এক রুশ দম্পতিকে ইন্দোনেশিয়ার পর্যটন দ্বীপ বালির একটি মন্দিরের পাশের বটগাছ জড়িয়ে নগ্ন ছবি তোলার অভিযোগে দ্বীপ ত্যাগের আদেশ দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। গত শুক্রবার বালির গভর্নর ওয়ায়ান কস্তার এ আদেশ দিয়েছেন বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে এএফপি।
গভর্নরের আদেশে বলা হয়েছে, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করায় ওই দম্পতিকে অবশ্যই বালি ত্যাগ করতে হবে এবং আগামী ছয় মাস তাদেরকে ইন্দোনেশিয়ায় প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। পাশাপাশি, বালি ত্যাগের আগে মন্দির ও তার চারপাশ পরিষ্কার কর্মসূচিতে অংশও নিতে হবে তাদের।
ইতোমধ্যে অবশ্য ওই রুশ দম্পতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে নিজেদের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাত দিয়ে এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার বালিতে গিয়েছিলেন আন্দ্রেই ফাজলিভ ও আলিনা ফাজলিভা দম্পতি। শুক্রবার বালির তাবনান জেলার একটি হিন্দু মন্দিরে যান তারা। সেখানে মন্দিরের পাশের একটি বটগাছের গায়ে হেলান দিয়ে নগ্ন হয়ে পোজ দেন আলিনা এবং তার স্বামী আন্দ্রেই তার ছবি তোলেন। তারপর ইনস্টাগ্রামে সেই ছবি আপলোড করেন আলিনা।
আলিনা নিজে একজন সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার। ইনস্টাগ্রামে কয়েক হাজার তার ফলোয়ারের সংখ্যা। ফলে, ছবিটি আপলোড করার কয়েক মুহূর্তের মধ্যে সেটি ভাইরাল হয়ে যায়।
তারপর থেকেই শুরু হয় বিপত্তি। ইনস্টাগ্রামে প্রশংসার পাশাপাশি তীব্র সমালোচনাও শুরু হয় এই দম্পতির বিরুদ্ধে। সমালোচনার কারণ, বালি দ্বীপটি হিন্দু অধ্যুষিত এবং মন্দিরের ৭০০ বছর বয়সী সেই বটগাছটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র। বহু নেটিজেন অভিযোগ করেন, এই ছবি তোলা ও তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে হিন্দু সংস্কৃতি ও ধর্মানুভূতিতে আঘাত করেছেন আলিনা ও আন্দ্রেই।
এই অভিযোগ আমলে নিয়েই তাদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে বলে এএফপিকে জানিয়েছেন বালির ইমিগ্রেশন বিভাগের প্রধান জামারুলি মানিহুরুক। এএফপিকে তিনি বলেন, ‘বালির সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন বিষয়ক যে সরকারি আদেশ রয়েছে, তারা দু’জনই তা অমান্য করেছেন এবং এটি ইতোমধ্যে প্রমাণিত। এ কারণে তাদেরকে বহিষ্কার আদেশের পাশাপাশি ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।’
এদিকে, এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছেন আলিনা। ইনস্টাগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে ইংরেজি ও ইন্দোনেশিয়ার বাহাসা ভাষায় তিনি বলেন, ‘বড় ভুল করেছি। আমাদের অজ্ঞতা এই ভুলের জন্য দায়ী। বালিতে অনেক পবিত্র স্থান রয়েছে, কিন্তু সব স্থানে এ বিষয়ক কোনো নির্দেশক তথ্য নেই। আমার ক্ষেত্রেও এমন ঘটেছে। অবশ্যই আমাদের এমন কোনো কাজ করা উচিত নয়, যা কোনো ধর্মীয় স্থানের পবিত্রতা ক্ষুন্ন করে।’
এর আগে গত বছর বালি দ্বীপ থেকে প্রায় ২০০ মানুষকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর মধ্যে কোভিড-১৯ বিধিনিষেধ লঙ্ঘনের দিয়েও কেউ কেউ বিতাড়িত হয়েছেন।
গত মাসে কানাডার এক অভিনেতা ও স্বঘোষিত কল্যাণগুরুকেও বালি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বালির অন্যতম পুণ্যস্থানীয় মাউন্ট বাতুর নামের পর্বতে নগ্ন হয়ে নিউজিল্যান্ডের মাওরি গোষ্ঠীর হাকানাচ নাচার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
সংবাদ সূত্রঃ এএফপি