ভারতের সঙ্গে সার্বিক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট-সিইপিএ) স্বাক্ষরের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরুর সবুজ সংকেত দিয়েছেন। এ কথা জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইকোনমিক টাইমস।
২০২১ সালের মার্চে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সিইপিএ চুক্তির সম্ভাব্যতা সমীক্ষার নির্দেশনা দেন
ইকোনমিক টাইমস বলেছে, স্বাক্ষর হলে সিইপিএ হবে কোনো দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রথম বাণিজ্য চুক্তি। চীন ও জাপানের পক্ষ থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তাব দেওয়া হলেও ভারতকেই প্রাধান্য দিয়েছেন ঢাকার কর্মকর্তারা। চীন ও জাপানের প্রস্তাবিত চুক্তিগুলো এখনও মূল্যায়ন পর্যায়ে রয়েছে।
খবরে বলা হয়, আগামী ৬-৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে এজেন্ডার উপরিভাগে থাকবে সিইপিএ। প্রস্তাবিত এ চুক্তি বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ১৯০ শতাংশ ও ভারতের রপ্তানি আয় ১৮৮ শতাংশ বাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে। এইকভাবে চুক্তির ফলে বাংলাদেশ ও ভারতের জিডিপিতে যথাক্রমে ১ দশমিক ৭২ শতাংশ ও দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ঘটবে বলে দুই দেশের যৌথ সমীক্ষায় বলা হয়েছে। সিইপিএর আওতায় থাকবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার পণ্য ও সেবা বাণিজ্য, বিনিয়োগ, মেধাস্বত্ব ও ই-কমার্স।
ঢাকার কর্মকর্তারা জানান, সাফটা চুক্তির আওতায় স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এরইমধ্যে ২৫টি পণ্য ছাড়া ভারতে সব রপ্তানি পণ্যে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা ভোগ করছে। বিগত অর্থবছরে প্রথমবারের মতো ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি দুই বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি পৌঁছে। একই সময়ে ভারত থেকে বাংলাদেশের আমদানি ছিল ১৪ বিলিয়ন ডলার।
২০২১ সালের মার্চে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকালে দুই প্রধানমন্ত্রী সিইপিএ চুক্তির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে যৌথ সমীক্ষার নির্দেশনা দেন। সে অনুযায়ী বাংলাদেশের ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউট ও ভারতের সেন্টার ফর রিজিওনাল ট্রেড যৌথ সমীক্ষা পরিচালনা করে। চলতি বছরের মে মাসে দুই প্রতিষ্ঠান নিজ নিজ দেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে সমীক্ষা প্রতিবেদন উপস্থাপন করে। প্রতিবেদনে সিইপিএ স্বাক্ষরের জন্য আলোচনা শুরুর সুপারিশ করা হয়।
সমীক্ষা প্রতিবেদনের তথ্য মতে, সিইপিএ স্বাক্ষর হলে আগামী ৭ থেকে ১০ বছরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ৩-৫ বিলিয়ন ডলার বাড়বে। একই সময়ে ভারতের রপ্তানি আয় বাড়বে ৭-১০ বিলিয়ন ডলার। চুক্তিটি উভয় দেশের জন্য বিনিয়োগের নতুন সুযোগ উন্মোচন করবে বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- এ মর্মে উপসংহারে উপনীত হওয়া যায় যে, বর্তমান সম্ভাব্যতা সমীক্ষার প্রাক্কলন ও বিশ্লেষণ থেকে বুঝা যাচ্ছে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রস্তাবিত সিইপিএ কেবল সম্ভব তা-ই নয়, বরং পণ্য ও সেবা বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পারস্পরিকভাবে লাভজনক হবে।
প্রসঙ্গত, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার বাংলাদেশ। অন্যদিকে ভারত বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার।
সংবাদ সূত্রঃ ইকোনমিক টাইমস