মধ্য এশিয়ার এই অঞ্চলের পরিস্থিতি ঐতিহ্যগতভাবে শান্তিপূর্ণ। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকে দেশটির অধিকাংশ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল ১০০ শতাংশ ভোট পেয়েছে। কাজাখস্তানে কার্যত কোনো বিরোধী দল নেই।
এদিকে গত প্রায় ৫ দিন ধরে চলমান সরকারবিরোধী বিক্ষোভ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে অবশেষে বিক্ষোভকারীদের ‘দেখা মাত্র’ গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছে সরকার। শুক্রবার এক সরকারি আদেশে এ সম্পর্কে বলা হয়, গুলি চালানোর আগে তাদের সতর্ক করার কোনো প্রয়োজন নেই সেনা সদস্যদের।
কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট কাসেম জোমার্ট তোকায়েভ সরকারি ওই আদেশে আরও বলেন, ‘বিক্ষোভের নিয়ন্ত্রণ এখন বিদেশী মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের হাতে। আলমাতিতে অন্তত ২০ হাজার ডাকাত ঢুকে গত কয়েকদিন ধরে তাণ্ডব চালাচ্ছে।’
এলপিজি গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে গত রোববার (২ জানুয়ারি) থেকে বিক্ষোভ শুরু হয় কাজাখস্তানের প্রধান শহর আলমাতি সহ ছোট-বড় বিভিন্ন শহরে। তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তা ক্রমশ সহিংস রাজনৈতিক সংঘাতে রূপ নেয়।
শুক্রবার এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানিয়েছে, মধ্য এশিয়ার বৃহত্তম ও জ্বালানিসম্পদ সমৃদ্ধ এই দেশটিতে গত ৫ দিনের বিক্ষোভে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৪৪ জন। তাদের মধ্যে ২৬ জন হলেন বিক্ষোভকারী, যাদেরকের কাজাখ সরকার অভিহিত করেছে ‘সশস্ত্র সন্ত্রাসী’ হিসেবে এবং বাকি ১৮ জন নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তা।
উল্লেখ্য, গত শনিবার নতুন বছর প্রথম দিনেই কাজাখস্তানে জ্বালানির দাম এক লাফে দ্বিগুণের বেশি বাড়ানো হয়। সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ওই দিনই মানজিস্তাউ শহরে বিক্ষোভ শুরু করেন সাধারণ মানুষ। দ্রুত সেই বিক্ষোভ দেশের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। ক্রমে তা গণবিদ্রোহের চেহারা নেয়। হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ শুরু করেন।
মূলত কাজাখস্তানে অনেকেই এলপিজিতে গাড়ি চালান। সরকার এতোদিন দাম নিয়ন্ত্রণ করে রাখায় গ্যাসোলিনের চেয়ে এলপিজিতে গাড়ি চালানো সস্তা ছিল। সরকার সেই এলপিজির দাম বাড়ানোয় প্রবল বিক্ষোভ শুরু হয়। যা একপর্যায়ে সহিংস হয়ে ওঠে।
তবে সরকার ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে আগ্নেয়াস্ত্রের যুদ্ধ শুরু হয় বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি)। কাজাখ পুলিশের এক মুখপাত্র বিবিসিকে জানান, দেশটির প্রধান শহর আলমাতিতে বিক্ষুব্ধ জনতা সরকারি বিভিন্ন দফতর ও পুলিশ স্টেশন দখল করার চেষ্টা চালালে বাধ্য হয়ে গুলি ছুড়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় বিক্ষোভকারীরাও পাল্টা বন্দুক হামলা শুরু করে।
জনতার রোষ শান্ত করতে ৫ জানুয়ারি দেশটির প্রধানমন্ত্রী আসকার মমিন মন্ত্রিপরিষদসহ পদত্যাগ করেছেন। তারপর জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে দেশজুড়ে, ঘোষণা করা হয়েছে রাত্রিকালীন কারফিউ; কিন্তু তারপরও নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছিল না সরকারবিরোধী বিক্ষোভ।
দাঙ্গা পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়াবহ রূপ নিতে থাকায় কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট কাসেম জোমার্ট তোকায়েভ কালেক্টিভ সিকিউরিটি ট্রিটি অর্গানাইজেশন (সিএসটিও) চুক্তির আওতায় রাশিয়াকে সেনা সহায়তা পাঠাতে অনুরোধ করেন।
তাতে সাড়া দিয়ে দেশটিতে বৃহস্পতিবার সেনাবহরও পাঠিয়েছে রাশিয়া।
বিবিসির সংবাদ বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, জনতার বিক্ষোভের আড়ালে কাজাখস্তানে সহিংসতা চালাচ্ছে সরকার বিরোধী গোষ্ঠী