ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির দু\’জন নেতা ইসলামের নবী মোহাম্মদ(সঃ) সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করার পর মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এর বিরুদ্ধে যেভাবে ক্ষোভ বাড়ছে, তার কারণে উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক হুমকিতে।
২৪ ফেব্রুয়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে অভিযান চালানোর পর ভারত যখন সতর্কতার সঙ্গে উদ্ভূত ভূরাজনৈতিক অভিঘাত সামাল দিচ্ছে; ঠিক এমন সময় ক্ষমতাসীন বিজেপির মুখপাত্রদের ইসলাম নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য দেশটিকে বিশ্বমঞ্চে, বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বে চাপে ফেলে দিয়েছে। গত রোববার প্রথম মুখ খোলে কাতার, কুয়েত ও ইরান। এরপর পাকিস্তান, সৌদি আরব ও ওমান এবং গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল (জিসিসি) ও অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) এ নিয়ে কথা বলেছে।
উপসাগরীয় অঞ্চল সম্প্রতি বেশ খানিকটা ভারতমুখী হয়েছিল এবং এর জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ব্যক্তিগত কৃতিত্ব দাবিও করে থাকেন। সেই উপসাগরীয় অঞ্চল গত কয়েক দিন দিল্লির ওপর তেতে আছে। তুরস্ক ও মালয়েশিয়ার নীরবতা এখনো দিল্লির জন্য কিছুটা সান্ত্বনা হিসেবে কাজ করছে, কিন্তু কত দিন তারা নীরব থাকবে, তা স্পষ্ট নয়। কায়রোর প্রভাবশালী ইসলামি বিদ্যাপীঠ আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় বিজেপির মুখপাত্রদের বক্তব্যকে ‘সমগ্র বিশ্বকে ধ্বংসাত্মক সংকট এবং রক্তাক্ত যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে সাহায্য করা সন্ত্রাস’ হিসেবে উল্লেখ করে নিন্দা জানিয়েছে।
ভারতের হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপির মুখপাত্র নূপুর শর্মা সম্প্রতি এক টেলিভিশন বিতর্কে এই মন্তব্য করেছিলেন। আর দলের দিল্লি শাখার মিডিয়া ইউনিটের প্রধান নভিন জিন্দাল এ বিষয়ে টুইটারে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন।
তাদের মন্তব্য, বিশেষ করে নূপুর শর্মার কথা ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়কে বেশ ক্ষুব্ধ করে। এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে কিছু প্রতিবাদ বিক্ষোভও হয়েছে।
এদিকে কাতার ও কুয়েতে ভারতের রাষ্ট্রদূতদের তলব করে চিঠি দিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের নিন্দা জানানো হয়। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুলতান বিন সাদ আল মুরাইখিত ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে দোহায় তলব করে তীব্র নিন্দা জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয় এবং এ বিষয়ে ভারত সরকারকে অবিলম্বে নিন্দা ও ক্ষমা প্রার্থনার আহ্বান জানানো হয়। তাছাড়া নুপুর শর্মা ও নবীন কুমার জিন্দালের মন্তব্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
এদিকে কূটনৈতিকভাবে তা মীমাংসার চেষ্টা করছে ভারতীয় দূতাবাসগুলো। কাতার ও কুয়েতে ভারতীয় দূতাবাসগুলো রাষ্ট্রদূতদের সূত্রে জানায়, টুইটগুলো কোনোভাবেই ভারত সরকারের মতামতকে প্রতিফলিত করে না। তাছাড়া এ মন্তব্যকে ‘প্রান্তিক উপাদানের’ মতামত বলে আখ্যায়িত করা হয়।
ভারতীয়দের মুসলিমবিরোধী কর্মকাণ্ডের অনুরণনে পশ্চিম এশিয়ায় অস্থিরতা সৃষ্টির ঘটনা এটাই প্রথম নয়। ২০২০ সালে ভারতে ব্যাপক হারে কোভিড-১৯ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য মোদি সরকার দিল্লির তাবলিগ জামাতকে ঢালাওভাবে দোষারোপ করার পর ভারতে ইসলাম–বিদ্বেষের ফুলকি ছড়িয়ে পড়েছিল। সে সময় দুবাইয়ে বসবাসরত সৌরভ উপাধ্যায় নামের একজন ভারতীয় ব্যক্তির তাবলিগবিরোধী একটি টুইট নিজের টুইটার হ্যান্ডেলে ট্যাগ করে আবুধাবির শাসক রাজপরিবারের সদস্য ও প্রভাবশালী ব্যবসায়ী শেখ হিন্দ বিনতে ফয়সাল আল কাসেমি টুইট করেছিলেন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে এভাবে যে-ই প্রকাশ্যে বর্ণবাদী এবং বৈষম্যমূলক বক্তব্য দেবে তাকেই জরিমানা করা হবে এবং তাকে চলে যেতে বাধ্য করা হবে।