারটেক টুইন টাওয়ার’ ভেঙে ফেলা হবে। আজ রোববার (২৮ আগস্ট) ভারতীয় সময় দুপুর আড়াইটার দিকে জমজ এ অট্টালিকা ভেঙে ফেলা হবে। এ জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পূর্ণ হয়েছে। ‘সুপারটেক টুইন টাওয়ার’ ভেঙে ফেলতে প্রায় ২০ কোটি রুপি খরচ হচ্ছে।
মূলত বিস্ফোরক দিয়ে বিশালাকার এ ভবনটি গুঁড়িয়ে ফেলা হবে। মাত্র ৯ সেকেন্ডেই গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে ভবনটি। নয়ডার এই বিতর্কিত বহুতল ভবন দুটির নাম অ্যাপেক্স এবং সিয়ানে। এগুলোর মধ্যে একটির উচ্চতা ১০৩ মিটার। দ্বিতীয়টির উচ্চতা ৯৭ মিটার। এ জন্য ৩ হাজার ৭০০ কেজি বিস্ফোরক ব্যবহার করা হবে। বিস্ফোরণের পর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়া ধুলাবালি পরিষ্কার হয়ে স্বাভাবিক হতে ১২ মিনিট সময় লাগবে। এ জন্য জোড়া ভবনটির আশপাশের আবাসনের বাসিন্দাদের নিরাপত্তায় বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নয়ডার কর্মকর্তারা ভবনটি ধ্বংসের সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দল এবং হাসপাতালকে সহায়তা করার জন্য একটি কন্ট্রোল রুম চালু করেছে।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, ‘সুপারটেক টুইন টাওয়ার’ ধ্বংসের জন্য ৩ হাজার ৭০০ গ্রাম বিস্ফোরক ব্যবহার করা হবে। এরইমধ্যে তা বসানো হয়ে গেছে। আর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ধোঁয়াশা বন্দুক, ১০০টিরও বেশি জলের ট্যাঙ্ক, আর কর্মীদের জন্য ৬টি যান্ত্রিক সুইপিং মেশিন আনা হয়েছে। ১৫০ পরিচ্ছন্নতাকর্মী একসঙ্গে কাজ করবেন। টুইন টাওয়ার ধ্বংসের কারণে ৫৫ হাজার থেকে ৮০ হাজার টন ধ্বংসাবশেষ তৈরি হবে। যা সরাতে প্রায় তিন মাস সময় লাগবে।
২০০৪ সালে নয়ডায় সুপারটেক এমারেল্ড কোর্ট নামে একটি হাউজিং সোসাইটি তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এজন্য নয়ডা অথোরিটি সেক্টর ৯৩-এর চার নম্বর প্লটে ৪৮ হাজার ২৬৩ বর্গ মিটার জায়গা বরাদ্দ করে। ২০০৫ সালে নয়ডা অথোরিটি এমারেল্ড কোর্ট নামে এই হাউজিং সোসাইটিতে ১৪টি টাওয়ার বা বহুতল ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেয়। অনুমোদন অনুযায়ী, ভবনগুলো ১০ তলা হওয়ার কথা ছিল। সেই হিসাবেই ১৪টি টাওয়ার নির্মাণের কাজ শুরু হয়।
পরে ২০০৬ সালের জুন মাসে সুপারটেককে লিজ দেওয়া জমির পরিমাণ বাড়িয়ে ৫৪ হাজার ৮১৯.৫১ বর্গ মিটার করা হয়। ওই বছরের ডিসেম্বরে ভবনগুলো ১০ তলার পরিবর্তে ১২ তলা করার অনুমতি দেয় নয়ডা কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও ওই আবাসন প্রকল্পে অতিরিক্ত দুটি টাওয়ার এবং একটি শপিং মল নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়।
২০১২ সালে নয়ডা কর্তৃপক্ষ নতুন নির্মাণ নকশা খতিয়ে দেখেন। সেই নকশা অনুযায়ী নতুন দুটি টাওয়ার চল্লিশ তলার হবে।
২০২১ সালের অগাস্ট মাসে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট দুটি ভবনের মধ্যে ন্যূনতম জায়গা ছাড় না রাখার অভিযোগে টুইন টাওয়ার ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন। আদালতের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, উত্তর প্রদেশ আবাসন আইন অনুসারে ফ্ল্যাট মালিকদের সম্মতি ছাড়াই বেআইনিভাবে ভবন দুটি নির্মাণ করা হয়েছে। এই বেআইনি কাজের জন্য নয়ডা কর্তৃপক্ষ এবং সুপারটেকের মধ্যে আঁতাত তৈরি হয় বলেও রায়ে মন্তব্য করেন আদালত।
পরে ভবন দুটির ফ্ল্যাট মালিকদের অনেকেই আদালতের দ্বারস্থ হন। প্রথমে ঠিক করা হয়েছিল, ২০২২ সালের মে মাসে ভবন দুটি ভেঙে ফেলা হবে। পরে সুপ্রিম কোর্ট ২৮ আগস্ট পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেন। কিন্তু টেকনিক্যাল জটিলতা এবং আবহাওয়ার প্রতিকূলতার কথা মাথায় রেখে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়।
আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, বহুতল ভবন দুটি ভাঙার যাবতীয় খরচ নির্মাণকারী সংস্থা সুপারটেককেই বহন করতে হবে।