মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমিক নিয়োগে আরেকটি নতুন সংযোজন হতে যাচ্ছে। মালয়েশিয়ান সিকিউরিটি ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (পিআইকেএম) বিদেশি নিরাপত্তারক্ষী সংগ্রহের জন্য দ্বিতীয় উৎস দেশ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশকে। গতকাল ৩ ডিসেম্বর শুক্রবার এ লক্ষ্যে কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে পিআইকেএম এবং বাংলাদেশের সেনা কল্যাণ সংস্থার সাথে একটি কৌশলগত চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. গোলাম সারোয়ারের প্রত্যক্ষদর্শীতে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানটি ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন দূতাবাসের প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা কমডোর মোস্তাক আহমেদ, (জি), এনপিপি, পিএসসি। উল্লেখ্য, সেনাকল্যাণ সংস্থার একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান রিক্রুটিং এজেন্সির লাইসেন্সপ্রাপ্ত হয়েছে যা বিদেশে শ্রম নিযুক্ত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে বলে জানা গেছে।
পিআইকেএম সভাপতি রামলি ইউসুফ মালয়েশিয়ার স্থানীয় একটি সংবাদ সংস্থাকে বলেন, সেনাকল্যাণ সংস্থা বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি প্রতিষ্ঠান। মালয়েশিয়া এবং অন্যান্য দেশে ভবিষ্যত নিরাপত্তারক্ষী প্রেরণের লক্ষ্যে চিহ্নিতকরণ এবং প্রশিক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করবে। তিনি বলেন, ২০১৮ সালে প্রথম স্বাক্ষরিত চুক্তির মেয়াদ শেষে আবার নবায়ন করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্প্রতি বাংলাদেশ, ফিলিপাইন এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগের বিষয়টি বিবেচনা করছে।
রামলি বলেন, পিকেআইএম থেকে শুধুমাত্র বাংলাদেশের সুপারিশ করেছি। কারণ আমরা সেখানে ২০১৮ সালে প্রথম গিয়েছিলাম। সেই সময়ে, আমরা তাদের সাথে একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষর করেছি।
আমরা (পিআইকেএম) তাদের ট্রেনিং স্কুল দেখতে গিয়েছিলাম, আমরা দেখেছিলাম যে তারা কীভাবে তিন মাস প্রশিক্ষণ পেয়েছে, আমরা অনুভব করেছি যে তারাই সেরা বিকল্প। আমরা যে শেষ এমওইউ স্বাক্ষর করেছি তা শেষ হয়ে গেছে, তাই শুক্রবার আমরা বিদেশি কর্মী (সিকিউরিটি) আনার সাম্প্রতিক শর্তগুলো পুনর্নবীকরণ করেছি, যা সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
রামলি আরও বলেছেন, পিআইকেএম সরকারকে অনুমোদনগুলো ত্বরান্বিত করার আহ্বান জানিয়েছে। কারণ গত বছর কভিড-১৯ মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে সিকিউরিটি গার্ড নিজে দেশে ফিরে যাওয়ার কারণে এখন ঘাটতি রয়েছে। নেপালি নিরাপত্তারক্ষীদের যাদের মালয়েশিয়ায় ১০ বছর পর্যন্ত কাজ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকেই মেয়াদ শেষে বাড়িতে ফিরে গেছে এবং সমস্ত অভিবাসী শ্রমিকদের নতুন নিয়োগের ওপর স্থগিতাদেশ থাকায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে এবং আরও খারাপ হয়েছে।
রামলি বলেন, মালয়েশিয়ায় প্রায় ৪০ হাজার নেপালি গার্ড ছিল। কিন্তু এখন ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজারের মধ্যে নেমে এসেছে। সুতরাং, খালি কোটা পূরণ করার জন্য আমরা চাই সরকার বাংলাদেশি গার্ড আনার অনুমতি দিক।
এর আগে ২৫ নভেম্বর দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হামজাহ জয়নুদিন নিরাপত্তা পরিষেবা শিল্প ও বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে বৈঠকের পর বলেছেন, নিরাপত্তা খাতে নতুন সোর্স কান্ট্রি বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে মন্ত্রণালয় অবশ্যই বিষয়টি অধ্যয়ন করবে এবং ভবিষ্যতে কোনো সমস্যা যাতে না হয় তা নিশ্চিত করতে স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আরও আলোচনা করবে। এ ছাড়াও দেশটিতে যাদের আনা হবে সেসব নিরাপত্তা রক্ষীদের মৌলিক প্রশিক্ষণ গ্রহণে মন্ত্রণালয় একটি সুরক্ষা পরিষেবা শিল্প প্রশিক্ষণ একাডেমি প্রতিষ্ঠা করবে।
একাডেমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে অন্যান্য সংস্থা যেমন রয়্যাল মালয়েশিয়া পুলিশ, পিপলস ভলান্টিয়ার কর্পস (রেলা) এবং ইমিগ্রেশন বিভাগের সাথে সহযোগিতা করবে।
দেশটিতে নিরাপত্তা কর্মীদের আগ্নেয়াস্ত্রের অপব্যবহার এবং অবৈধ অভিবাসী নিয়োগের কারণে ২০১৪ সাল থেকে চলতি বছরে মোট ৬৬টি নিরাপত্তা এজেন্সির লাইসেন্স সাময়িক বাতিল করা হয়েছে। বাতিল এ এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বরের আগে তাদের লাইসেন্স নবায়ন করার আহ্বান জানান তিনি।
দেশটিতে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা মনে করেন দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরে চলা এককভাবে নেপালিদের সিকিউরিটি গার্ডের চাকরির অবসান ঘটিয়ে বাংলাদেশিদের কাজের সুযোগ সৃষ্টি হলে নতুন দিগন্তের সূচনা হবে বলে।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিরা বিভিন্ন ধরনের কাজের সাথে জড়িত থাকলেও একমাত্র নেপালের সিকিউরিটি গার্ডের চাকরির সুযোগ ছিল। কিন্তু দেশটির সরকার নিরাপত্তা সেবা খাতে শূন্যপদ পূরণের জন্য বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনকে নতুন সোর্স কান্ট্রি দেশ হিসেবে দেখার পরিকল্পনা করছে।
বাংলাদেশের অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে বলছেন, সেনা কল্যাণ সংস্থা বাংলাদেশের অন্যতম প্রফেশনাল, দক্ষ ও বিশ্বস্ত একটি প্রতিষ্ঠান। তারা যে উদ্যোগ নিয়েছে তাতে অভিবাসনের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা সংযোজন করবে। পাশাপাশি সিকিউরিটি ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে গড়ে তুলে শুধু মালয়েশিয়া নয়, অন্যান্য দেশেও উত্তমরূপে প্রশিক্ষিত সিকিউরিটি গার্ড সরবরাহ করতে পারলে বাংলাদেশের নাগরিকদের যেমন কর্মসংস্থান হবে তেমনি অর্থনীতির জন্য আরেকটি খাত সংযোজন হবে।