শ্রীলঙ্কার চলমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট নিয়ে সর্বস্তরের মানুষের অসন্তোষ এবং আন্দোলনের মুখে দেশটির প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে পদত্যাগ করলেন। গতকাল সোমবার স্থানীয় সময় বিকেলে পদত্যাগপত্রটি প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসের কাছে পাঠান লংকান প্রধানমন্ত্রী।
পদত্যাগ করার আগে টেম্পল ট্রিজ থেকে জনগণের উদ্দেশে দেয়া বিবৃতিতে মাহিন্দা রাজাপাকসে বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে দেশে নৈরাজ্য করার পক্ষে তিনি নন। বিভক্ত মাতৃভূমি রক্ষা তার রাজনৈতিক জীবনের শ্রেষ্ঠ স্মৃতি বলেও উল্লেখ করেন প্রেসিডেন্টের ভাই।
গত শুক্রবার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার সঙ্গে মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে মাহিন্দাকে তার পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেন গোতাবায়া রাজাপাকসে। কয়েকজন মন্ত্রী এতে সায় দিলে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন মাহিন্দা। সেদিন তিনি বলেছিলেন, তার ৫০ বছরের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং দেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে ভালো জানেন। তার পদত্যাগই যদি সংকটের সমাধান হয়, তাহলে তিনি সেটাই করবেন। আজ নিজ ভাষণে সে কথার পুনরাবৃত্তি করেন মাহিন্দা। বলেন, জনগণের স্বার্থে সিদ্ধান্ত নেয়া হলে তিনি যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত।
মাহিন্দা আরো বলেন, দেশের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করার অধিকার কারো নেই। তার নিজেরও নেই। জনগণের আস্থায় রাজনীতিতে এসেছিলেন। তাদের সিদ্ধান্তই তিনি মেনে নেবেন।
এদিকে, মাহিন্দা পদত্যাগ করার আগে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়। এমপি ও এসএলপিপি শিবির থেকে বলা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীকে দায়িত্ব পালন করে যাওয়া উচিত। যদি পদত্যাগ করতে হয় তাহলে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার করা প্রয়োজন। কারণ, সংবিধানের ২০তম সংশোধনীর আওতায় সব সিদ্ধান্তের দায়ভার, সরকারের সাফল্য ও ব্যর্থতার দায় প্রেসিডেন্টের।
গোতাবায়া কর্তৃক বড় ভাইকে অপসারণের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ মাহিন্দা রাজাপাকসে সমর্থকরা। আজ এসএলপিপি সমর্থকরা প্রেসিডেন্টের বাসভবন টেম্পল ট্রিজের সামনে বিক্ষোভ প্রকাশ করে। সেখান থেকে মাহিন্দাকে পদত্যাগ না করার অনুরোধও জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ নিয়ে বড় বিক্ষোভের আশঙ্কায় কলম্বোজুড়ে নিরাপত্তা জোরদারও করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।
শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করায় আজ থেকে তার মন্ত্রিসভাও কার্যকারিতা হারিয়েছে। সোজা কথায়, ভেঙে গেছে মন্ত্রিসভা। অল্প সময়ের মধ্যেই গঠন হতে পারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের। এতে যুক্ত হতে কঠিন শর্ত ঝুলিয়ে দিয়েছে প্রধান বিরোধী দল এসজেবি। তারা সর্বশেষ সংশোধনীর ফলে সৃষ্ট প্রেসিডেন্টের অসীম ক্ষমতার বিলোপ চান। এছাড়া টিএনএ, ইউএনপি ও জেভিপির মতো অন্যান্য দলগুলোও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে যোগদানে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।
সংবাদ সূত্রঃ নিউজ ফার্স্ট