রোহিঙ্গা সঙ্কটে মিয়ানমারে বিদেশী হস্তক্ষেপে কাজ হবে নাঃ চীন

রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংসতা ও এ নিয়ে সঙ্কটে মিয়ানমারের নিন্দা জানাবে না চীন। ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির ন্যাশনাল কংগ্রেসে সাংবাদিকদের এমনটা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন চীনের ইন্টারন্যাশনাল ডিপার্টমেন্ট বিষয়ক উপমন্ত্রী গুও ইয়েঝোউ। তিনি আরো জানিয়ে দিয়েছেন, বিদেশী হস্তক্ষেপ মিয়ানমার সঙ্কটে কোনো কাজে দেবে না। তিনি বলেছেন, মিয়ানমারে যদি কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তাতে আক্রান্ত হবে চীনও। এ খবর দিয়েছে লন্ডনের অনলাইন দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট।

এতে বলা হয়, রোহিঙ্গা সঙ্কটে নিন্দা জানানো প্রত্যাখ্যান করেছে চীন। আন্তর্জাতিক মহল রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনীর নৃশংসতায় নিন্দার ঝড় তুলে দিয়েছে। এই নৃশংসতায় প্রায় ৬ লাখ রোহিঙ্গা জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তারা বাধ্য হয়ে পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে। এক্ষেত্রে মিয়ানমারের পাশে আছে শক্তিধর প্রতিবেশী চীন। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সরকারের ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশনস’কে তারা শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য রক্ষাকবজ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

গুও ইয়েঝোউ বলেছেন, সহিংসতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের তারা নিন্দা জানান। এর মাধ্যমে তিনি পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ওপর আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মির (আরসা) হামলাকে বুঝিয়েছেন। তিনি সেনাবাহিনীর চালানো নৃশংস গণহত্যা, গণধর্ষণ, অগ্নিসংযোগের প্রসঙ্গ সামনে আনেন নি। জাতিসংঘ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের ওপর এমন নির্যাতনকে জাতি নিধন বলে আখ্যায়িত করেছে। বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন এমন অনেক রোহিঙ্গা তাদের ওপর নরপিশাচের মতো চালানো ভয়াবহ সব ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। তারা বলেছেন, এসব অপরাধ চালানো হয়েছে নিরস্ত্র সাধারণ মানুষ, নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে।

কোনো উদাহরণ না দিয়ে গুও ইয়েঝোউ বলেন, অভিজ্ঞতার আলোকে দেখতে পারেবন সাম্প্রতিক পরিণতিগুলো, যখন এক দেশ অন্য দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছে। এক্ষেত্রে ওই হস্তক্ষেপ কোনো কাজে আসে নি। রাখাইন সহ এ অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য মিয়ানমার যা করছে তাতে সমর্থন রয়েছে চীনের।

তিনি আরো বলেন, নদী ও পাহাড়ের সঙ্গে যুক্ত দুই বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী হলো চীন ও মিয়ানমার। যদি মিয়ানমারে অস্থিতিশীলতা দেখা দেয় তাতে আক্রান্ত হবে চীনও। উল্লেখ্য, দু’দেশের মধ্যে সংযোগ রয়েছে একটি তেলের পাইপলাইন। এর মাধ্যমে অবরুদ্ধ হয়ে পড়া ইউনান প্রদেশে তেল সরবরাহ দেয়া হয়। ৪৭৯ মাইল দীর্ঘ এই পাইপলাইনটির শুরু রাখাইন রাজ্যের সঙ্গে বঙ্গোপসাগর থেকে। এখানে নানা বাণিজ্যিক ও আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে চীন মিয়ানমারের সঙ্গে বন্ধন অটুট রাখার কৌশল নিয়েছে। মিয়ানমারের মাধ্যমে তারা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছে বলে বিশ্লেষকরা মত দিচ্ছেন।

তাই মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নিন্দা বা বিদেশী হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে ক্রমাগত নিজেদের অবস্থান প্রকাশ করে যাচ্ছে চীন। এমন কি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যখন মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অবরোধ দেয়া নিয়ে আলোচনা হয় গত মাসে তাতেও তারা বাগড়া দেয়। ওই আলোচনায় বৃটেন, ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্র মিয়ানমারে জাতি নিধন বন্ধের জন্য পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানালে তাদেরকে ধৈর্য্য ধরার আহ্বান জানান জাতিসংঘে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, ২২ অক্টোবর    ২০১৭

লেটেস্টবিডিনিউজ.কম/এস পি